বাবা জ্ঞান দিয়ো না
বড় পর্দায় ব্রাত্য যে সব ছবি
কটা সময় ছিল যখন অনীক দত্তকে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ কবে রিলিজ করবে জিজ্ঞেস করা হলে উনি বলতেন, “আমি এবার একটা টি শার্ট পরে ঘুরব। যার উপরে লেখা থাকবে আমার ছবি কবে রিলিজ করবে, আমি সেটা জানি না।” প্রায় এক বছর দেরি হওয়ার পরে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ রিলিজ করে। সম্প্রতি টলিউডের অন্যতম হিট ছবি এটি। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আর নন্দিতা রায়-এর প্রথম ছবি ‘ইচ্ছে’। তিন বছর পরে ছবি মুক্তি পেয়েছিল ২০১১ সালে। সে বছরের সব চেয়ে বড় হিট ছিল ‘ইচ্ছে।’
তবে সব আটকে যাওয়া ছবির ভাগ্য সমান নয়। বলিউডে তো কিছু না মুক্তি পাওয়া ছবি ইতিমধ্যে কাল্ট স্ট্যাটাস পেয়ে গেছে। তারই মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে অনুরাগ কাশ্যপের ‘পাঁচ’। সত্তরের দশকের যোশি-অভয়ঙ্কর সিরিয়াল মার্ডার কেসের অনুপ্রেরণায় বানানো ছবি। একটি রক ব্যান্ডের গল্প। ড্রাগস, সেক্স আর ক্রাইমের পটভূমিতে। ছবিটির সম্পর্কে আজও এত কৌতূহল যে অনেকে না দেখেই সেটা নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। ইউটিউবে পাওয়া যায় ছবির পাইরেটেড ভার্সন।
গত বছর বক্স অফিসে সাফল্য পায় ‘ভিকি ডোনর’। তবু পরিচালক সুজিত সরকার আজও ভুলতে পারেননি তাঁর ‘স্যুবাইট’ মুক্তি না পাওয়ার দুঃখ। প্রডিউসরদের গণ্ডগোলের মধ্যে অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে বনানো এই ছবিটি আটকে যায়। এর মধ্যে একই ধরনের একটি ধারণা নিয়ে হলিউডে একটি ছবি বানানোর কথা হয়। ইংরেজি ছবিটিতে বচ্চনের রোলটি করার কথা ছিল ডেঞ্জেল ওয়াশিংটনের। এর পর ‘স্যুবাইট’ নিয়ে প্রযোজকরা উদাসীন হয়ে যান। সুজিত প্রথমে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন। তবে এখন উনি বলেন, “‘স্যুবাইট’ এর পরে আমার আর কোনও কিছুতেই কিছু তেমন এসে যায় না। আগে বেশ টাচি ছিলাম। আজ বুঝি যে কোনও কিছুই ফিক্সড নয় এই দুনিয়াতে।”
ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রথম ছবি, ‘হিরের আংটি’ আজও থিয়েটারে মুক্তি পায়নি। যেমন মুক্তি পায়নি তাঁর পরিচালিত ‘সানগ্লাস’। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন নাসিরুদ্দিন শাহ্, জয়া বচ্চন, কঙ্কণা সেনশর্মা, আর মাধবন এবং টোটা রায়চৌধুরী।
“‘সানগ্লাস’ মুক্তি না পাওয়াতে আমি যে একেবারে মুষড়ে ভেঙে পড়েছি তা নয়। ওই ছবিটি শু্যটিং-এর পরে আমি আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি পরিচালনা করেছি। অভিনয়ও করেছি। তবে ‘সানগ্লাস’ মুক্তি পেলে অভিনেতা টোটার একটা মূল্যায়ন হতে পারত। আর রাজা-সঞ্জয়ের সুরে গানগুলো খুব সুন্দর,” বলেন ঋতুপর্ণ।
ছবি মুক্তি না পাওয়ার গর্ভযন্ত্রণা সহ্য করা থেকেও কষ্টকর নীরবে তার পাইরেটেড সিডি বিক্রি দেখা। যেমন হয়েছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। গড়িয়াহাটের ফুটপাতে ‘আমি ইয়াসিন আর আমার মধুবালা’-র পাইরেটেড ডিভিডির রিলিজের খবর পেয়ে। আরও অনেকেই আছেন এই দলে। কী ভাবে এই যন্ত্রণার সঙ্গে লড়াই করছেন তারা?
আমি ইয়াসিন আর আমার মধুবালা স্বর্গের নীচে মানুষ

