|
|
|
|
টাকা নিয়ে টানাপোড়েন: কতটা শোভন উঠছে প্রশ্ন |
বিজ্ঞানের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর অর্থের দরবার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মাস কয়েক আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বাচনভঙ্গি নকল করেছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে, ইউপিএ-সঙ্গত্যাগের পরবর্তী ওই অধ্যায়ে তাঁর অভিযোগ ছিল, মনমোহন সিংহের সঙ্গে তৃণমূল স্তরের মানুষের যোগ নেই। ডিসেম্বরে দিল্লিতে জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকে যাননি তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবার্ষিকী অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানালেন, কেন্দ্র যেন এ রাজ্যকে বেশি অর্থ দেয়। কারণ, বাংলার উন্নতির উপরেই দেশের উন্নতি অনেকাংশে নির্ভরশীল বলে মমতা মনে করেন।
এ ভাবে বিজ্ঞান মঞ্চকে ব্যবহার করে কেন্দ্রের কাছে দাবি পেশের মাধ্যমে পরোক্ষে রাজনৈতিক বিষয়ের অবতারণা করা কতটা সঙ্গত ও শোভন, প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। |
|
সৌজন্য। কলকাতায় বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। |
সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ওই অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “১০০ বছর আগে বিজ্ঞান কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি হয়েছিলেন বাংলার ভূমিপুত্র আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। আর শতবর্ষের বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্বোধন করলেন এই বাংলারই আর এক ভূমিপুত্র দেশের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বাংলা এ রকমই সর্বদা রঙিন, মুগ্ধকর ও হাস্যময়। বাংলার জন্য আরও কিছু দিন। বাংলাকে বেশি করে দিন। বাংলার উন্নতি হচ্ছে মানে, দেশেরও উন্নতি হচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটানের সীমান্ত এ রাজ্যেই। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের করিডরও বাংলা। বাংলা আরও নোবেলজয়ী উপহার দিতে পারে। বাংলা এখন শুধু দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী নয়, বিজ্ঞানেরও রাজধানী।”
মমতা যখন এ সব বলছেন, হাততালি দিয়েছেন মনমোহন। কিন্তু তাঁর দলের রাজ্য নেতৃত্ব সম্মেলনে পাঁচ নোবেলজয়ীর উপস্থিতিতে এমন দাবি তোলার সমালোচনা করেছে। “ওই মঞ্চে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতকে তুলে ধরে পিছিয়ে পড়া বাংলা ও রাজ্যের দুর্বলতাকেই তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী। এতে কি রাজ্যের বা তাঁর সম্মান বাড়ল?” প্রশ্ন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার। যার জবাবে মমতা-মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি, “হতে পারে, মঞ্চের চরিত্র অন্য ধরনের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক মন্ত্রী তো উপস্থিত ছিলেন! তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণে যে কোনও মঞ্চকেই আমাদের বারবার ব্যবহার করা উচিত।” সুব্রতবাবুর আক্ষেপ, “ঋণ নিয়ে বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যটাকেই দেউলিয়া করে গিয়েছে। তার বোঝা বইতে হচ্ছে আমাদের। এ বিষয়ে কেন্দ্র আমাদের সঙ্গে কোনও ইতিবাচক আলোচনায় প্রস্তুত নয়।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য জানিয়েছেন, বাংলার উন্নতিতে পূর্ণ কেন্দ্রীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রদীপবাবুর নেতৃত্বে সকালে প্রদেশের একটি দল হোটেলে মনমোহনের সঙ্গে দেখা করেছিল। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী এই আশ্বাস দেন বলে প্রদীপবাবুর দাবি। |
তিন প্রধান
|
বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবর্ষ। তারই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাতে
পুস্তিকা তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। |
বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চে ওঠার পরে মিনিট পনেরো মমতা-মনমোহন কার্যত বাক্য বিনিময় হয়নি। যদিও দু’জনের আসন ছিল পাশাপাশি। রাষ্ট্রপতির বাঁ দিকে প্রধানমন্ত্রী, তাঁর বাঁ দিকে মুখ্যমন্ত্রী। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে ওঠেন। রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মাথা ঝুঁকিয়ে মমতা নমস্কার করেন, প্রতি নমস্কার করেন মনমোহন। কিন্তু এ তো গেল নিছকই প্রথা! এর পরে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের বক্তৃতা চলাকালীন মনমোহনের দিকে ফিরেও তাকাননি মুখ্যমন্ত্রী। বাঁয়ে বসা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছিলেন। বরফ গলল ১১টা ৫৫ মিনিটে, যখন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান-প্রযুক্তিমন্ত্রী জয়পাল রেড্ডির বক্তৃতা শেষের মুখে। মুখ্যমন্ত্রী হেসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাক্যালাপ শুরু করেন। তার পরে দু’জনে কয়েক বার কথা হয়। মনমোহনের বক্তৃতার মাঝপথে কিছু দর্শক যখন জানালেন তাঁরা শুনতে পাচ্ছেন না, মমতা নিজে উঠে মঞ্চের পিছনে দেখতে গেলেন, মাইক্রোফোন কেন কাজ করছে না। এক বার নয়, পর পর দু’বার।
অর্থাৎ কেন্দ্রের কাছে দাবি পেশ করা রাজনীতিকই শুধু নন, বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবর্ষের মঞ্চে ইভেন্ট ম্যানেজারের ভূমিকাতেও নামলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
|
—নিজস্ব চিত্র |
|
|
|
|
|