|
|
|
|
তা রা বা জি |
নায়িকা নয় অভিনেত্রী হতে চাই |
শিলিগুড়ি থেকে টলিউড। প্যারাগ্লাইডিং থেকে শ্যুটিং।
কেরিয়ার-প্রেম-জীবন নিয়ে অকপট মিমি চক্রবর্তী। শুনলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
জরুরি প্রশ্নটা প্রথমেই করি, আপনার রিলেশনশিপ স্টেটাস কী? সিঙ্গল, বাট নট রেডি টু মিঙ্গল।
সে কী! সবাই তো বলছে পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে আপনি অলরেডি মিঙ্গলড? (হেসে) দেখুন রাজ চক্রবর্তী বড় পরিচালক। ওঁর নায়িকাদের সঙ্গে ওঁকে জড়িয়ে গসিপ হয়। আগেও হয়েছে। এ বার আমার পালা। আমি ও সব কথায় কোনও মাইন্ড করি না।
ঠিক আছে, মাইন্ড না হয় না-ই করলেন। কিন্তু এই যে জীবনের প্রথম দু’টো সিনেমা, ‘বাপি বাড়ি যা’ আর ‘বোঝে না সে বোঝে না’তে আপনার অভিনয়ের প্রশংসা করছে। এত প্রশংসায় পা মাটিতে থাকছে? দেখুন, আমার অভিনয়ের প্রশংসা হচ্ছে, এটা তো ভাল লাগবেই। আসলে বরাবরই আমি নায়িকা হওয়ার থেকে ভাল অভিনেত্রী হতে চেয়েছি। সেই অভিনয়ের প্রশংসা যখন হচ্ছে, সেটা তো ভালই। তবে একটা সিক্রেট বলি। এখনও পর্যন্ত আমার অভিনয়ের পুরো ক্রেডিট কিন্তু পরিচালকদের। ওঁরাই করিয়ে নিয়েছেন। আমার মনে হয় আমি কোনও অভিনেত্রীই নই। তাই আকাশে ওড়ার কোনও চান্সই নেই।
এ বছরের রেজলিউশন তবে কি অন্য নায়িকাদের ‘বাপি বাড়ি যা’ করে দেওয়া? ওরে বাবা! একেবারে না। সবে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি আমি। এখনই এ সব ভাবার কোনও মানে হয়? অবশ্যই চাইব বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ছবিটাও জ্বলজ্বল করুক। কিন্তু কোনও ভাবেই সেটা অন্য নায়িকাদের দমিয়ে নয়। হিরো বলুন কী হিরোইন, আসলে সবাই তো খুব কাছের। তাঁদেরকে হটিয়ে নিজের জায়গা করে নেওয়ার মতো মানসিকতা অন্তত আমার নেই।
তার মানে সহ-অভিনেত্রীদের সঙ্গে খুব ভাল র্যাপো আপনার? আমি মনে করি, আপনি যদি কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করেন, উল্টো দিকের লোকটাও আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না। আর আপনি যদি খারাপ ব্যবহার করেন, অন্য লোকটাও খারাপ ব্যবহার করবে। আমি যেহেতু কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি না, তাই অন্যরাও খারাপ ব্যবহার করবে না সেটাই তো স্বাভাবিক। ‘বাপি বাড়ি যা’র সময় যেমন সবাই সমবয়সি ছিলাম, তাই খুব ভাল জেল করে গিয়েছিল সবার সঙ্গে। একই সঙ্গে আড্ডা, ফুচকা খাওয়া চলত। ‘বোঝে না সে...’তে সিনিয়র হয়েও পায়েলদি এত হেল্প করেছে যে বলে শেষ করতে পারব না। বুঝতেই দেয়নি আমি নিউকামার।
আর হিরোরা? আবিরদাকে আমি আগে থেকেই চিনতাম। ও আমাকে সব সময় সাহায্য করেছে। লিটারেলি আমাকে হাতে ধরে অনেক কিছু শিখিয়েছে। সোহমের সঙ্গে আলাপ হয় ‘বোঝে না সে...’র শ্যুটিংয়ে এসে। খুব ডাউন টু আর্থ। কখনও বুঝতে দেয়নি ও সিনিয়র।
আপনার প্রথম হিরো অর্জুনের সঙ্গে টাচে আছেন?
