ইডেনের প্রেসিডেন্টস বক্সে কি না গজল চলছে! গায়কের নাম? উস্তাদ রশিদ খান। ‘রাগ’-এ বিভোর হয়ে মাথা নাড়ছেন যিনি, তিনি পাক বোর্ডের চেয়ারম্যান। ভদ্রলোকের নামজাকা আশরফ!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএবি প্রেসিডেন্টের অ্যান্টিচেম্বারে ঠায় বসে। কিছুতেই চেয়ার ছেড়ে মাঠে যাবেন না। সিএবি কর্তারা বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত। কিন্তু নিজের ‘স্টান্সে’ অনড় মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, আইপিএল দেখতে এসেছিলেন আর কেকেআর হেরেছিল। এ বার মাঠে ঢুকলে ভারতও না হেরে যায়! |
লাঞ্চের আগে পর্যন্ত খুঁতখুঁত করছিলেন সুনীল গাওস্কর। ‘লিটল মাস্টারে’র ভয় ছিল, লাঞ্চের ফাঁকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হলে গ্যালারি ফাঁকা থাকতে পারে। ক’জন আর দেখবে দু’দেশের প্রাক্তনদের হাত নাড়া? কিন্তু উত্তুঙ্গ আবেগের বহর দেখে আশ্চর্য গাওস্কর। দেখেশুনে সিএবি কর্তাদের কাছে শেষে গাওস্করের স্বীকারোক্তি, “আমিই ভুল ছিলাম। আর সেটা মেনে নিতে কোনও আফসোস নেই।”
থাকার কথাও নয়।
|
একই ফ্রেমে ভারত-পাক ক্রিকেটের তিন প্রজন্মকে ইডেনে উঠে আসতে কবে দেখেছে বাঙালি? কবে দেখা গিয়েছে, একই জিপে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কপিল-গাওস্কর? কপিল তো আবার গ্যালারির দিকে ফুলও ছুড়ে দিলেন। ম্যাচে ভারত জেতেনি। কাকতালীয় হলেও মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কাই সত্যি হল। কিন্তু মহাযুদ্ধের মঞ্চে সম্প্রীতির ‘ম্যাচ’ জিতে নিল ক্রিকেট।
বিকেল পাঁচটাতেও ইডেন-জ্বর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না ভিভিএস লক্ষ্মণ। ক্লাবহাউসে ইডেনের ‘নিজাম’-এর আচ্ছন্ন গলা, “অবসরের পরে এই প্রথম এলাম। শুধু কলকাতার দর্শকদের জন্যই এখানে বারবার আসা যায়!” |
স্মৃতির সরণি ধরে হাঁটছেন অজিত ওয়াড়েকর। বয়স হয়েছে, তবু মনে আছে ইডেনে তাঁর সুখস্মৃতির মুহূর্ত। “কত ভাল ভাল ইনিংস খেলেছি এখানে। কত বন্ধুর সঙ্গে আবার দেখা হয়ে গেল। সব মনে পড়ে যাচ্ছে।” ‘রিইউনিয়ন’ বলতে যা বোঝায়!
ওয়াঘার এপার-ওপার মিলিয়ে উনিশ প্রাক্তন। সাত-সাতটা জিপ। একটায় শুধুই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মাঠে ‘ভিভিএস..ভিভিএস’ চিৎকার মিলিয়ে যেতে না যেতেই সেই চেনা দু’টো শব্দের শব্দব্রহ্ম। ‘দাদা..দাদা।’ সাধে পরে আর ওয়াসিম আক্রম বলে ফেললেন, “দিল ভর গয়া’? কপিলও বা কেন বলবেন, “এ জিনিস একমাত্র ইডেনই পারে!”
|
সংবর্ধনার বিরল মুহূর্ত। ছবি: উৎপল সরকার, শঙ্কর নাগ দাস |