বকেয়ার দাবিতে তিন সপ্তাহ ধরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে (পিএইচই) কোচবিহার মেকানিক্যাল সাব ডিভিশনের অফিসে তালা ঝুলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া মেটানো না হলে সব পাম্প বন্ধ করে জল সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন ঠিকাদার নিযুক্ত পাম্প কর্মীরা। জেলার মাথাভাঙার ঘোকসাডাঙায় দুইটি পাম্প বিকল হয়ে থাকলেও তা মেরামত করা যাচ্ছে না। গত তিন দিন ধরে এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
দিনহাটার ভুলকিতেও পাম্প মেরামত না হওয়ায় সমস্যায় এলাকার বাসিন্দারা। বিভিন্ন গ্রামে গভীর নলকূপ মেরামত নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঠিকা-নিযুক্ত কর্মীরা পরিষেবা বন্ধ করায় কোচবিহার ছাড়াও জলপাইগুড়ি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জল সববরাহ নিয়ে দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন, পিএইচই কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।
পিএইচই-র কোচবিহার মেকানিক্যাল সাব ডিভিশনের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার পূর্ণজি রায় বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানানো হয়েছে। তাঁরাই যা বলার বলবেন।” দফতরের নর্দান ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অরূপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বলেন, “মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। পরে যোগাযোগ করুন।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কোচবিহার ছাড়া জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলাও দফতরের নর্দান ডিভিশনে রয়েছে। গত দেড় বছর ধরে প্রয়োজনের তুলনায় কম অর্থ বরাদ্দ মেলায় ঠিকাদারদের বকেয়া বেড়ে প্রায় ৬ কোটি টাকা। ওই ডিভিশনের আওতায় কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি পুরসভা ছাড়া দুই জেলার সমস্ত পুর এলাকা ও গ্রামীণ এলাকা মিলিয়ে ৩২৫টি পাম্পের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। ওই পাম্পগুলি চালানো, বন্ধ করার জন্য ঠিকাদার-নিযুক্ত ৬০০ পাম্প অপারেটর আছেন। দৈনিক ১৯৬ টাকা মজুরি দেওয়া হয় ওই অপারেটরদের। কোচবিহার মেকানিক্যাল সাব ডিভিশনের আওতাধীন দুই জেলার পাম্প অপারেটরদের জন্য মজুরি বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা প্রয়োজন হয়। বছরে যার পরিমাণ ৪ কোটি ৩৬ হাজার টাকা। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে ঠিকাদারদের দেড় বছরের বেশি সময় থেকে ওই পাওনার আংশিক টাকা দেওয়া হচ্ছে। এতে বকেয়ার পরিমাণ ৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, পুজোর আগে গত বছরের বকেয়ার চল্লিশ শতাংশ টাকা মেটানো হয়। তার পরে কোনও টাকা দেওয়া যায়নি। বকেয়া না পেয়ে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে পাম্প অপারেটরদের বেতন দিতে পারছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদাররা। এর পরেই গত ১২ ডিসেম্বর থেকে মেকানিক্যাল সাব ডিভিশন অফিসের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন পাম্প অপারেটরদের সংগঠন।
পাম্প অপারেটর কর্মী ইউনিয়নের নর্দান মেকানিক্যাল ডিভিশনের সম্পাদক গণেশ নন্দী বলেন, “কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির ৬০০ ঠিকাদার নিযুক্ত পাম্প অপারেটর সেপ্টেম্বর মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না। বকেয়ার পরিমাণ ১ কোটি ৪৪ টাকা টাকা। বিভিন্ন মহলে দরবার করেও লাভ না হওয়ায় আমরা দফতরে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।” আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া মেটানো না হলে দুই জেলা জুড়ে আমরা পরিষেবা বন্ধ করে আন্দোলন করা হবে বলে গনেশবাবু জানিয়েছেন। সংগঠনের দাবি, ঠিকাদারি ব্যবসায় বাকি থাকবেই। তা ছাড়া রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারদের বেতন মেটানোর কথা। তাই বরাদ্দ না মেলার যুক্তি মানা যায় না। ঠিকাদার সংস্থাগুলির সংগঠন ওই দাবি মানতে চায়নি। পিএইচই মেকানিক্যাল কন্ট্রাক্টার্স অ্যাসোসিয়েশন নর্দান ডিভিশন সভাপতি গৌরাঙ্গ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই দুই জেলা ছাড়াও দার্জিলিং আমাদের আওতায় রয়েছে। সবক্ষেত্রেই প্রায় দেড় বছর ধরে বকেয়া মিলছে না। বকেয়ার পরিমাণ ছ’কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এত দিন ধারদেনা করে অপারেটরদের বেতন মেটানো হলেও সেপ্টেম্বর মাস থেকে তা আর সম্ভব হচ্ছে না।” ঘটনায় উদ্বিগ্ন ওয়েস্ট বেঙ্গল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (নবপর্যায়) কোচবিহার জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, “অফিস বন্ধ থাকায় রোজকার কাজ ছাড়াও কর্মীদের ঋণ, মৃতের পোষ্যের চাকরি, পেনশন সংক্রান্ত কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলতেই ওই দফতর খোলা নিয়ে প্রশাসন বা বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ উদাসীন।”
জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “কয়েক দিনেই এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কোচবিহারে আসবেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেব। তবে কর্তৃপক্ষ চাইলে আমরা অফিস খুলতে সমস্ত রকম সহযোগিতা করব বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছি।” |