গ্রামবাসী এবং বিএসএফ সংঘর্ষে স্থানীয় এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরেও উত্তেজনা রয়েছে হিলি সীমান্তে। ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার এলাকায় বনধ পালন করে কংগ্রেস। ঘটনার তদন্তে এ দিন পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল গ্রামে যান। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় বাসিন্দাদের সঙ্গে তারা কোনও রকম কথা বলতে পারেননি। মৃতের স্ত্রী পলি বিবি এ দিন বিএসএফের বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় গুলি করে তাঁর স্বামীকে মেরে ফেলার অভিযোগ জানিয়েছেন হিলি থানায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিএসএফ অন্যায় ভাবে তাঁদের বাড়িতে ঢুকে গরু আটক করছিল। প্রতিবাদ করায় প্রাথমে লাঠি এবং পরে গুলি চালানো হয়েছে। অথচ সে ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। দোষী বিএসএফ জওয়ানদের শাস্তির দাবিতে বেলা ১টা থেকে ৩ ঘণ্টা লস্করপুর মোড়ে হিলি-বালুরঘাট রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। |
স্কুল, সরকারি অফিস বন্ধ ছিল। বেসরকারি বাস চলাচলও করেনি। অবরোধের জেরে যে সব সরকারি বাস চলছিল সেগুলিও আটকে পড়ে। হিলি সীমান্ত পথে বাংলাদেশের সঙ্গে এ পারের বহির্বাণিজ্যও এ দিন বন্ধ হয়ে যায়। শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পড়েছে সীমান্তে। এ দিন কংগ্রেসের তরফে মৃত এবং জখমদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি তোলা হয়।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিএসএফ এবং পুলিশের তরফে বিএসএফের উপর হামলা ও একটি পুলিশের জিপ জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। মৃত সোলেমনের স্ত্রী জানান, তাঁর স্বামী চায়ের দোকানে বসেছিলেন। বিএসএফ-পুলিশের গাড়ি গ্রামে এসেছে বলে তিনি দেখতে গিয়েছিলেন। অন্যায় ভাবে তাঁকে গুলি করা হয়েছে। জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “দুই তরফেই অভিযোগ মিলেছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের তরফে যে অভিযোগ করা হয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
গত বুধবার হিলির সীমান্ত লাগোয়া লস্করপুর গ্রামে পাচারের জন্য গরু জড়ো করা হয়েছে খবর পেয়ে অভিযানে নামে বিএসএফ। মহিলা জওয়ানদের নিয়ে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু আটক করে বলে অভিযোগ। তাতে মহিলারা প্রথমে বাধা দেন। তাঁদের সঙ্গে মহিলা বিএসএফ জওনায়দের গোলমাল বাঁধে। বাসিন্দারা জড়ো হয়ে প্রতিরোধ করলে বিএসএফ লাঠি চালায়। বিনা প্ররোচনায় গুলি চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। মাথায় গুলি লেগে সোলেমান মণ্ডলের মৃত্যু হয়। গুলিতে জখম হন আরও ১ জন। ২ মহিলা বিএসএফ জওয়ান-সহ তাদের ৩ জন ইটের আঘাতে জখম হয়ে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি।
সীমান্ত চৌকির ৯৬ নম্বর কোম্পানির কম্যান্ডেন্ট রাজেন সুদ বলেন, “গ্রামবাসী বাধা দিলে বিএসএফ জওয়ানরা ফিরে আসছিলেন। মহিলা জওনায়নদের লক্ষ্য করে বাসিন্দারা পিছন থেকে ইট ছুড়তে শুরু করেন। তাতে ৩ জন জখম হয়েছেন। এ ব্যাপারে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছে।” আত্মরক্ষার্থে বিএসএফকে গুলি চালাতে হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। বাসিন্দারা দাবি করেন, গোলমাল বিএসএফ পাকিয়েছে। গোয়ালে বাড়ির গরু রয়েছে জানালেও তারা মানতে চাইছিল না। জোর করে সেগুলি নিয়ে যেতে চেষ্টা করলে বাধা দেওয়া হয়। তখন লাঠি চালিয়ে গুলি ছোড়ে বিএসএফ। |