|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত |
ঝুঁকির সেতু |
বিপন্ন পারাপার |
প্রসেনজিত্পাঠক |
মাঝ বরাবর দুমড়ে ঝুঁকে পড়েছে সেতুটি। ফাটল ধরেছে বিভিন্ন স্থানে। নীচের লোহার বিম মরচে ধরে ক্ষয়ে গিয়েছে। নীচ থেকে সেতুটিকে ধরে রাখা সিমেন্টের একটি স্তম্ভ সেতু ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে রেলিং। অথচ ওই বিপজ্জনক সেতু দিয়েই প্রতি দিন যাতায়াত করছেন অসংখ্য মানুষ। রাজারহাট ব্লকের চাঁদপুর পঞ্চায়েতের ওই সেতুর ব্যাপারে বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে সেটির কোনও মেরামত হয়নি। মেরামতির কোনও উদ্যোগও চোখে পড়ছে না। সেতুটি নিয়ে উদাসীন সেচ বিভাগের ক্যানাল ডিভিশন। |
|
রাজারহাট নিউ টাউন লাগোয়া আকন্দ কেশরীর কাছে লোয়ার বাগজোলা থেকে চাঁদপুর পঞ্চায়েতের বৈদিক ভিলেজের পাশে লাউহাটি পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে একটি পাশ-খাল। খালটি দিয়ে রাজারহাট ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের নিকাশি জল গিয়ে আকন্দ কেশরীর বাগজোলা খালে পড়ে। সেচ বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী খালটি ‘ইই-১’ খাল নামে পরিচিত। চাঁদপুর পঞ্চায়েতের দক্ষিণ নয়াবাদ বাসস্টপ থেকে এক কিলোমিটার ভিতরে কাদা গ্রামে ওই খালের উপরে রয়েছে প্রায় ৩০ ফুট লম্বা ও ফুট দশেক চওড়া ‘কাদার সেতু’ নামে পরিচিত ওই পাকা সেতুটি।
৫০-৬০ বছর আগে রাজারহাট খালে বসানো খান চারেক সিমেন্টের স্তম্ভের উপরে লোহার বিম বসিয়ে তৈরি হয় সেতুটি। তার পর থেকেই দীর্ঘ দিন সেতুটির কোনও মেরামতি হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে নিউ টাউনের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তা হওয়া সত্ত্বেও ওই বিপজ্জনক সেতুর উপর দিয়ে বড় গাড়ি যাতায়াত করতে পারে না। কিন্তু নয়াবাদ, বাগু, শিখরপুর, ঝালিগাছি প্রভৃতি গ্রামের বহু মানুষকে জীবিকার প্রয়োজনে ওই পথ দিয়েই সেতু পার হয়ে নিউ টাউন ও সংলগ্ন এলাকায় যাতায়াত করতে হয়। কাদা গ্রামের ভিতর দিয়ে ওই রাস্তাটি আকন্দ কেশরীতে বাগজোলা খালপাড়ের পাকা রাস্তায় মেশায় ওই সেতুর উপর দিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতও সহজ হয়। |
|
কিন্তু সেতুটির বেহাল অবস্থার জন্য ভারী যানবাহন যাতায়াত করতে পারে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত গাড়ি বা বড় গাড়ি উঠলেও সেতুটি কাঁপতে শুরু করে। ফলে নির্মাণসামগ্রী বোঝাই গাড়িগুলি সেতুর আগেই মালপত্র নামিয়ে দিতে বাধ্য হয়। সেই মালপত্র গন্তব্যে নিয়ে যেতে গ্রামবাসীদের খরচ বেশি হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেতুটির দু’ধারের লোহার রেলিং ভেঙেছে বহু দিন আগে। সেতুটি সেচ বিভাগের ক্যানাল ডিভিশনের অধীনে হলেও এ নিয়ে হোলদোল নেই ওই দফতরের আধিকারিকদের। স্থানীয় বাসিন্দা যদুনাথ মণ্ডল বলেন, “সেতুর অবস্থা খুবই খারাপ। চার চাকার গাড়ি উঠলেই নড়বড় করতে শুরু করে। বহু দিন আগে এক বার মেরামতি হয়েছিল খালে স্তম্ভ বসিয়ে। তা-ও সেতু ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। রেলিং ভাঙা। সেতুটি দুমড়ে নীচে ঝুঁকে গিয়েছে। এই অবস্থায় বিপজ্জনক ভাবে পারাপার করতে হয়। কিন্তু মেরামতির কোনও উদ্যোগ নজরে পড়ছে না।”
সেতু সংলগ্ন রাস্তাটির অবস্থাও খারাপ। ওই রাস্তাটিই নিউ টাউনের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তা। কিন্তু তবুও সেটি সারানো নিয়ে পঞ্চায়েতের কোনও উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ। যদিও এ প্রসঙ্গে রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের জাহানারা বিবি বললেন, “গ্রামের ভিতরের ইটের রাস্তাটি পাকা করার পরিকল্পনা নিয়েছি। কিন্তু সেতুটি যে হেতু সেচ বিভাগের, তাই সেটি মেরামত করতে পারব না। সেটি সেচ বিভাগকেই মেরামত করতে হবে।”
সেচ বিভাগের ক্যানাল ডিভিশনের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আশিস দত্ত বলেন, “লোয়ার বাগজোলার সঙ্গে যুক্ত পাশ-খালের বিভিন্ন সেতু যেমন আমরা মেরামতি করি, তেমনই বিভিন্ন সংস্থাও আমাদের অনুমতি নিয়ে মেরামত করে থাকে। এই সেতুটি আমরাই তৈরি করেছিলাম। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হয়তো খারাপ হয়েছে। কী অবস্থায় রয়েছে, দেখতে হবে।”
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|