সিপিএম করেছিল শুক্রবার। তাই লাভপুরে মঙ্গলবার পাল্টা জনসভা করল তৃণমূল। সেই সভায় প্রচুর বাস গায়েব হয়ে বোলপুরে দিনভর চলল যাত্রী দুর্ভোগ।
এ দিন বোলপুর থেকে বিভিন্ন রুটের শতাধিক বেসরকারি বাস নিয়ে যাওয়া হয় জনসভার জন্য। যার জেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসস্ট্যান্ড ও অন্যান্য এলাকায় বাসের অপেক্ষায় বসে থাকতে হল যাত্রীদের। কাজের দিনে বাস না পেয়ে অনেকেই ঠিক সময়ে গন্তব্যস্থলেও পৌঁছতে পারেননি। ফলে সভার জেরে দিনভর নাকাল হতে হল সাধারণ থেকে নিত্যযাত্রীদের।
মাত্র দিন কয়েক আগেই বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর জনসভা করেন লাভপুরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সেদিনও এমন দুর্ভোগ হয়নি যতটা মঙ্গলবার হল। এ দিনের সভার জন্য বোলপুর মহকুমার প্রায় ১৭০টি বাস নিয়ে যাওয়া হয় বলে খবর। |
বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র। |
বামেদের দাবি, সূর্যবাবুর সভার পাল্টা করে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে নেমেছে শাসকদল। তাই বাসস্ট্যান্ডগুলিতে, পরিবহণ সংগঠনের কর্মী মোতায়েন করে রুটের বাস এক রকম ‘জোর’ করে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের বোলপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক উৎপল রুদ্র বলেন, “আজকের চিত্র শুধু মাত্র বোলপুরের নয়, রাজ্যের সর্বত্র শাসকদলের সমাবেশে একই চিত্র ফুটে ওঠে।” বাম আমলেও তো জনসভার জন্য বাস তুলে নেওয়া হত? তাঁর দাবি, “এই অভিযোগ ঠিক নয়।” যদিও ঘটনা হল, রাজ্যে সরকারে পরিবর্তন এলেও, জনসভায় বাস তুলে যাত্রী দুর্ভোগের চিত্রটি যে আজও বদলায়নি তার প্রমাণ মঙ্গলবার দিনভর যাত্রী দুর্ভোগ।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই কোথাও দূরপাল্লার বাসে গাদাগাদি ভিড় তো কোথাও বাসের জন্য লোকে দাঁড়িয়ে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বেলা যত বাড়ল দুর্ভোগের মাত্রা ততই বেড়েছে। আগাম সমস্যার আঁচ করে কিছু স্কুল ও পঞ্চায়েত দফতরের কর্মীরা চার চাকা গাড়ি ভাড়া করে নিয়েছিলেন। অনেকের ভাগ্য তত ভাল ছিল না। তৃণমূল সূত্রে খবর, শুধু বোলপুর থেকেই মহকুমার চারটি ব্লকের বিভিন্ন রুটের প্রায় ১৭০টি বাস ওই জনসভার জন্য নেওয়া হয়।
ভেদিয়া যাবেন বলে তিন ঘণ্টা ধরে বোলপুর বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষা করছিলেন পাঁচশোয়ার প্রান্তিক চাষি রঘু কোঁড়া। বিরক্ত হয়ে বললেন, “প্রসূতির বাড়ি যাব বলে সকাল সকাল বেরিয়েছি। বোলপুর বাস্ট্যান্ডে বাস নেই। কেমন করে যাব আর কখনই বা যাব কিছুই বুঝতে পারছি না।”
অন্য দিকে, লাভপুরের পুশুলিয়ার শেখ ফিরোজ, মহকুমা হাসপাতাল থেকে রোগী দেখিয়ে জয়দেবে বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষারত অজগর মণ্ডল প্রত্যেকেরই বক্তব্য, “যে ক’টা বাস ছেড়েছে তাও ভিড়ে ঠাসা। আজকের জন্য বেশি ভাড়াও দাবি করছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে নাকাল হতে হচ্ছে।”
যদিও যাত্রীদের বক্তব্যে একমত হতে পারেননি তৃণমূলের রাইপুর-সুপুর অঞ্চলের বীরভূম বাস পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক জানেরুল মল্লিক। এ দিন দলের জনসভায় বাস পাঠানোর দায়িত্ব ছিল তাঁরই। দুর্ভোগের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে তাঁর দাবি, “যাত্রীদের কোনও অসুবিধা হয়নি। যে বাসগুলি ছিল তা দু’ তিন ট্রিপ করেছে। জনসভার জন্য আমরা জোর করে কোনও বাসই নিইনি।” দলের জেলা সহ-সভাপতি তথা আইনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “নিন্দুকেরা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।” এ দিকে, লাভপুরের জনসভায় সিপিএমকে একহাত নিয়ে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় দাবি করেন, “৩৪ বছরে সিপিএম কিছুই করেনি। আর এখন আমাদের উনিশ মাসের সরকারের পেছনে লাগা হচ্ছে। নানা ভাবে বিব্রত করার চেষ্টা করছে সিপিএম।” আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে মাথায় রেখে কর্মীদের উদ্দেশে আরও বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম কংগ্রেস যাতে একটাও আসন না পায়, তার জন্য কর্মীদের এখন থেকেই ঝাপিয়ে পড়তে হবে।” |