‘গরিবদের খুব কম দামে কয়েক বস্তা চাল ও ডাল বিক্রি করা হবে। যা ফের বাজারে বেচলে মোটা লাভ।’ খোদ থানার মেজবাবুর থেকে এ কথা শুনলে বিশ্বাস না করে কি থাকা যায়! কিন্তু বড়বাবু-মেজবাবু কেউই নয়, পুলিশ পরিচয় দিয়ে আসলে এ কথা জানিয়েছিল এক প্রতারক। আর সেই ফাঁদে পা দিয়ে কয়েক হাজার টাকা খোয়ালেন এক রিকশাচালক। এমনকী, টাকা নেওয়ার সময় ওই প্রতারক বেরিয়ে এল থানার গেট থেকেই।
সোমবার দুপুরে বরাহনগর থানার সামনে এই ঘটনা। প্রতারিত রিকশাচালকের নাম শম্ভু দাস বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁর থেকে বারো হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বছরখানেক আগে বালি থানার সামনেও চাল দেওয়ার নামে একই ভাবে দুই ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করে পুলিশের পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি। দু’টি ঘটনা থেকেই এটা স্পষ্ট, প্রতারক থানায় স্বচ্ছন্দে ঢোকার ক্ষমতা এবং সাহস রাখে।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ বলেন, “বালির ঘটনার সঙ্গে বরাহনগরের ঘটনার মিল রয়েছে। থানার সিসিটিভি থেকে এক জনকে চিহ্নিত করে তদন্ত চলছে।” পুলিশ জানিয়েছে, খড়দহ পাতুলিয়ার বাসিন্দা শম্ভুু প্রতিদিনই বরাহনগর থানার বাইরে রিকশা নিয়ে দাঁড়ান। এ দিন সাড়ে ১১টা নাগাদ থানার ভিতর থেকে এক ‘হোমড়া-চোমড়া’ ব্যক্তি কানে মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে সিঁথির মোড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যেতে চেয়ে শম্ভুর রিকশায় ওঠেন। ওই রিকশাচালক পুলিশকে জানিয়েছেন, ফোনে ওই ব্যক্তি বলতে থাকেন, ‘আমি বেরোলাম। আমার কাগজপত্র আপনার টেবিলে আছে। বড়বাবুকে দিয়ে দেবেন। দু’জন লোক-সহ মালভর্তি যে গাড়িটা ধরেছি, ওটা আজই কোর্টে চালান করতে হবে। তবে ১২ আনা মাল কোর্টে যাবে, চার আনা গরিবদের দিয়ে দেব। বড়বাবুকে বলা আছে।’
শম্ভু জানান, ব্যাঙ্কে পৌঁছে ওই আরোহী নিজেকে বরাহনগর থানার মেজবাবু ‘রায়বাবু’ বলে পরিচয় দেন। শম্ভুর কথায়, “তিনি বললেন, যে মাল ধরেছি, তার মধ্যে ২৫ বস্তা চাল আর দু’বস্তা ডাল পড়ে রয়েছে। চার টাকা কেজি দরে চাল আর সাত টাকা কেজি দরে ডাল তোমাকে দিতে পারি। মোট ১২ হাজার টাকা লাগবে। গরিব মানুষ এগুলি কিনে বাজারে বেশি দামে বেচতে পারবে।” ওই রিকশাচালক জানান, তাঁকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বলে ব্যাঙ্কে ঢুকে যান ওই ব্যক্তি। শম্ভুর ফোন নম্বরও নিয়ে যান তিনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরে বেশ কয়েক বার শম্ভুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে ওই প্রতারক। অভিযোগ, দুপুর ১টা নাগাদ ওই রিকশাচালক, তাঁর দিদি এবং ছেলে এসে উপস্থিত হন থানার সামনে। তাঁদের দেখে থানার বাইরে বেরিয়ে আসেন ওই ব্যক্তি। ১২ হাজার টাকা নিয়ে একটি রসিদ ধরিয়ে দেন শম্ভু ও তাঁর ছেলের হাতে। শম্ভু বলেন, “থানার মূল গেটের সামনে দাঁড়ানো এক রিকশাচালককে দিয়ে আমাকে ও ছেলেকে সিঁথির মোড়ে চশমাগলির ভিতরে থানার গোডাউনে পাঠিয়ে দেন চাল-ডাল আনার জন্য। দিদিকে ওখানেই থাকতে বলেন।”
চশমাগলিতে গিয়ে শম্ভু দেখেন, সেখানে কিছুই নেই। তাই ফিরে আসেন থানায়। সেখানেও নেই সেই ‘অফিসার’। পুলিশকর্মীরা জানান, রায়বাবু নামে কোনও মেজবাবু ও চাল-ডাল বিক্রির কোনও ব্যাপারই নেই বরাহনগর থানায়। এর পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শম্ভু। |