বেশি দাম দিলেই শিল্পের জমি পাওয়া যাবে না রাজ্যে
মির দাম বাড়লে শিল্পের জন্য জমি পাওয়া আরও দুষ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিকস-এর অধ্যাপক মৈত্রীশ ঘটক। কাজেই, কেন্দ্রের প্রস্তাবিত জমি বিলের মাধ্যমে অধিগৃহীত জমির দাম দুই বা চার গুণ হলেও বাস্তবে জমি পাওয়া কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয়ী তিনি।
মঙ্গলবার কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় ‘ওয়ার্কশপ অন ইকনমিক গ্রোথ ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর দ্বিতীয় দিনের বিশেষ বক্তৃতায় মৈত্রীশ বললেন, “আমরা সিঙ্গুরে ক্ষেত্রসমীক্ষায় গিয়ে দেখেছি, জমির দাম কম বলেই মানুষ জমি বেচতে চাইছেন না, এমন নয়। তাঁদের কাছে জমি শুধু চাষ থেকে রোজগারের ক্ষেত্র নয়, তা এক ধরনের বিমা, আর্থিক নিরাপত্তা, ঋণের বন্ধক, অসময়ের অবলম্বন।” মৈত্রীশের বক্তব্য, যত ক্ষণ না অন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা হচ্ছে, তত ক্ষণ শুধু দাম বাড়িয়ে জমি পাওয়া মুশকিল। পশ্চিমবঙ্গের সরকার জমি কেনা-বেচা থেকে হাত ধুয়ে ফেলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত আইনেও অন্য নিরাপত্তার কোনও আশ্বাস নেই। ফলে জমির অভাব থেকে মুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করেন তিনি।
বক্তৃতা দিচ্ছেন মৈত্রীশ ঘটক। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র
মৈত্রীশ আরও জানান, তাঁদের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে কৃষকের আর্থিক অবস্থা যত খারাপ, জমি বেচতে তিনি তত অনিচ্ছুক। যে পরিবারের মূল উপার্জন কৃষি থেকে, অথবা যে পরিবারের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত, সেই পরিবার জমি বেচতে তত অনাগ্রহী। মৈত্রীশের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা বিশেষ রকম খারাপ। এ রাজ্যে ভূমি সংস্কারের ফলে বেশির ভাগ মালিকের হাতেই ছোট মাপের জমি রয়েছে। তাঁরাই জমি বেচতে সবচেয়ে কম ইচ্ছুক। দারিদ্রের ফলে এ রাজ্যে তেমন মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়নি। ফলে শিল্পও হয়নি। তাই অনেক মানুষের কাছে জমিই একমাত্র আশ্রয়। তাঁরা শিল্পের জন্য জমি দিতে নারাজ। রাজি হলেও এমন দাম চাইবেন যে, সেই দামে জমি কিনে শিল্প গড়া সম্ভব হবে না। পশ্চিমবঙ্গ এই চক্রে আটকে পড়েছে।” তবে কি জমির অভাবেই আটকে থাকবে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়ন? না কি, নিস্তার আছে? মৈত্রীশ বলেন, “জমির দাম বাড়িয়ে সমাধান খুঁজলে হবে না। অবশ্যই বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে জমি কিনতে হবে। কিন্তু আসল সমাধান অন্যত্র। মানুষের যে অনিশ্চয়তা আছে, সেগুলো দূর করতে হবে। জমিদাতাদের জন্য বিমার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা যাতে সহজে ঋণ পান, তা-ও দেখতে হবে। অধিগৃহীত জমিতে যে শিল্প তৈরি হবে, জমির ওপর নির্ভরশীল মানুষদের সেই শিল্পের অংশীদারিত্ব দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের লাভ থেকে তাঁরা বঞ্চিত না হন।” অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধন সোমবার বলেছিলেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য একটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি করা প্রয়োজন। মৈত্রীশের প্রশ্ন, “সেই সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে কে?” তাঁর মতে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো কোনও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়াটি চালাতে হবে। আর জমির দাম বাড়ালেই জমি পাওয়া যাবে নাএই কথাটি নেতাদের বুঝতে হবে, বলছেন মৈত্রীশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.