আজ ১২ ঘণ্টা বনধ
পুলিশের ভূমিকায় ফুঁসছে রায়গঞ্জ
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় রায়গঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে, এই অভিযোগে বাসিন্দারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। সিপিএম, কংগ্রেস শুধু নয়, শাসক দলে তৃণমূলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের অনেকেই তাতে সামিল। পর পর খুন, দুষ্কৃতীদের লড়াই, ছিনতাই, রক্তারক্তিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা শহরেই। আজ, সোমবার সিপিএমের তরফে ১২ ঘণ্টা রায়গঞ্জ বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস আলাদা ভাবে বনধ ডাকে। পুলিশ সুপারের বদলির দাবি তুলে বিজেপি, এসইউসি পৃথক বন্ধের ডাক দিয়েছে। জনতার মনোভাব আঁচ করে সতর্ক তৃণমূলও। জেলা সভাপতি অমল আচার্য বলেছেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের ক্ষোভের বিষয়টি রাজ্য সরকারকে জানিয়েছি।” পাশাপাশি, তাঁর যুক্তি, “বন্ধ ডেকে সমস্যার সমাধান হয় না।” তবে খোদ রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী বলেছেন, “পুলিশ সুপারের নিজেরই জেলা থেকে সরে যাওয়া উচিত।”
বস্তুত, রায়গঞ্জ জেলা সদর ও লাগোয়া এলাকায় যে একশ্রেণির দুষ্কৃতীদের তান্ডবে আমজনতা যে আতঙ্কিত সে কথা প্রশাসনও মানছে। যেমন জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “শহরে একের পর এক খুন সহ নানা সমাজবিরোধী কাজ বাড়তে থাকায় সত্যিই আমরা উদ্বিগ্ন। সুপারকে শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ করেছি।” রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক নন্দিনী সরস্বতী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “একের পর এক অপরাধের ঘটনা ঘটতে থাকায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ হওয়াটা স্বাভাবিক। নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে হবে পুলিশকেই।”
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রায়গঞ্জের একটি কেবল চ্যানেলের বার্তা সম্পাদক তথা প্রেস ক্লাবের সহ সম্পাদক সঞ্জীব বর্ধনকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় দুষ্কৃতীরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, কয়েক বছর আগে ওই চ্যানেলের এক চিত্র সাংবাদিক খুন হন। সেই খুনে অভিযুক্তরা যাতে দ্রুত সাজা পান সে জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করছিলেন সঞ্জীববাবু। সেই কারণে তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে। পুলিশ তদন্তে নেমে আলোকচিত্রী খুনের মামলায় অভিযুক্ত এক আইনজীবীকে ফের গ্রেফতার করে। সন্দেহ, সঞ্জীববাবু খুনেও জড়িত রয়েছেন ওই আইনজীবী।
উত্তরবঙ্গের আইজি অনুজ শর্মা বলেন, “ডিআইজি ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। এক জন গ্রেফতার হয়েছে। প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।” উত্তর দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইভান লেপচা বলেন, “পুলিশ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে। শহরের আইনশৃঙ্খলা আপাতত স্বাভাবিক রয়েছে। আতঙ্কের কিছু নেই।” সঞ্জীববাবুকে খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ধৃত আইনজীবী চঞ্চল সরকারকে রবিবার মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে বিচারক সুমনা ঘড়াই তাঁকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযুক্ত আরও দু’জন-সহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি করছে। শহরে আরও পুলিশ মোতায়েন হয়েছে।


অপরাধ একনজরে
১০ নভেম্বর ভাটোলে গুলি করে ২ যুবক খুন। ধৃত দুই।
২০ নভেম্বর তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গুলি-বোমার লড়াই। ধৃত চার। ফেরার দুই।
২২ নভেম্বর এক যুবককে কুপিয়ে, গুলি করে খুনের চেষ্টা। ধৃত এক, ফেরার এক।
২৩ নভেম্বর রিকশাচালককে খুন। ধৃত এক, ফেরার এক।
৪ ডিসেম্বর থানার কাছেই বোমাবাজি। গ্রেফতার এক।
৫ ডিসেম্বর এক যুবককে গুলি করে খুন। ধৃত এক।
২০ ডিসেম্বর খুনের মামলায় অভিযুক্ত এক মহিলাকে লক্ষ করে আদালতে গুলি।
২২ ডিসেম্বর গুলি করে এক যুবককে খুন। পিটিয়ে হত্যা আর এক যুবককে। গ্রেফতার মহিলা সহ তিন।
২ জানুয়ারি দুই গোষ্ঠীর গুলি-বোমা। ধৃত এক।
৪ জানুয়ারি চাষিকে কুপিয়ে খুন। কেউ ধরা পড়েনি।
৪ জানুয়ারি শহরে কেবল চ্যানেলের বার্তা সম্পাদক, প্রেস ক্লাবের সম্পাদককে গুলিতে ঝাঁঝরা করল দুষ্কৃতীরা। ধৃত ১ আইনজীবী।
৫ জানুয়ারি হোটেলে মিলল মালিকের গলা কাটা দেহ।

নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ
পুলিশের ধারাবাহিক নিষ্ক্রিয়তায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। পুলিশের উপরে মানুষের আস্থা নেই। পুলিশ সুপারের নিজে থেকেই এ জেলা থেকে চলে যাওয়া উচিত।
আব্দুল করিম চৌধুরী, গ্রন্থাগারমন্ত্রী
শহরের অপরাধ ঘটছে। পুলিশকে সতর্ক হয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের ক্ষোভের বিষয়টি রাজ্যকে জানিয়েছি।
অমল আচার্য, তৃণমূল নেতা
আইনশঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। রায়গঞ্জে পুলিশ নিষ্ক্রিয়। এর প্রতিবাদে দলের তরফে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে।
দীপা দাশমুন্সি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
পুলিশের ধারাবাহিক ব্যর্থতার জেরেই শহরের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদেই বন্ধ।
মোহিত সেনগুপ্ত, কংগ্রেস নেতা



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.