একটি নদীর গল্প
পরিচালক সমীর চন্দ মারা গেলেন ২০১১ সালে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মারা গেছেন গত বছর। ২০০৮ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে বানানো আর্ট ডিরেক্টর সমীর চন্দের ছবিটি আজও মুক্তি পায়নি। যারা একটি নদীর গল্প-এর প্রাইভেট স্ক্রিনিং দেখেছেন, তারা অনেকেই মিঠুন চক্রবর্তীর অনবদ্য অভিনয়ে অভিভুত। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে তৈরি ছবিটি। বাবা মনে করেন তাঁর মেয়ে নদীর মতোই চঞ্চল। মেয়ে মারা যাওয়ার পরে, তাঁর বাবা চেষ্টা করেন কী ভাবে নদীটার নাম পাল্টে তাঁর মেয়ের নামে নাম দেওয়া যায়।
সমীর চন্দের স্ত্রী লীলা, অবশ্য ছবিটির মুক্তি নিয়ে আশাবাদী। “ছবিটি বানানোর পরে সমীর নিজের কাজে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ও চলে যাওয়ার পরে আমি ছবিটি বিক্রি করার জন্য উঠে পড়ে লাগি। শেষ পর্যন্ত বিক্রি করি ছবিটা। কথা ছিল অগস্টে রিলিজ হওয়ার। তারপর শুনেছিলাম ডিসেম্বরে রিলিজ হবে। এখন শুনছি অন্য কথা। আশা করি ছবিটা এ বছর মুক্তি পাবে।”

স্বর্গের নীচে মানুষ
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যখন অঞ্জন দাসের শেষ বার দেখা হয়, তখন আর প্রশ্নটা ওঠেনি। তার আগের বারও জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কবে রিলিজ করছ বলতো?” অঞ্জন কোনও উত্তর দিতে পারেননি। “আমার মনে হয়, সুনীলদা আমার কষ্টটা বুঝতেন। তাই আর শেষ বার জিজ্ঞেস করেননি। আমি চেয়েছিলাম ওঁর আর একটি গল্প - ‘সরল সত্য’ - নিয়ে ছবি করতে। আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি করো। স্বত্ব নিয়ে অত ভাবতে হবে না।’ তারপর তো চলেই গেলেন,” অঞ্জন বললেন।
ছবিটি শু্যটিং হয় উত্তরবঙ্গতে। “পরমব্রতর খুব ভাল অভিনয়। ওর চরিত্রটা পাহাড়ি সাপ ধরে চালান করা। হঠাৎ দেখা হয়ে যায় এক দম্পতির সঙ্গে। এবং সে তখন মহিলাটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। পরমের অভিনয় ছাড়াও ছবিতে ঋতুপর্ণাও খুব সুন্দর কাজ করেছেন। সুনীলদার গল্পের থেকে আমি আমার ছবির শেষটা পাল্টে দিয়েছি,” অঞ্জন বললেন। পরমব্রত অবশ্য বললেন যে এই ছবিটি আটকে যাওয়ার থেকেও তাঁর বেশি দুঃখ হয়েছিল যখন ‘তিন ইয়ারি কথা’ মুক্তি পায়নি। “আমার সত্যিই খুব খারাপ লেগেছিল ‘তিন ইয়ারি কথা’ রিলিজ না-হওয়াতে। রিলিজ করার পরে যাঁরা ইউটিউবে দেখেছিলেন তাঁরাও ছবিটি আবার হলে গিয়ে দেখেন। ‘স্বর্গের নীচে মানুষ’ ছবিটি করে প্রশংসা কুড়িয়েছি। তবে আমার মনে হয় ওই ছবির থেকেও আরও ভাল কাজ আমি পরে করেছি,” পরমব্রত বললেন।
কিন্তু ছবি মুক্তি পেতে এত দেরি কেন? “সেভাবে কোনও যুক্তি পাইনি আমি। প্রযোজকের সঙ্গে অনেক বার কথা হয়েছে। প্রথমে শুনেছিলাম ২০০৯ সালে মুক্তি পাবে। সেটা হয়নি। তারপর আমি ব্যস্ত হয়ে যাই অন্য ছবির কাজে। এখন পাওলি, বিক্রম আর কৌশিক সেনকে নিয়ে নতুন ছবি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আগে নাম ছিল ‘ষড়যন্ত্রকারী’। নাম পাল্টে এখন দেওয়া হয়েছে ‘অজানা বাতাসের কল’। এ সবের মধ্যে সম্ভব হলে আবার প্রযোজককে বলব ছবিটি রিলিজ করার জন্য। আজও ছবিটি ভীষণ প্রাসঙ্গিক,” পরিচালক বললেন।

