|
|
|
|
বড় শিল্পে বিদ্যুতের ভর্তুকি রদে বছরে সাশ্রয় ২৫০ কোটি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সাধারণ মানুষের সঙ্গে সঙ্গে বড় শিল্পেও বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়া কতটা ভুল হয়েছিল, ওই সব শিল্পে ভর্তুকি বন্ধ করার পরে সেটা বুঝতে পারছে রাজ্য সরকার। বিদ্যুৎকর্তাদের হিসেব, হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী শিল্পে ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে রাজ্যের। ভাঁড়ারের মা ভবানী অবস্থায় এটা নেহাত কম নয়।
রাজ্যে পালাবদলের পরে নতুন সরকার এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বিদ্যুতের মাসুল বাড়ানো হবে না। তার পরিবর্তে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে ইউনিট-পিছু গড়ে ২৫ পয়সা ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে সঙ্গে রেল, বিমানবন্দর, এমনকী শপিং মলের মতো বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলিও বিদ্যুতের বিলের উপরে ২৫ পয়সা করে ভর্তুকি পেয়ে এসেছে। অথচ বিদ্যুৎকর্তারাই জানাচ্ছেন, অন্য কোনও রাজ্য এই ধরনের শিল্প ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয় না।
এ রাজ্যে বাম আমলে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে একেবারেই যে ভর্তুকি দেওয়া হয়নি, তা নয়। বণ্টন সংস্থাকে বছরে ১০০ কোটি টাকার মতো ভর্তুকি দেওয়া হত। তবে সেটা এপিএল এবং বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারগুলির জন্য। বামফ্রন্টের জমানায় কোনও দিনই রেল, বিমানবন্দর বা শপিং মলকে বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়া হয়নি।
রাজ্যের নয়া সরকার বিদ্যুতের মাসুল না-বাড়িয়ে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রেলের মতো শিল্প সংস্থাগুলি লাভবান হয়েছে বলে বিদ্যুৎকর্তাদের অনেকেই মনে করেন। এক কর্তা বলেন, “কোষাগারে চূড়ান্ত টানাটানি। তা সত্ত্বেও বড় বড় শিল্প সংস্থাকেও বিদ্যুৎ-ভর্তুকি দেওয়ায় রাজ্য সরকারের কাঁধে কোটি কোটি টাকার বাড়তি বোঝা চেপেছে।”
২০১১ সালের মে মাসে রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে। বণ্টন সংস্থা তার পরেই ইউনিট-পিছু ২৫ পয়সা মাসুল বাড়ানোর আবেদন জানায় রাজ্যের কাছে। কারণ, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার কিছু দিন আগেই বণ্টন সংস্থার বিদ্যুতে ২৫ পয়সা করে মাসুল বাড়ানোর ব্যাপারে অনুমোদন দিয়েছিল রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে কমিশনের নির্দেশ সত্ত্বেও তখন মাসুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারেনি বণ্টন সংস্থা। উল্টে প্রতি ইউনিটে ২৫ পয়সা ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তার জেরে ২০১০-’১১ অর্থবর্ষ থেকে শুরু করে ২০১১-’১২ এবং ২০১২-’১৩ আর্থিক বর্ষের নভেম্বর পর্যন্ত ভর্তুকি বাবদ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে রাজ্যের প্রায় ১,১০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা। আর্থিক টানাটানির মধ্যেও যার অনেকটাই ইতিমধ্যে বণ্টন সংস্থাকে দিতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য পরিস্থিতির চাপেই বিদ্যুতের দাম না-বাড়ানোর ব্যাপারে নিজেদের জেদ বজায় রাখতে পারেনি রাজ্য সরকার। ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে বার চারেক মাসুল বাড়ানোর অনুমতি দিতে হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে ভর্তুকিও চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে বণ্টন সংস্থার কর্তারাই হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী শিল্প ক্ষেত্রে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেয় রাজ্যকে।
দেরিতে হলেও নিজেদের ভুল বুঝতে পারে রাজ্য। মহাকরণ থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই বণ্টন সংস্থা রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আবেদন জানায়। ডিসেম্বরে কমিশন তা অনুমোদন করে। আর তাতেই ২৫০ কোটি সাশ্রয় হচ্ছে অর্থ দফতরের। |
|
|
|
|
|