স্থানীয় বাসিন্দাদের বিনোদন ও সেই সঙ্গে নদীপাড়ের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে হাসনাবাদে ইছামতী নদীর ফেরিঘাটের কাছে তৈরি হয়েছিল পার্ক। নামকরণ করা হয়েছিল ‘নজরুল সৈকত’। প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা খরচ করে পার্কটি তৈরি করেছিল টাকি পুরসভা। কিন্তু নদীবাঁধের ফাটলে বর্তমানে পার্কটির বিপজ্জনক অবস্থা। দিনের পর দিন বাঁধের ফাটল বাড়তে থাকায় যে কোনও মুহূর্তে পার্কটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় পার্কে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন লোকজন। পাকের্র পাশেই রয়েছে সারি সারি দোকান। পার্ক রক্ষায় বাঁধের যথাযথ মেরামতির জন্য পুরসভা-সহ সংশ্লিষ্ট মহলে দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাঁধ মেরামতিতে এখনও কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি প্রশাসন।
পরিস্থিতি যে উদ্বেগের তা স্বীকার করে বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “পুরপ্রধানের কাছে শুনেছি হাসনাবাদের ওই জায়গায় নদীবাঁধের অবস্থা ভাল না হওয়ায় পার্কটি ভেঙে পেড়েছে। পাশ্ববর্তী দোকানগুলিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে সেচ দফতরকে বলা হয়েছে।” টাকি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “নজরুল সৈকতের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় পার্কটি বিপজ্জনক বলে ইতিমধ্যেই নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ইছামতী নদীর পাড় যে ভাবে ভাঙছে তাতে পার্কের তলা দিয়ে মাটির গভীরে ভাঙনের ফলে রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত বাঁধ মেরামত ও ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ওই এলাকায় বাসিন্দারা বিপদের মুখে পড়বেন।” |
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, টাকি পুরসভার বিভিন্ন খাতে পড়ে থাকা প্রায় ১৩ লক্ষ টাকায় ওই পার্কটি তৈরি করা হয়। পার্কটি সুন্দর করে সাজানোর পর সেখানে কাজী নজরুল ইসলামের আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়। পার্কে বসার জায়গা থেকে শুরু করে শৌচাগারের ব্যবস্থাও করা হয়। এমনকী সন্ধ্যার পর পার্কে বেড়াতে যাতে সমস্যায় না পড়তে হয় সে জন্য আলোরও ব্যবস্থা করা হয়। গত দুর্গাপুজোর সময় পার্কটির উদ্বোধন করেন রাজ্যের তদানীন্তন পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ। নদী বাঁধের উপর দিয়ে তৈরি প্রায় ২৫০ ফুট দীর্ঘ পার্কের মনোরম পরিবেশ স্থানীয় বাসিন্দারাই নয়, পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। কিন্তু উদ্বোধনের কয়েক মাসের মধ্যে পার্কের ৫০ ফুট এলাকা ভেঙে পড়ে। বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় এবং সেই অংশ দিয়ে জল ঢুকতে থাকায় রাস্তার ধারে দোকানঘরগুলির অবস্থাও বিপজ্জেনক। যে কোনও সময় ধসের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। পার্কের পাশেই লন্ড্রির মালিক গোপাল নাথ বললেন, “পার্কের একাংশ ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দোকানের পিছন দিকের বাঁধে ফাটল যে ভাবে বাড়ছে তাতে যে কোনও মুহূর্তে দোকান ভেঙে নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে।” পার্ক উদ্বোধনের সময় দোকানের পাশে কংক্রিটের বাঁধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা করা হয়নি বলে দাবি স্থানায়ী ব্যবসায়ীদের। এই অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দা থেকে দোকানদার সকলেই চাইছেন পার্ক বাঁচানোর পাশাপাশি এলাকায় নদীর ভাঙন রুখতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক প্রশাসন। না হলে অদূর ভবিষ্যতে বিপন্ন হতে পারে বসতিও। |