অস্বস্তি তৃণমূলে
জমি উদ্ধারে সিপিএম, মরিয়া আরাবুলরাও
ঞ্চায়েত ভোট যত কাছাকাছি আসছে, উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় এলাকা। একের পর এক ঘটনায় নাম জড়িয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে চলেছেন ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম! তবে এখনও পর্যন্ত তৃণমূল নেতৃত্বের বরাভয় রয়েছে আরাবুলের সঙ্গেই! সিপিএমের বর্ষীয়ান বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার উপরে রবিবারের হামলার পরেও যার ব্যতিক্রম হয়নি।
গত কয়েক মাস ধরেই ভাঙড়ে একাধিক বার সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কেন ভাঙড়েই এত উত্তেজনা? জেলার রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, ওই এলাকায় ঘর গোছাচ্ছে সিপিএম। ঘন ঘন সভা-সমাবেশ হচ্ছে তাদের। ‘ভাঙড়ের ভূমিপুত্র’ রেজ্জাক নিজেও হাজির থাকছেন সেখানে। মাস তিনেক আগে বিজয়গঞ্জ বাজারে তাঁর উপরে হামলা করতে উদ্যতও হয়েছিলেন তৃণমূল সমর্থকেরা। ভাঙড় এলাকায় সিপিএমের সভায় ইদানীং ভিড় হচ্ছে চোখে পড়ার মতো। বাম নেতাদের মতে, রেজ্জাককে সামনে রেখে সিপিএম ওই এলাকায় পায়ের তলায় মাটি পেতে শুরু করেছে। যা স্থানীয় তৃণমূলের ‘প্রভাবশালী’ নেতা হিসাবে আরাবুলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে।
অন্য দিকে, শিক্ষিকাকে জগ ছোড়ার ঘটনায় দলের মধ্যেই আরাবুলকে নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। সম্প্রতি আরাবুলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বহিষ্কৃত এক নেতাকে তৃণমূলে ফেরানোর তোড়জোড় শুরু হয়। যার জেরে আরাবুল আরও ‘চাপে’ পড়তে পারেন বলে মনে করছেন দলেরই একাংশ। এই পরিস্থিতিতে ভাঙড়ে নিজের ‘ক্ষমতা’ ধরে রাখতে মরিয়া প্রাক্তন বিধায়ক। এক দিকে সিপিএম, অন্য দিকে দলের বিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গেও টক্কর চলছে। গত সপ্তাহেই ভাঙড়ে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে যে জলসা নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল, তা-ও দলের এক গোষ্ঠীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অন্য গোষ্ঠীর তরফে জনতার মন পাওয়ার চেষ্টারই ফল বলে শাসক দলের একটি সূত্রের বক্তব্য।
এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের দিকেই অভিযোগের তির ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় নেমেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম যেমন এ দিন বলেছেন, তৃণমূলের সভা চলাকালীন রেজ্জাক সেখানে ঢুকে পড়ে উত্তেজনা তৈরি করেছেন। মন্ত্রীর কথায়, “আমরা মিছিল করার সময় মাঝে যদি সিপিএমের সভা পড়ে যায়, তখন মিছিল ঘুরিয়ে দিই। না হলে আমাদের মাইক বন্ধ করে দিই। সেটাই তো রাজনৈতিক সৌজন্য। আমাদের সভায় উনি ঢুকতে চাইলে কর্মীরা তো বাধা দেবেই! বিষয়টা অতটা গুরুতর নয়।” তৃণমূলের সভায় বহিরাগতেরা এসে গোলমাল পাকিয়েছে বলেও প্রথমে দাবি করেন ফিরহাদ। তবে তিনি ভাঙড়ে রেজ্জাককে বহিরাগত বলছেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে ব্যাখ্যা দেন, গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ যে কোনও জায়গায় যেতেই পারেন। কিন্তু বিনা নিমন্ত্রণে কোনও বিয়ে বাড়িতে গিয়ে খেয়ে আসতে পারেন না!
তৃণমূলের পক্ষে অস্বস্তির কারণ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে রেজ্জাকের উপরে হামলার ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে সব মহলই। কংগ্রেসের নেতা মানস ভুঁইয়া বলেছেন, “রেজ্জাক এক সময়ে আমাদের নেতা-নেত্রীদের সম্পর্কেও খারাপ কথা বলেছেন। আমরা মঞ্চ বেঁধে প্রতিবাদ করি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি বাংলাকে কুস্তির আখড়া বানিয়ে দিচ্ছেন?” কংগ্রেসের নেত্রী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও রায়গঞ্জে বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে বেপরোয়া। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর দলের নেতারাও বেপরোয়া। প্রবীণ বিধায়ক, তিনি যে রাজনৈতিক দলেরই হোন না কেন, তাঁর উপরে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে মুখ্যমন্ত্রীকে আরও কঠোর হতে হবে।”
গত পঞ্চায়েত ভোটে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ছিল অন্যতম জেলা, যেখান থেকে পরিবর্তনের হাওয়া উঠতে শুরু করেছিল। সেই জেলাতেই এ বার ভোটের আগে তৃণমূলের ‘স্বরূপ’ জনদরবারে তুলে ধরতে মরিয়া বামেরাও। সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর মন্তব্য, “পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, আমাদের দলের লোকজনের উপর তৃণমূল ততই আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে।” রাজ্য কোন পথে চলেছে, ভাঙড়ের ঘটনা তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার। সিটুর রাজ্য সভাপতি তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী কোচবিহারে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে বলেছেন, “রাজ্যে এখন স্বৈরাচার চলছে। এই সময়ে বেশ কয়েক জন আরাবুলকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা তৃণমূলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। খুন, জখম, গুন্ডামি করে। কিন্তু শাস্তি হয় না!” শ্যামলবাবুর মতে, তৃণমূল নেতৃত্বের নির্দেশেই যে হেতু ঘটনা ঘটছে, তাই দোষীদের শাস্তি দাবি করে লাভ নেই। কারণ, পুলিশকে কিছু করতে দেওয়া হবে না!
বিরোধীদের সমবেত আক্রমণের মধ্যেই তৃণমূলের অন্দরে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, আরাবুলদের সংযত করতে না-পারলে পঞ্চায়েতের আগে মানুষের কাছে কী বার্তা যাবে? দলের বিক্ষুব্ধ সাংসদ কবীর সুমন যা প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেন, “লজ্জা করছে! রেজ্জাক সাহেবের কাছে ক্ষমা চাইছি। দলের ভাল চাইলে এ সব বন্ধ করুন। আরাবুল যদি এমন করেন, তাঁকে দেখে উল্টো-পাল্টা ঘটনা আরও ঘটবে!”

অসুস্থ মমতার সফর বাতিল
অসুস্থতার কারণে জেলা সফর বাতিল হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আজ, সোমবার আমডাঙা এবং হরিণঘাটায় দু’টি অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। দুই জেলায় প্রস্তুতিও সারা হয়ে গিয়েছিল। সরকারি ভাবে কিছু বলা না-হলেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে রবিবার জানানো হয়, তাঁর শরীর ঠিক নেই। তাই তাঁর সফর বাতিল করা হয়েছে।

সিটুর পাশে নেই
অন্যান্য রাজ্যে সিটুর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করলেও পশ্চিমবঙ্গে তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখল এসইউসি-র শ্রমিক সংগঠন এআইইউটিইউসি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.