বিবেক ছাত্র-যুব উৎসবের জন্য স্কুলের কয়েকটি ক্লাসঘর চেয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু, তিন দিনের জন্য স্কুলের পঠনপাঠনই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কে জড়ালেন বাঁকুড়া জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোমনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। পড়াশোনা বন্ধ থাকবে, এই মর্মে প্রতিটি ক্লাসে নোটিসও পাঠিয়েছিলেন সোমনাথবাবু।
ফলে বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ রেখেই বাঁকুড়া জেলা স্কুলে শুরু হয়েছে জেলা বিবেক ছাত্র-যুব উৎসব। ঘটনার কথা জানতে জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দফতর ক্ষুব্ধ। শুধু তাই নয়, এ দিন পরিদর্শনে গিয়ে স্কুলের আরও অনিয়ম ও অব্যবস্থাও চোখে এসেছে প্রশাসনিক আধিকারিকদের।
পড়াশোনা বন্ধ থাকার খবর পেয়ে স্কুলে গিয়েছিলেন বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মৌমিতা বসু, জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দেবপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়, সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক আধিকারিক অঞ্জন ঘোষ, জেলা মিড-ডে মিল আধিকারিক দেবারতি সরকার-সহ কয়েক জন। মিড-ডে মিল সংক্রান্ত নানা অভিযোগও উঠে এসেছে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মৌমিতাদেবী বলেন, “জেলা প্রশাসন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে শুধু তিন-চারটে ক্লাসঘর চেয়েছিল যুব উৎসবের জন্য। কিন্তু, প্রধান শিক্ষক কারও সঙ্গে আলোচনা না করে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন দিন স্কুল ছুটি ঘোষণা করেছেন, যা তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক জানান, জেলা স্কুলে মিড-ডে মিলের খরচের কোনও হিসেব প্রধান শিক্ষক দিতে পারেননি। এমনকী সর্বশিক্ষা মিশনের একাধিক প্রকল্পের টাকা কী ভাবে কোন খাতে খরচ হয়েছে, তা-ও তিনি বলতে পারছেন না। মৌমিতাদেবীর বক্তব্য, “আমি পুরো ঘটনার রিপোর্ট শিক্ষা দফতরকে পাঠাব। মিড-ডে মিলে দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।” |
এ দিন প্রশাসনিক কর্তারা স্কুলের মিড-ডে মিলের স্টোররুম দেখতে চাইলে চাবি না থাকায় ঢুকতে পারেননি। শেষে মৌমিতাদেবীর নির্দেশে ওই ঘর ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষকের টেবিল থেকে উদ্ধার হয়েছে দুটি সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র। সেগুলি কী ভাবে এল, তার সদুত্তরও প্রধান শিক্ষক দিতে পারেননি। আপাতত ওই ভোটার কার্ড দু’টি জেলাশাসকের দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি খোদ বাঁকুড়ার জেলাশাসক। কিন্তু ঘটনার দিন জেলার বাইরে থাকায় জেলাশাসক বিজয় ভারতীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে স্কুল-কমিটির সহ-সভাপতি তথা বাঁকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান শম্পা দরিপার অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক কখন কী করেন, তা আমাদের জানান না। উনি যে যুব উৎসবের জন্য স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ রাখবেন, তা-ও জানাননি। এই ঘটনা মানা যায় না।”
প্রধান শিক্ষক সোমনাথবাবুর অবশ্য বলেন, “আমি জেলাশাসককে জানাতে তাঁর অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু উনি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় বিরক্ত করিনি।” তাঁর যুক্তি, “এই ধরনের অনুষ্ঠান স্কুলে করলে পড়াশোনা চালানো যায় না। তাই জেলা প্রশাসন কয়েকটি ক্লাসঘর চাইলেও আমি পঠনপাঠন বন্ধ রেখে ছাত্রদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলেছি।” মিড-ডে মিল বা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্পের খরচের হিসাব কেন নেই? তিনি বলেন, “স্যারের কাছে আছে।” কে সেই ‘স্যার’, তা অবশ্য বলতে পারেননি প্রধান শিক্ষক।
অতিরিক্ত জেলাশাসকের সাফ কথা, “মিড-ডে মিল বা স্কুলের প্রকল্পের টাকার হিসেব না থাকা, অন্যায় ভাবে স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ রাখাএ সব কিছুর দায় প্রধান শিক্ষককেই নিতে হবে!” |