নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে বন দফতরকে একটি জমির মালিকানা সংক্রান্ত রিপোর্টের জেরে কাটা পড়েছে ৫০ টি শাল গাছ। অভিযোগ, ভূমি দফতরের একাংশ আধিকারিক ও কর্মী সঙ্গে যোগসাজশেই ভুল রিপোর্ট দিয়ে বন দফতরের থেকে গাছগুলি কাটার ছাড়পত্র বার করা হয়। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া সর্দার পাড়া এলাকায়। তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা ভূমি আধিকারিক নরেন্দ্র সিংহ-সহ ভূমি দফতরের ৩ কর্মীকে শোকজ করেছেন জলপাইগুড়ি জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তন্ময় চক্রবর্তী। অভিযুক্তদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শোকজের উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তন্ময়বাবু বলেন, “আমরা ভুল সংশোধন করে বন দফতরকে অবিলম্বে কাটা গাছগুলি বাজেয়াপ্ত করতে বলেছি। দফতরের যে কর্মীরা ভুল রিপোর্ট দিয়েছিল, তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে।” এই বিষয়ে মহকুমা ভূমি আধিকারিক নরেন্দ্রবাবু শুধু বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। তবে শোকজের কোনও চিঠি পাইনি। আমাদের কাছে যে নথিপত্র ছিল তা দেখেই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে সর্দার পাড়া বাসিন্দা এক ব্যক্তি এলাকারই একটি জমির ৫০টি শাল গাছ কাটতে চেয়ে বন দফতরের কাছে আবেদন জানান। বন দফতরের থেকে সেই জমির মালিকানা কার তা জানতে চেয়ে মহকুমা ভুমি দফতরের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়। ভুমি দফতর থেকেও লিখিত রিপোর্টে জানিয়ে দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই ওই জমির মালিক। বন দফতর সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই গাছ কাটার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সেই মত গত সপ্তাহেই রাতারাতি গাছ কেটে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। একসঙ্গে ৫০টি গাছ কাটার পরেই এলাকার বাসিন্দারা সবুজায়ন কমিটি নামে একটি কমিটি তৈরি করে প্রতিবাদ শুরু করেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা জেলা ভুমি ও ভুমি সংস্কার আধিকারিককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এর পরেই জানা যায়, মহকুমা দফতর থেকে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল তা সঠিক নয়। তিনজনকে সঙ্গে সঙ্গে শোকজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বন দফতরের বৈকুন্ঠপুর বিভাগের ডিএফও ধর্মদেব রাই বলেন, “ভূমি দফতরের রিপোর্টের ভিত্তিতেই গাছ কাটার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। গাছ কাটতে হলে যে যে নিয়ম পালন করতে হয়, সেগুলিও করা হয়। তবে, এখন জমির মালিকানা নিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে আপত্তি তোলায় কাটা গাছগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।” বেলাকোবা সবুজায়ন কমিটির তরফে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয়েছে। কমিটির সভাপতি সুশীল রায় বলেন, “ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে বেআইনিভাবে গাছ কাটা হয়েছে। দোষীদের শাস্তি না দেওয়া হলে জেলাশাসকের দফতরের সামনে আন্দোলন করব।” অভিযুক্ত পরিবারের পক্ষে নবীন রায়ে’র দাবি, “বেআইনি কোনও কাজ করা হয়নি। নিজেদের জমিতে আইন মেনে গাছ কাটা হয়েছে। সমস্ত কাগজপত্র আমাদের কাছে রয়েছে।” |