আবার অভিযোগের কাঠগড়ায় পুলিশ। এ বার সল্টলেকে।
এমনিতেই চুরি-ছিনতাই নিয়ে নাজেহাল বিধাননগর পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাতেও শত প্রশ্নের মুখে। এই পরিস্থিতিতেই পারিবারিক বিবাদে পুলিশের অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুললেন ওই পরিবারেরই এক মহিলা। পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁকে হেনস্থার অভিযোগও এনেছেন তিনি।
অভিযোগ, সল্টলেকের সি ডি ব্লকের ওই বাড়িতে সম্পত্তি নিয়ে দুই ভাইয়ের পারিবারিক কলহের জেরে বিধাননগরের পুলিশ প্রথমে এক ভাই, পেশায় চিকিৎসক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়কে শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ ফোন করে থানায় যেতে বলে। অর্পণবাবু রাজি হননি। ওই রাতেই বিধাননগরের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার প্রবীর রায় এক দল অফিসারকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে চড়াও হন বলে অভিযোগ। সঙ্গে কোনও মহিলা পুলিশকর্মী ছিলেন না। সেই সময়ে বাড়িতে অর্পণবাবুর স্ত্রী সুমিতাদেবী ও তাঁদের ৬ এবং ৪ বছরের দুই সন্তানও ছিল। সুমিতাদেবীর অভিযোগ, ওই অফিসার তাঁদের বলেন, ‘আমাদের কাছে আদালতের রায় আছে। বাড়ি এখনই খালি করতে হবে। আমরা তালা লাগাব।’ সুমিতাদেবী আদালতের কাগজ দেখতে চাইলে পুলিশ দেখাতে রাজি হয়নি। অভিযোগ, এত হেনস্থার পরেও ঘর ছাড়তে রাজি না হওয়ায় পুলিশ সুমিতাদেবীকে বলে, ‘আপনার স্বামী সরকারি অফিসার। |
গ্রেফতার করলে কিন্তু চাকরি চলে যাবে’। এমনকী বাচ্চাদেরও ‘বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার’ ভয় দেখাতে থাকে। বাড়ি খালি না করলে তাঁকেও থানায় তুলে নিয়ে যাওয়ার ভয়ও দেখান ওই অফিসার। মহিলা পুলিশ ছাড়া কী ভাবে তা সম্ভব জানতে চাইলে প্রবীরবাবু তাঁকে রীতিমতো ধমক দিয়ে জোর করে বার করে দেন। রাত পোশাকটুকুও পাল্টানোর সময় তাঁকে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ সুমিতাদেবীর। অগত্যা দুই ছেলেকে নিয়ে সল্টলেকেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটাতে বাধ্য হন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সুমিতাদেবী জানান, রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ তিনি ১০৯১ নম্বরে ফোন করে বিধাননগর কমিশনারেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর অভিযোগ, কমিশনারেটের কাছে ঘটনার বিবরণ দেওয়ার পরে ঘটনাস্থলে অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার প্রবীর রায় গিয়েছেন শুনে ‘আমাদের কিছু করার নেই’ বলে ফোন কেটে দেওয়া হয়। শনিবার মহিলা কমিশনের কাছে গিয়ে এক সদস্যকে ঘটনাটি জানান সুমিতাদেবী। মহিলা কমিশন সঙ্গে সঙ্গেই বিধাননগর কমিশনারেটকে জানায় এবং ফের ওখানে গিয়ে অভিযোগ জানাতে বলে। সুমিতাদেবীর অভিযোগ, তিনি পরে ফোন করলে কমিশনারেট থেকে জানানো হয়, শনি ও রবিবার অভিযোগ নেওয়া হয় না। তিনি মহিলা কমিশনের সাহায্যে ফের যোগাযোগ করলে তবেই অভিযোগ নেওয়া হয়। তার পরেই পুলিশ বিষয়টি মেটানোর জন্য অর্পণবাবুকে থানায় যেতে বলে।
ওই মহিলা অভিযোগ করেছেন ও তা বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকে জানানো হয়েছে বলে মহিলা কমিশনের তরফে জানানো হয়। সুমিতাদেবীর দাবি, ওই পুলিশ অফিসারকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করতে হবে। অভিযুক্ত প্রবীরবাবু এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণকলি লাহিড়ী বলেন, ‘‘ওই মহিলার অভিযোগ পেলে বিষয়টি দেখব।” তার পরেই ফোন কেটে দেন তিনি। এই ঘটনায় পুলিশ মহলে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন একটি ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পেয়েছি। পুরো বিষয়টা জানি না। তবে পুলিশ কোথাও সক্রিয়, কোথাও উল্টো আচরণ করছে।’’ আতঙ্কিত সুমিতাদেবী বলেন, ‘‘পুলিশই যেখানে ভক্ষক, সেখানে থাকব কী করে? এখানে থাকতে ভয় পাচ্ছি। এক জন পুলিশ এত গুন্ডামি করতে পারে, ভাবিনি।’ যাঁর সঙ্গে ওই পারিবারিক বিবাদ, অর্পণবাবুর সেই ভাই অনীশবাবু মুখ খুলতে চাননি। |