অফিসে কেউ না থাকার সুযোগ নিয়ে এক মহিলা কর্মীকে দিনের পর দিন যৌন হয়রানির অভিযোগে একটি ক্যুরিয়ার সার্ভিস সংস্থার ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিককে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিলিগুড়ি থানার বিধান রোড সংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁকে ধরা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম পরেশ ঘোষ। তিনি শিলিগুড়ি থানার মহিলা সাব ইন্সপেক্টর জ্যোতি ম্যাক্সিম তিরকি’র স্বামী। তাঁর বাড়ি দেশবন্ধুপাড়ায়। নিগ্রহের অভিযোগকারী মহিলার বাড়ি বাবুপাড়ায়। তিনি দাবি করেন, পরেশবাবুর স্ত্রী পুলিশে কাজ করায় তাঁকে কেউ কিছু করতে পারবে না বলে তিনি ভয় দেখান। পরেশবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেছেন, “মহিলার অভিযোগ পেয়ে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।” পরেশবাবুর স্ত্রী দাবি করেন, পরেশবাবু দুর্গাপুজোর সময় থেকে অসুস্থ থাকায় অফিসের টাকা লেনদেনের বিষয়টি মহিলা দেখতেন। প্রায় দেড় লক্ষ টাকার হিসেব দিতে পারছিলেন না তিনি। তা নিয়ে চাপ দেওয়ায় পরেশবাবুর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে।
ওই মহিলা অভিযোগ করেছেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর মাস থেকে তিনি ওই সংস্থার কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। ক্যুরিয়রের মাল কম্পিউটারে নথিভুক্ত করার কাজ করতেন তিনি। পরেশবাবু যে চেয়ারে বসতেন তাঁর পাশে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল ওই মহিলার। এক সপ্তাহ আগে থেকে ওই সংস্থার মালিক পরেশবাবু তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করেন। প্রথম কয়েকদিন অফিস যে সময় ফাঁকা থাকত তখন তাঁর পাশে বসেই পরেশবাবু নিজের ল্যাপটপে খারাপ ছবি দেখতে শুরু করেন। সেই ছবি দেখার জন্য তিনি অভিযোগকারীণিকে জোর করতেন। তিনি এই নিয়ে একাধিক বার সতর্ক করলেও পরেশবাবু তা গুরুত্ব দিতেন না। বুধবার পরেশবাবু ওই মহিলাকে হোটেলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ। ওই মহিলা বলেন, “আমি বিষয়টি পুলিশে জানানোর কথা বললে পরেশবাবু হুমকি দেন। তাঁর স্ত্রী পুলিশে রয়েছে তাই কেউ তাঁর কিছু করতে পারবে না বলে তিনি ভয় দেখান। আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ি। আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে স্বামীকে সব জানাই। এখন পুলিশকে সব জানিয়েছি। উপযুক্ত বিচার পাব বলে আশা করছি।” তাঁর বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের যে অভিযোগ পরেশবাবু করেন তা অস্বীকার করেন ওই মহিলা। তিনি বলেন, “পরেশবাবু কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন। সে সময় আমি টাকা পয়সার হিসেব রাখতাম। তিনি সুস্থ হওয়ার পর সব বুঝিয়ে দিয়েছি। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এতদিন তিনি করেননি কেন? আসলে আমি পুলিশে যাওয়ায় এখন আমাকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে।” এ দিন পরেশবাবুকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। তিনি বলেন, “ওই কর্মী দেড় লক্ষ টাকার হিসেব দিতে পারছিলেন না। তা নিয়ে চেপে ধরতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে।” |