না, সেভাবে নেই...
সে কী? কেন? একটা সময় তো আপনাদের দু’জনের কলার টিউন পর্যন্ত এক ছিল...
আমরা এখনও ভাল বন্ধু। এখনও দেখা হলে জমিয়ে আড্ডা মারি। কিন্তু ‘গানের ওপারে’ বা ‘বাপি বাড়ি যা’র সময় যে ক্লোজনেসটা ছিল অবভিয়াসলি সেটা আর নেই। থাকাটা সম্ভবও না। এখন তো আর রোজ দেখা হয় না, আগে যেমন হত।
টলিউডে কাকে নিজের গডফাদার মনে করেন? প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় না রাজ চক্রবর্তী?
এটা খুব শক্ত প্রশ্ন। আমার প্রথম বড় সুযোগ ‘গানের ওপারে’ বা সিনেমার দিক থেকে ‘বাপি বাড়ি যা’। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আমার ওপরে ভরসা রেখেছিলেন। ওটা ভীষণ কনফিডেন্স দিয়েছে। ওটা স্টেপিং স্টোন। তা না হলে তো রাজ চক্রবর্তীও ডাকত না বা ভেঙ্কটেশের ব্যানারে কাজও করা হত না। হ্যাঁ, রাজ চক্রবর্তীর ছবিটা অনেক বড় মাপের। কিন্তু দু’টো ঘটনার পুশটা পুরোপুরি আলাদা। তাই কে গডফাদার, সেটা বলতে পারব না।
জলপাইগুড়ির মেয়ে কি তবে নিজের রাস্তা নিজেই তৈরি করে নিল?
আমার কিন্তু মনে হয়, আই অ্যাম র্যাদার লাকি। যতই লাককে গুরুত্ব না দিতে চান, ওটা একটা বড় ফ্যাক্টর। আমার ছোট থেকে অভিনেত্রী হওয়ার প্ল্যান থাকলেও সব কিছু যে এ ভাবে হবে সেটা তো প্ল্যানড্ ছিল না। বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, আমি কোনও দিন কোনও অডিশনে যাইনি। অডিশনের লম্বা লাইনে দাঁড়াব। ভাবতেও পারি না। তাই কোনও দিন পোর্টফোলিও বানাইনি। এখনও কিন্তু আমার কোনও পোর্টফোলিও নেই। আশুতোষ কলেজে ইংরেজি অনার্স পড়তে পড়তে ফেমিনা মিস ইন্ডিয়াতে যাই। তার পর আসে ‘চ্যাম্পিয়ন’ বলে একটা সিরিয়ালে সুযোগ। পকেট মানির টানাটানি কমবে মনে করেই যোগ দিই। ‘গানের ওপারে’র লুক টেস্টের জন্য ইন্ডিয়ান ড্রেস লাগত। ভাগ্যিস সঙ্গে এক বন্ধু ছিল। ওর ড্রেস ধার করেই টেস্ট দিই। এত সবের পরেও বলব আমি লাকি না!
অনেকেই কিন্তু আপনাকে টলিউডের জেনিফার অ্যানিস্টন বলছে?
বুঝেছি। টিভি থেকে এসেছি বলে তো। (হেসে) আমি নিজে জেনিফার অ্যানিস্টনের বড় ফ্যান। যারা বলছেন তাঁদের থ্যাঙ্কস্। তবে আমার মনে হয় না এখনই এত বড় কমপ্লিমেন্ট পাওয়ার মতো কোনও কাজ আমি করে ফেলেছি। লোকে যদি বলে, তা হলে তো ভালই।
মানলাম। কিন্তু কেরিয়ারের শুরুতে ঋতুপর্ণ ঘোষ, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মতো টলিউড লেজেন্ডদের সঙ্গে কাজ করা। সেটা নিশ্চয়ই খুব বড় পাওনা?
