মুর্শিদাবাদের শক্তিপুর পুলিশ ফাঁড়িতে একাধিক অভিযোগ রয়েছে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সেই ফাঁড়িকে থানায় উন্নীত করা হবে। জেলা পুলিশের আমন্ত্রণে সেই নতুন থানার উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক হুমায়ুনই।
মন্ত্রী হুমায়ুনের বক্তব্য, “থানা উদ্বোধনের জন্য পুলিশ সুপার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কার্ডে আমার নামও রয়েছে। আমি থানা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে থাকব। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুব্রত সাহা ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ওই অনুষ্ঠানে ফিরহাদ হাকিমও আসছেন বলে শুনেছি। এর বেশি আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।” |
কিন্তু এই শক্তিপুর ফাঁড়িতেই হুমায়ুনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, অপহরণ ও সরকারি সম্পত্তি নষ্টের মতো ৮টি অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে ৫টি মামলায় পুলিশ চার্জশিট জমা দিয়েছে। বাকি তিনটিতে তদন্ত চলছে। সেক্ষেত্রে যাঁর নামে অভিযোগ রয়েছে, তদন্তও চলছে, তাঁকেই কেন থানার উদ্বোধন করতে ডাকা হল?
শক্তিপুর পুলিশ ফাঁড়ি স্থানীয় রেজিনগর থানার অধীনে ছিল। সেই থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকই এই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রক। রেজিনগর থানার সেই ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অনুপম দাস এই ব্যাপারে কোনও কথা বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “যা বলার জেলা পুলিশ সুপার বলবেন।” জেলার এসপি হুমায়ুন কবির অবশ্য দায় ঠেলে দিয়েছেন রেজিনগর থানার ঘাড়েই। তাঁর সোজা কথা, “ওই থানা উদ্বোধনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে স্থানীয় রেজিনগর থানা। থানা উদ্বোধন করতে কাকে ডাকা হবে, তা নিয়ে আমার সঙ্গে কথা হয়নি।”
তা হলেও অভিযুক্ত মন্ত্রীকে থানা উদ্বোধনে ডাকায় অবশ্য পুলিশ সুপারের আপত্তি নেই। তিনি বলেন, “এই ফাঁড়িতেই মন্ত্রী হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ঠিকই। তার তদন্তও চলছে। কিন্তু সেই সব অভিযোগ এখনও আদালতে প্রমাণিত হয়নি। তাই তাঁকে থানা উদ্বোধনে ডাকাই যায়।” পুলিশ সুপারের দাবি, “তা ছাড়া, তিনি কোনও নির্দিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি মাত্রই নন। তিনি রাজ্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। সেই কারণেই তাঁকে ডাকা হয়েছে।”
মন্ত্রী হুমায়ুনের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগের তদন্ত চলছে, তা ঠিক মতোই চলবে বলেও দাবি করেছেন পুলিশ সুপার। তাঁর কথায়, “মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগের চার্জশিট হয়ে গিয়েছে। সেগুলি আর প্রভাবিত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অন্য তদন্তের ক্ষেত্রেও পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করবে।” মন্ত্রী সুব্রত সাহার কথায়, “সরকারি অনুষ্ঠানে একজন মন্ত্রীকে ডাকা যেতেই পারে, বিশেষত তিনি যখন স্থানীয় বিধায়কও।”
মন্ত্রী হুমায়ুনের বিরুদ্ধে বহরমপুর থানাতেও বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ১৭টি মামলার মধ্যে ৯টি মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। সব ক’টিতেই বেকসুর খালাস পেয়েছেন হুমায়ুন। অনুপমবাবু অবশ্য রেজিনগর থানায় যোগ দিয়েছেন এপ্রিলে। তাঁর আমলে কেবল শক্তিপুর ফাঁড়িতে ২৩ ডিসেম্বরে মন্ত্রী হুমায়ুনের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি সংস্থার এক কর্মীকে ফোন করে গালিগালাজ করার অভিযোগও দায়ের হয়েছে। তবে এই ফাঁড়িতেই তার আগে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৬ মার্চ বেলডাঙা-২ ব্লকের তৎকালীন বিডিও রজত সাইনিকে খুনের চেষ্টা ও সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগও করা হয়েছিল। রয়েছে বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির দু’জন মহিলা সদস্য মানোয়ারা বেগম ও আসরাফুন বিবিকে অপহরণের মতো গুরুতর অভিযোগও। |