আগুন পাখি একটি নদীর গল্প

আমি ইয়াসিন আর আমার মধুবালা
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ছবিটি বানিয়েছিলেন ২০০৭-এ। তবে আজও মুক্তি পায়নি সেটা। এর মধ্যে ছবিটি বহু আন্তর্জাতিক ফেস্টিভালে দেখানো হয়েছে। টরন্টো আন্তর্জাতিক ফিল্ম উৎসবের মাস্টার্স সেকসন-এ ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের এক প্রতিবেশী মহিলার জীবনে অনধিকার প্রবেশ নিয়েই ছবিটি তৈরি। ছবির সম্পর্কে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “খুব খারাপ লাগে যখন ভাবি যে ছবিটি আজও মুক্তি পেল না। আমার কেরিয়ারের অন্যতম ভাল অভিনয় এই ছবিটিতে। বুদ্ধদারও ভীষণ ভাল কাজ। আমরা দু’জনে ছবিটির টরন্টো প্রদর্শনীতে গিয়েছিলাম।”
হতবাক বললে কম বলা হবে বলছেন বুদ্ধদেব। “ছবিটা কেউ আপলোড করে দিয়েছে। লোকে বিনা পয়সাতে সেটা ডাউনলোড করে দেখছে। গড়িয়াহাটে ৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে এর পাইরেটেড কপি। একজন সেই একটা কপি আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। কি কারণে যে প্রযোজক ছবিটা রিলিজ করছেন না, সেটা বলা কঠিন। এমন শুনেছিলাম যে ছবিটির ডিভিডির স্বত্বের জন্য দেশে ভাল দামও পাচ্ছেন প্রযোজকরা। কিন্তু তাতেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা রাজি হননি।”
তবে এ ভাবে ছবিকে আটকে রাখা সম্ভব নয়। “আমার নিজের কাছে ডিভিডি আছে। নন প্রফিট সংস্থারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেক বার এই ছবির প্রদর্শন করেছেন,” পরিচালক বললেন।

আগুনপাখি
শুভ্রজিৎ মিত্র ছবিটি বানান ২০১০ সালে। নকশাল আন্দোলনের পটভূমিতে বানানো ছবি। থিয়েটারে মুক্তি পায়নি এখনও। তবে ‘ইউ-টিউব’ খুললে ছবি দেখা যেতে পারে। শুভ্রজিতের কাছে এটা ভীষণ কষ্টের। “প্রযোজকদের নিজস্ব গণ্ডগোলের জন্য আজকে কোনও ফেস্টিভালে ছবির প্রিন্ট পাঠাতে পারছি না। পাঁচটা সাব-টাইটেল করা প্রিন্ট পরে আছে ল্যাবে। তবে কেউ টাকা দেওয়ার নেই প্রিন্টগুলোর জন্য,” বললেন শুভ্রজিৎ।
পাঁচ জন ‘সুইসাইড স্কোয়াড’-এর লোক কে নিয়ে ‘আগুন পাখি’ বানানো। “ছবিটি আজও ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ,” বলছেন ছবির অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। “শুধু এই ছবিটি নয়, ‘পিয়ালির পাসওয়ার্ড’ বলে আরও একটা ছবি মুক্তি পায়নি। সেটি প্রথম আমেরিকাতে শু্যটিং করা বাংলা ছবি। পরিচালক মারা গেছেন। তবে ছবিটি মুক্তি পায়নি। তারপর অঞ্জন দত্তের ‘বিবিডি’। ‘কহানি’ কলকাতাতে শু্যটিং হওয়ার অনেক আগে এই হিন্দি ছবিটার শু্যটিং হয়েছিল আমাদের শহরে। কে কে আর আমাকে নিয়ে ছবি। ঠিক সময়ে রিলিজ করলে ওই হিন্দি ছবিতেই কলকাতাকে অন্য ভাবে বাইরের লোকেরা দেখতে পেত। এ ছাড়াও আছে বিনয় পাঠকের সঙ্গে ‘এসআরকে’। আছে সিঙ্গাপুরে শু্যটিং করা ছবি ‘বৌমা জিন্দাবাদ’,” বলেন ঋতুপর্ণা।
লিস্ট বাড়তেই থাকে। এমনকী প্রসেনজিতের সঙ্গে তার করা ‘লাটসাহেব’ ছবিটাও অনেক দিন হল ‘ক্যান’ বন্দি।
বড় পর্দায় দেখার অপেক্ষা আর কত দিনের?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.