নববর্ষের পার্টি থেকে বেরিয়ে বন্ধুকে মোবাইলে বার্তা পাঠিয়েছিলেন শৌভিক। ‘আমি বাইরে অপেক্ষা করছি’। তখনও ঘড়িতে বারোটা বাজেনি। কিন্তু এলিজাবেথ-এর মোবাইল ‘সুইচড্ অফ’ ছিল।
ম্যাঞ্চেস্টারের রাস্তায় তখন জমাট বাঁধা ঠান্ডা। শহরের অন্যতম প্রধান নাইটক্লাব ‘ওয়্যারহাউস প্রজেক্ট’-এর বাইরে দাঁড়িয়ে ভিতরের হই-হট্টগোল কানে আসে শৌভিকের। এলিজাবেথ-এর জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে সেখান থেকে এলোমেলো হাঁটতে শুরু করেন তিনি। তার পর থেকে আর কোনও খোঁজ নেই ১৯ বছরের এই বাঙালি ছেলেটির।
আট দিন ধরে বড় ছেলেকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন শান্তনু ও মহুয়া পাল। তাঁরা বেঙ্গালুরুতে থাকেন। ছোট ছেলেকে নিয়ে মহুয়া এখনও সেখানেই। ছেলেকে খুঁজে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে মঙ্গলবারই তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারতের বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদের কাছে। শান্তনু ছেলেকে খুঁজতে পৌঁছে গিয়েছেন ম্যাঞ্চেস্টারে।
ম্যাঞ্চেস্টার মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রোডাক্ট ডিজাইন’ নিয়ে পড়াশোনা করতে বেঙ্গালুরু থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ম্যাঞ্চেস্টার যান শৌভিক। থাকতেন কাছেই কেমব্রিজ স্ট্রিটের একটি ভাড়া বাড়িতে। হাতখরচ চালানোর জন্য পাব এবং লাইব্রেরিতে কাজ করতেন। শৌভিকের হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে মেদিনীপুরের ঘাটাল থেকে দাদু-ঠাকুমা পৌঁছে গিয়েছেন বেঙ্গালুরু। ধরা গলায় শৌভিকের মা মহুয়া ফোনে জানালেন, ৩ জানুয়ারি শৌভিকের জন্মদিন ছিল।
যে বন্ধুকে শেষ বার্তা পাঠিয়েছিলেন শৌভিক? সেই এলিজাবেথ কী বলছেন? বন্ধুকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফোনে ধরা গিয়েছিল শৌভিকের বন্ধু এলিজাবেথ বেকারকে। কেন তাঁকে এত প্রশ্ন করা হচ্ছে, তা নিয়ে কিছুটা সন্দিগ্ধ এলিজাবেথ। বললেন, “আমার যা বলার তা আগেই বলেছি। পার্টি চলাকালীন শৌভিক মহিলাদের শৌচালয়ে ঢুকে পড়েছিল। তাই ওকে পার্টি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। আমাকে টেক্সট করেছিল। কিন্তু সেটা আমি পার্টি শেষ হওয়ার পরে দেখি।” গ্রেটার ম্যাঞ্চেস্টার-এর গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন ডিটেকটিভ চিফ ইন্সপেক্টর কলিন লারকিন। তাঁকে সাহায্য করছেন ডিটেকটিভ কনস্টেবল অ্যানা রিকার্ডস। শান্তনুবাবুকে তাঁরা জানিয়েছেন, নাইটক্লাবের সিসিটিভি ক্যামেরার কিছুটা ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে। সেই ফুটেজ দেখাচ্ছে, পার্টি থেকে বেরিয়ে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবের দিকে হেঁটে চলে গিয়েছেন শৌভিক। এই নাইটক্লাব থেকে ইউনাইটেডের স্টেডিয়ামের দূরত্ব মাত্র মিনিট পাঁচেক। ব্যস, এ ছাড়া আর কোনও ক্লু তাঁদের কাছে নেই। ক্লাবের কাছে ব্রিজওয়াটার খালে গত ৪ জানুয়ারি ডুবুরি নামিয়ে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। শৌভিকের ঘর থেকে ল্যাপটপ নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের দাবি, সেখানেও কোনও তথ্য মেলেনি। |