শিশুরা সাগরিকার সঙ্গে, ফেরাতে বলল আদালত
টানাহ্যাঁচড়া চলছে নরওয়ে প্রত্যাগত দুই শিশু অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যাকে নিয়ে। মঙ্গলবার দুপুরে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) নির্দেশনামা হাতে পুলিশ নিয়ে গিয়ে কুলটির শ্বশুরবাড়ি থেকে দুই শিশুকে তুলে আনেন তাদের মা সাগরিকা ভট্টাচার্য। কিন্তু তার পরেই হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, শিশুরা কার হেফাজতে থাকবে তা নিয়ে মামলার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত তাদের কুলটির বাড়িতেই রাখতে হবে। আজ, বুধবার সকাল ১০টায় কুলটির আইসি-কে হাইকোর্টে হাজির হয়ে জানাতে হবে, এই নির্দেশ পালিত হয়েছে।
প্রবাসী বাবা-মা যথেষ্ট যত্ন করেন না অভিযোগে ২০১১-র মে মাসে শিশু দু’টিকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল নরওয়ে সরকার। অনেক টানাপোড়েনের পরে অবশেষে কাকা, দন্ত চিকিৎসক অরুণাভাস ভট্টাচার্যের হেফাজতে তাদের ছাড়া হয়। তাদের বাবা অনুরূপ এখনও নরওয়েতে। একা সাগরিকা ফিরে এসেছেন। দেশে ফেরা ইস্তক তারা বর্ধমানের কুলটিতে কাকা, ঠাকুর্দা-ঠাকুমার কাছেই রয়েছে।
ইতিমধ্যে শিশু ফেরত চেয়ে সাগরিকা হাইকোর্ট এবং সিডব্লিউসি-র দ্বারস্থ হয়েছেন। সিডব্লিউসি-র বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য শিখা আদিত্যের বক্তব্য, “শিশু দু’টিকে ফেরানোর সময়ে কোথাও বলা হয়নি, ভারতীয় আইন প্রযোজ্য হবে না। আমাদের আইনমাফিক, সাত বছরের কমবয়সী শিশুরা মায়ের সঙ্গেই থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডিশনাল সলিসিটার জেনারেল ইন্দিরা জয়সিংহ আমাদের এই আইনের কথা জানিয়েছেন। নভেম্বরে সাগরিকা যখন কুলটি যান, তখন পুলিশ এই আইন জানত না বলেই সাহায্য করেনি।”
কুলটি থেকে ফেরার পথে সাগরিকা। বর্ধমানে উদিত সিংহের ছবি।
শিশু দু’টির ঠাকুর্দা অজয় ভট্টাচার্যের অভিযোগ, দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ পুলিশ ও কয়েক জন লোক এসে দরজা ভেঙে ফেলার উপক্রম করে। সাগরিকা ও তাঁর বাবা মনতোষ চক্রবর্তী তাদের সঙ্গে ছিলেন। হতচকিত হয়ে তাঁরা দরজা খুলে দিলে তারা ছোঁ মেরে বাচ্চা দু’টিকে নিয়ে গাড়িতে চেপে চলে যায়। অজয়বাবুর কথায়, “ওদের কাছে হাইকোর্টের নির্দেশ আছে বলেছিল। কিন্তু কোনও কাগজ দেখায়নি।” নাতি-নাতনি চলে যাওয়ায় বারবারই কেঁদে ফেলছিলেন অজয়বাবু এবং তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণাদেবী। তাঁদের আক্ষেপ, সাগরিকার রুজু করা মামলার শুনানি থাকায় অরুণাভাস এ দিন কলকাতায় গিয়েছিলেন। সেই সুযোগেই বাচ্চা দু’টিকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে। বাচ্চা নিয়ে যাওয়ার এক্তিয়ার পুলিশের আছে কি না, ভিড় করে আসা পাড়াপড়শিরা অনেকে সেই প্রশ্নও তোলেন।
আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “সিডব্লিউসি-র লিখিত নির্দেশ সঙ্গে এনে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শিশু দু’টিকে নিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতেই পুলিশ সঙ্গে গিয়েছিল।” শিখাদেবী বলেন, “সিডব্লিউসি-র কোনও সদস্য কুলটি যাননি। শুধু সাগরিকাই যান। শিশুরা বছরখানেক মাকে দেখেনি। তারা কিছুটা কান্নাকাটি করেছে। তাই আমরা আর ওদের এখানে আটকাইনি।” কলকাতার দিকে যাওয়ার পথে দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ বর্ধমানে গাড়ির কাচ নামিয়ে সাগরিকা শুধু বলেন, “ছেলেমেয়েকে ফিরে পেয়ে আমি খুশি।”
দুপুরেই অবশ্য ফের ঘটনার মোড় ঘোরে। এ দিন সাগরিকার আইনজীবী অসুস্থ থাকায় শুনানি মুলতুবি হয়ে গিয়েছিল। অরুণাভাসদের কৌঁসুলি সপ্তাংশু বসু হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে শিশু নিয়ে যাওয়ায় বিষয়টি জানান। রাজ্যের জি পি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে বিচারপতি নির্দেশ দেন, শিশুদের অবিলম্বে কাকার হেফাজতে পৌঁছে দিতে হবে কুলটি থানার আইসি-কে। রাতে কুলটির আইসি অসিত পাণ্ডে বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি।” পরে চেষ্টা করেও আর সাগরিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রশ্ন হল, আদালতের মামলা চলা সত্ত্বেও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি শিশু উদ্ধারের নির্দেশ দিল কী করে? শিখাদেবীর বক্তব্য, “বিপন্ন শিশুরা কোথায় থাকবে তা ঠিক করার অধিকার সরকার আমাদের দিয়েছে।”
শিশু-আইন বিশেষজ্ঞ কুণাল দে কিন্তু বলছেন, “সিডব্লিউসি-র যে আইনি ক্ষমতা আছে, তা ম্যাজিস্ট্রেট স্তরের। জেলা জজ বা হাইকোর্টের চেয়ে তা কম। হাইকোর্টে ঝুলে থাকা বিষয়ে তাদের নির্দেশ জারি করার কথা নয়।”
রাজ্যের শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “সিডব্লিউসি যদি মনে করে, কোনও শিশু নিরাপদ নয়, তারা উদ্ধার করতে পারে। তবে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার প্রশ্ন আসছে না। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.