|
|
|
|
থাকতে হয় স্টেশনেই, তবু ইডেন যাওয়া চাই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ |
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা। নবদ্বীপ থেকে তখন হাতে গোনা কয়েকটি ট্রেন কলকাতায় যায়। তার মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ শেষ যে ট্রেনটা কলকাতা যেত, তাকে বলা হত ‘লাস্ট ডাউন’। ঠিক এমনই এক নতুন বছরের সন্ধ্যায় লাস্ট ডাউনে উঠেছিলেন একদল যুবক। গন্তব্য ইডেন গাডের্নস। রাত কাটবে লাইনে দাঁড়িয়ে। পরের দিন ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট শুরু।
মফস্সল থেকে সেই খেলা দেখতে যাওয়ার ধারা এখনও অব্যাহত। বৃহস্পতিবারও শহর থেকে অনেকে গিয়েছেন খেলা দেখতে। এক সময়ে রাজস্থানের হয়ে কলকাতা ময়দানের নাম করা ক্রিকেটার অর্জুন কর্মকার বলেন, “আমাদের সময়ে খেলার আগের দিন রাত কাটত জেগে। এখন খেলার দিন রাত কাটে জেগে।” দিনরাতের এক দিনের ক্রিকেট শেষ হতে হতে লাস্ট আপ ট্রেন বেরিয়ে যায়। তাই হাওড়া স্টেশনেই এই শীতের রাত কাটে অনেকের। খেলাও বদলে গিয়েছে। সাদা পোশাকে ওয়েস হল বল করছেন, সে দৃশ্য এখনও চোখে ভাসে। তাঁরই ভাইপো এ দিন গিয়েছেন ধোনি-হাফিজদের দেখতে। অর্জুনবাবু বলেন, “তখন পুরো সময়টাই গ্রাস করে নিত খেলা। সকালে মেঘলা আকাশ দেখে মনে পড়ছিল গঙ্গার ধারের ইডেনে এমনই পরিবেশ পেলে সে আমলের পেসাররা কতটা সুইং পেতেন। এ বার পাকিস্তান কিন্তু প্রথম উইকেটের জুটিতে অনেক রান তুলে নিল।”
তবে পরিবেশ ও পরিস্থিতি তো অনেকটাই বদলেছে। এ বার লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পাওয়া যায়নি। টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে অনলাইনেই। রাত জেগে টিকিট কাটার সেই দিন শেষ। নারায়ণ কর্মকার বলেন, “আমি টিকিট পেয়েছি এক ব্যবসায়ী বন্ধুর কাছ থেকে।” অনলাইনেই অবশ্য টিকিট কেটেছেন মফস্সলের অনেকেই। নবদ্বীপ আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সম্পাদক গোবিন্দ বাগ বলেন, “উত্সাহ উদ্দীপনার কোনও পরিবর্তন হয়নি। ইডেন অবশ্য বদলছে। আসন কমেছে। তবে মফস্সল থেকে যাওয়ার প্রবণতা কমেনি।” তাঁর কথায়, “তবে আমরা সারা বছরে চোখের সামনে পাতৌদি, জয়সীমা বা বোরদের মতো প্লেয়ারদের দেখতে পেতাম একবারই। কলকাতার টেস্টে। এখন টিভির দৌলতে বছরে সারা বছরই দেখা যায়। তবু মাঠে যাওয়ার উত্সাহ যে কমেনি, সেটা ভাল কথা।”
শহরের এক যুবক প্রশান্ত নন্দী সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট দেখতে। শান্তনু বলেন, “বেশি দূর যাওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই ঠিক করেছিলাম নতুন স্ত্রীকে একটা দিন খাস স্বর্গোদ্যানেই নিয়ে যাব। সোজা চলে গিয়েছিলাম ইডেনেই।”
বুড়ো শিবতলার দেবু সিংহের খেলা দেখতে যাওয়ার গল্প এখনও শহরের লোকের মুখে মুখে ফেরে। ইডেনে টেস্ট বা মোহনবাগানের খেলা থাকলে সাত-আট জন বন্ধুকে নিয়ে তিনি মাঠে যাবেনই। রাতে কোথায় থাকতেন? ওবেরয় গ্র্যান্ডে।
এখন অনেকে থাকেন হাওড়া স্টেশনে কিংবা বন্ধুদের মেসে বা আত্মীয়ের বাড়ি। কিন্তু স্বর্গোদ্যান যে এখনও তার মাহাত্ম্য ধরে রেখেছে, তা তাঁদের দেখলে বোঝা যায়। |
|
|
|
|
|