লিটারেলি অনেক কিছু। ‘গানের ওপারে’তে পুপের চরিত্রে যেটুকু রাবীন্দ্রিক ব্যাপার, তার পুরো ক্রেডিট তো ঋতুপর্ণ ঘোষের। আমার তো বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না ও রকম একটা চরিত্র সম্বন্ধে। উনি হাতে ধরে শিখিয়েছেন সব। আর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের থেকে শিখেছি কী করে সব সময় মোটিভেটেড থাকতে হয়। ওটাও খুব বড় শিক্ষা। জীবনের হাই-লো দু’টো পয়েন্টকেই সমান ভাবে নেওয়া। আর কনস্ট্যান্ট মোটিভেটেড থাকা। তবে একটা কথা বলব, লেজেন্ডরা ছাড়াও আরও অনেকে কিন্তু আছেন যারা আমাকে শ্যুটিংয়ের ডে টু ডে অ্যাফেয়ারের অনেক কিছু শিখিয়েছেন। মিঠু আন্টির (মিঠু চক্রবর্তী) কথা বলব বিশেষ করে। ‘চ্যাম্পিয়ন’ সিরিয়ালে জুনিয়রদের কোনও এসি মেক আপ রুম ছিল না। ওঁর দৌলতেই আমাদেরও জায়গা হয় এসি মেক আপ রুমে।
এখন কী করছেন?
এই মুহূর্তে পুরো বেকার! খেয়েদেয়ে, ড্রাইভিং শিখে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আর আছে চিকু, আমার কুকুর। ওর যত্নআত্তি করতে করতেই সময় কেটে যাচ্ছে।
আচ্ছা শুনেছি আপনি নাকি একেবারে টমবয়, অনেকটা ‘বোঝে না সে বোঝে না’য়ের রিয়ার মতো?
তা আর বলতে। টলিউডে আসার আগে পর্যন্ত আমার চুলটাও ছিল ছোট ছোট করে কাটা। ছোট থেকেই বাবার বদলির চাকরি। তাই জলপাইগুড়ি থেকে অরুণাচল প্রদেশ, অনেক জায়গায় থাকতে হয়েছে। রক ক্লাইম্বিং, মাউন্টেনিয়ারিং, রিভার র্যাফ্টিং সব করতে ভালবাসতাম। এখনও আমার হাঁটা-চলা দেখবেন ছেলেদের মতো। একবার বন্ধুদের সঙ্গে একটা শর্ট ট্রিপে গিয়েছিলাম তাজপুর। দেখি প্যারাগ্লাইডিং হচ্ছে। ওদিকে আমার ভার্টিগো।
হাইটে ভয়। তবু ঝাঁপিয়ে পড়ি প্যারাগ্লাইড নিয়ে।
তা এখনও আউটডোর শ্যুটিংয়েও কি সেই টমবয় মিমি বেরিয়ে পড়ে?
(হেসে) বেরিয়ে যে পড়ে না তা নয়। এই তো ‘বোঝে না সে বোঝে না’র এক আউটডোর শ্যুটিং। হচ্ছিল এমন এক জায়গায় যার এক পাশে কাদাজল জোঁকে ভরা ডোবা অন্যদিকে পুকুর। সঙ্গে যোগ হয়েছে অঝোরে বৃষ্টি। আমি তারই মধ্যে এক বাঁশের সাঁকোয় চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে কাদা। ওই ছবিরই মালদার গৌড়ে শ্যুটিংয়ের সময় আশি ফুট উচু এক দেওয়ালে চড়তে হয়েছিল। ভয় পেলেও ঠিকই চড়েছিলাম। ভাগ্যিস টমবয় ছিলাম। গুল মারব না, নামতে বেশ ভয় করছিল। মনে হয়েছিল ছবিটা হয়তো আর আমার দেখা হল না!
এখন তো আপনার লাইফ একেবারে টি২০ ক্রিকেট। ব্যাক টু ব্যাক রিলিজ। স্ট্রেসড্ আউট হয়ে পড়েন না?
একদম না। কাজ করতেই আমার ভাল লাগে। কাজ না থাকলেই বরং আমি স্ট্রেসড্ আউট হয়ে পড়ি। যতক্ষণ কাজ আছে ততক্ষণ ভাল আছি। কাজ না থাকলেই ভীষণ ল্যাদ খাই।
|
|
|
|
|
|