সম্পাদকীয় ২...
মারীচের অভিশাপ
সোনার হরিণ ছলনামাত্র। সীতা তাহা জানিতেন না, অতএব লঙ্কাকাণ্ড। জনশ্রুতি, কলিকালে মানুষ অনেক সেয়ানা হইয়াছে। তবু এ দেশে স্বর্ণমৃগের মায়া অপার। দরিদ্র দেশ, বিশ্ব মানচিত্রে এখনও উচ্চ আয় দূরস্থান, মধ্য আয়ের সারিতেও পৌঁছাইতে পারে নাই, কিন্তু প্রায় আঠারো হাজার টন মজুত সোনার পরিমাণে ভারত অন্য সব দেশের আগে। স্বাভাবিক, অন্যেরা অন্য নানা সম্পদ জমায়, ভারতীয়রা সোনা জমায়। সমস্যা দুইটি। এক, সোনা সত্যই অতি বিষম বস্তু, প্রায় কোনও কাজেই লাগে না, সুতরাং সোনা কিনিয়া রাখার অর্থ আপন সম্পদ অলস ফেলিয়া রাখা যক্ষপুরীর তাল তাল সোনার দৃশ্য স্মরণীয়! দুই, ভারতে সোনার উৎপাদন যৎসামান্য, প্রায় সবটাই অন্য দেশ হইতে আমদানি করিতে হয়। অর্থাৎ বিদেশি মুদ্রা খরচ করিয়া। মোট খরচ মাপিয়া সাজাইলে ভারতের আমদানির তালিকায় এক নম্বরে আছে পেট্রোলিয়ম, দুই নম্বরে সোনা। দুর্ভাগা দেশ দুই সম্পদেই বঞ্চিত।
অধুনা দুর্ভাগ্য অতিমাত্রায় প্রকট হইয়াছে, কারণ আমদানি এবং রফতানির তফাত, অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি অস্বাভাবিক বাড়িয়াছে, এক বছরের মধ্যে কিঞ্চিদধিক চার শতাংশ হইতে বাড়িয়া পৌঁছাইয়াছে প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশে। আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দা, ফলে রফতানি স্তিমিত, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদেশে কর্মরত ভারতীয়দের ডলার উপার্জন এবং দেশে প্রেরণের মাত্রাও তথৈবচ, কিন্তু জ্বালানির আমদানি বাড়িতেছে, সোনারও। ফলে সরকার চিন্তিত। অর্থমন্ত্রী সঙ্কেত দিয়াছেন, সোনা আমদানির উপর শুল্কের হার বাড়ানো হইতে পারে, যাহাতে আমদানি কমে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিশেষজ্ঞরা চাহেন, সোনার বিনিময়ে ঋণ পাওয়ার পথ সহজ করা হোক, তাহার পাশাপাশি এমন বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক, যাহাতে সঞ্চিত সোনা ব্যাঙ্কে বা অন্য নির্ধারিত সংস্থায় জমা রাখিয়া ভাল সুদ পাওয়া যায়।
শুল্ক বাড়াইয়া বা সরাসরি পরিমাণ বাঁধিয়া দিয়া আমদানি কমাইতে গেলে কালোবাজার এবং চোরাচালানের আশঙ্কা বাড়ে, তাহা অপেক্ষা বিকল্প সম্পদ সৃষ্টি শ্রেয়। সমস্যা একটিই। সোনা কিনিতে বিনিয়োগ করিলে যে হারে আয় বাড়ে, অন্য সম্পদ হইতে তাহা মিলিবে কি? একটি হিসাব: গত এক দশকে সোনায় বিনিয়োগ হইতে আয় বাড়িয়াছে বছরে গড়পড়তা ১৬ শতাংশ হারে, সেনসেক্স উঠিয়াছে ১১ শতাংশ। বস্তুত, জমি-বাড়ি ভিন্ন অন্য সমস্ত স্বীকৃত সম্পদের তুলনায় সোনা হইতে আয়ের মাত্রা বেশি। এই কারণেই মানুষ সোনা কিনিতে আগ্রহী, আবার তাহার ফলে সোনার দামও ঊর্ধ্বগামী। দীর্ঘ মন্দার বাজারে অন্য সম্পদ হইতে আয়ের মাত্রা কমিয়াছে, বিনিয়োগের পরিণাম অনেক বেশি অনিশ্চিত হইয়াছে, ফলে সোনার হরিণ আরও উজ্জ্বল দেখাইতেছে। এই মূল্যস্ফীতির হার অনন্তকাল চলিতে পারে না, এক সময় সোনার দাম পড়িবেই, কিন্তু কখন, কেহ জানে না। সুতরাং আপাতত চাহিদা নিয়ন্ত্রণ ভিন্ন গতি নাই। ক্রেতারা লক্ষ্মণরেখা মানিবেন কি না, তাহা অবশ্য অন্য প্রশ্ন। বড় প্রশ্ন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.