সম্পাদকীয় ১...
(অ)প্রাপ্তবয়স্ক
দিল্লির গণধর্ষণ কাণ্ডের বিচারসূত্রে একটি অতি গুরুতর প্রশ্ন সামনে আসিয়াছে অপ্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের বিচার। ছয় অভিযুক্তের মধ্যে এক জন নিজেকে নাবালক বলিয়া দাবি করিয়াছে বলিয়াই এই প্রশ্ন উত্থাপন। বাকি পাঁচ জন যখন চরম সাজার সম্মুখীন, সেই পরিস্থিতিতে আইনসম্মত সাবালকত্ব অর্থাৎ ১৮ বৎসর হইতে মাত্র কয়েক মাস কম বয়সের দৌলতে এই বিশেষ অপরাধীটি যে অনেক কম শাস্তি পাইবে, তাহাই নয়, বস্তুত আইনের ফাঁক গলিয়া প্রকৃতপক্ষে কোনও শাস্তিই তাহার জন্য বরাদ্দ হইবে না বলিয়া প্রতিভাত হইতেছে। বিষয়টি আরও গুরুতর এই জন্য যে, বিভিন্ন বয়ান হইতে ইতিমধ্যে জানা গিয়াছে যে ছয় জনের অপরাধই মারাত্মক হইলেও এই তথাকথিত ‘নাবালক’ই নাকি সে দিনের ধর্ষিতার উপর সর্বাপেক্ষা বীভৎস অত্যাচার করিয়াছিল, যাহাকে পাশবিক বলা আক্ষরিক অর্থেই পশুদের প্রতি চরম অবমাননা ছাড়া কিছু নহে। আইনের চক্ষুতে তবে কোন্ ভিত্তিতে শাস্তির এই বিপুল তারতম্য, গোটা দেশ জুড়িয়া তোলপাড় তুলিয়াছে সেই প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ করিতে বাধ্য করিতেছে। রাজধানীতে পুলিশ কর্তারা যে ভাবে সম্মিলিত বৈঠকে অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর বিচার-সম্পর্কিত জটিলতাগুলি আলোচনা করিলেন, তাহা নিশ্চিত ভাবেই ব্যতিক্রমী প্রশাসনিক দৃষ্টান্ত। এই সব আলোচনা হইতে স্পষ্ট যে কেন্দ্রীয় সরকার জুভেনাইল জাস্টিস আইনের সংশোধন চাহিলে তাহার সামনে আপাতত দুইটি পথ: প্রথমত, ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ গোত্রের বয়ঃসীমা আঠারো বৎসর হইতে নামাইয়া ষোলো করা, এবং দ্বিতীয়ত, অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও শাস্তির তারতম্যের কথা ভাবা। এই পুনর্বিবেচনা অত্যন্ত জরুরি, আরও অনেক পূর্বে ইহা বাঞ্ছনীয় ছিল। অপ্রাপ্তবয়স্কদের পৃথক বিচারের নীতিটি যে দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত, সেই দর্শন সম্পূর্ণ সঙ্গত। কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এই বিচারনীতির মধ্যে যে সকল অবাঞ্ছিত ফাঁক রহিয়া গিয়াছে, সেগুলির দিকে মনঃসংযোগ না করিলে গোটা প্রয়াসটিই অর্থহীন হইয়া পড়ে। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি নানা রাজ্যের অভিজ্ঞতা বলিয়া দেয়: নাবালকত্বের কারণে মুক্ত অপরাধীরা প্রায়শই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইয়া উপর্যুপরি অপরাধমূলক কার্যে লিপ্ত হয়।
বয়ঃসীমা কমাইবার ভাবনাটির পিছনে যুক্তিটি অবশ্য কিছু সরল। অধুনা মনে করা হয়, একবিংশ শতকীয় প্রযুক্তি-বিনোদন-অধ্যুষিত বিশ্বে বয়ঃপ্রাপ্তি পূর্বাপেক্ষা দ্রুত ঘটে। সে ক্ষেত্রে আঠারো বৎসর পূর্ণ না হইবার দোহাই-এ কোনও অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি না হওয়া অযৌক্তিক। বিশেষত দেখা যায় ষোলো হইতে আঠারো বৎসর বয়স অপরাধমূলক চেতনা বিকাশের পক্ষে উর্বর ভূমি। তবে কিনা, এই প্রসঙ্গে মনে রাখিতে হইবে, যে কোনও বয়ঃসীমাই আসলে আপেক্ষিক, ব্যক্তি-সাপেক্ষ। কোনও একটি নির্দিষ্ট নিম্নসীমা রাখিতেই হইবে, তাহার জন্যই একটি আপেক্ষিক রেখা নির্বাচন ব্যতীত উন্নততর যুক্তি প্রদান এ ক্ষেত্রে মুশকিলের কাজ।
বরং, অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী বিচার ও শাস্তির তারতম্যের বিষয়টি অধিক গুরুতর। যে কোনও অপরাধই যেমন সম-পর্যায়ে বিবেচিত হওয়া উচিত নহে, তেমনই ক্ষেত্রবিশেষে বীভৎস অপরাধের অভিযোগে বয়ঃসীমার লৌহরেখাটি আবশ্যিক হওয়াও উচিত নহে। তাহার অর্থ কিন্তু ইহা নহে যে, সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ যাবজ্জীবন কারাবাস কিংবা মৃত্যুদণ্ডেই অপরাধীকে দণ্ডিত করিতে হইবে। বরং, নাবালক অপরাধীর ক্ষেত্রে মনোচিকিৎসার নিদান অনেক দৃঢ় ভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। একটি চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের ক্ষেত্রে হয়তো এই চিকিৎসার প্রয়োজনটি লঘু করিয়া দেখাও সম্ভব। কিন্তু ধর্ষণের নামে ভয়াবহতম শারীরিক অত্যাচার যে ‘নাবালক’ চালাইতে পারে, স্বহস্তে তরুণীর অন্ত্র ছিন্ন করিয়া আনিবার উল্লাসে মাতিতে পারে, তাহাকে বিচার-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্তরিন করিয়া দীর্ঘকালীন মনোচিকিৎসার অধীন হইতে বাধ্য করা একটি অত্যন্ত জরুরি কাজ। ইহাকে নিছক শাস্তিদান কিংবা প্রতিরোধী পদক্ষেপ হিসাবে না দেখিয়া বরং সমাজের প্রতি, সমাজের বিকলাঙ্গতার প্রতি বিচার-ব্যবস্থার প্রাথমিক দায় হিসাবে দেখা দরকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.