ক্লাব-উৎসবে ঢালাও খরচ
ভাঁড় ঠনঠন, তবু খয়রাতি ৬০ কোটি
রাজকোষে টাকা নেই বলে সমানে দাবি করছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলছেন, তাঁর সরকারকে নিলামে তুললে কেনার লোক মিলবে না। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে কেন্দ্র যাতে বিশেষ আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়, সেই দাবি তুলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি তো চলছেই। অথচ এরই মধ্যে উৎসব আর বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় গলে যাচ্ছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। এবং এই টাকা নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন দফতরের জন্য বরাদ্দ উন্নয়ন খাত থেকে।
পানীয় জল-রাস্তা-নিকাশি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা-কৃষির মতো জরুরি ক্ষেত্রে উন্নয়ন খাতে বাজেটের ২৫% অর্থও খরচ করতে পারেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার! কিন্তু ক্লাব ধরে ধরে বাঁধনহীন খয়রাতি চলছেই।
ক্ষমতায় এসে প্রথম বছরেই উৎসব-প্রতিযোগিতায় মনোনিবেশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাড়ার ক্লাবগুলিকে হাতে রাখার জন্য গত বার খরচ করেছিলেন প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। এ বার সেই অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি, প্রায় ৪০ কোটি টাকা। গত বছর ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার সময় নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। তার কোনও সমাধান বা পরিবর্তন না করেই এ বারও টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে মহাকরণের খবর। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, কোনও ক্লাবকে অনুদান দেওয়ার আগে রেজিস্ট্রেশনের শংসাপত্র, তিন বছরের অডিট রিপোর্ট, ক্লাবের সাধারণ সভার বিবরণী, নিজস্ব জমি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রমাণপত্র-সহ বেশ কিছু নথি দেখে নেওয়ার কথা। অভিযোগ, গত বছর এ সবের তোয়াক্কা না করেই শুধু বিধায়কদের সুপারিশের ভিত্তিতে রাজ্যের ৭৮১টি ক্লাবকে ২ লক্ষ টাকা করে অনুদান দিয়েছিল সরকার।
এ বারে সেই ক্লাবগুলি আছেই। তবে তাদের জন্য অনুদানের অর্থ কমে হয়েছে ১ লক্ষ টাকা। ক্রীড়া দফতরের খবর, চলতি আর্থিক বছরে নতুন করে আরও ১৬০০ ক্লাবকে চিহ্নিত করে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, নিয়মের তোয়াক্কা এ বারেও হবে কি না, তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। কারণ, মহাকরণের এক কর্তারই বক্তব্য, “এ বারও ক্লাবের তালিকা চূড়ান্ত করতে বিধায়কের সুপারিশকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।” ক্রীড়া দফতরের খবর, এর মধ্যেই দু’হাজারের বেশি ক্লাব আবেদনও করেছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, গত বছর অনুদান পাওয়া ক্লাবগুলি খরচের শংসাপত্র দিলেই তারা নতুন করে টাকা পাবে। ক্রীড়া দফতরের খবর, এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৫% ক্লাব গত বছরের খরচের শংসাপত্র জমা দিতে পেরেছে।
চলতি মাসেই বিবেকানন্দের জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক বিবেক উৎসবও। এই উৎসবের জন্য একা যুবকল্যাণ দফতরই খরচ করছে ১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র, তথ্য-সংস্কৃতি ও পরিবহণ দফতর মিলিত ভাবে খরচ করছে আরও তিন কোটি টাকা। সব মিলিয়ে খরচ ন্যূনতম ১৫ কোটি টাকা। বিবেক উৎসবকে সফল করতে ইতিমধ্যেই জেলা এবং ব্লকগুলিকে যথাক্রমে ১.৫ লক্ষ এবং ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ১২ জানুয়ারি উৎসব শেষ হবে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। তার নাম দেওয়া হয়েছে বিশ্ব যুব উৎসব। মোট খরচের এক-তৃতীয়াংশ (পাঁচ কোটি) টাকা ধরা হয়েছে শুধু ওই এক দিনের জন্য। এ ছাড়াও ওই দিন জঙ্গলমহল থেকে প্রায় ২৭ হাজার যুবক-যুবতীকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। এ জন্য আলাদা করে খরচ হবে প্রায় সওয়া কোটি টাকা।
ক্লাবের উন্নয়ন, উৎসবের পাশাপাশি হয়েছে জঙ্গলমহল এবং সুন্দরবন প্রতিযোগিতাও। তাতে ছিল ফুটবল আর তিরন্দাজি। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, ফুটবলের জন্য জঙ্গলমহল ও সুন্দরবন মিলিয়ে ১৮৪৫টি দলকে টাকা দিতে স্বরাষ্ট্র দফতরের খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা।
মহাকরণ সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে ক্রীড়া দফতরের বরাদ্দ প্রায় ৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩০ কোটি টাকাই যুবভারতী-সহ বিভিন্ন স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু বাকি ৩০ কোটিতে তো ক্লাবগুলির খয়রাতি হবে না। বাড়তি ১০ কোটি টাকা কোথা থেকে আসবে, তার কোনও সদুত্তর নেই অর্থ দফতরের কর্তাদের কাছে। তবে অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে। তাই দরকার হলে ক্রীড়া দফতরের বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়া হবে।”

খেলার ছলে
• ক্লাবকে অনুদান ৪০ কোটি
• সুন্দরবন কাপে খরচ ১.১৮ কোটি
• জঙ্গলমহল কাপে দলকে অনুদান ৪.৫ কোটি
• বিবেক উৎসব ও বিশ্ব যুব উৎসব ১৫ কোটি
* সূত্র: অর্থ দফতর



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.