চাষের জমিতে জলের সমস্যা হতে পারে, এই অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ করে দিলেন কৃষকেরা।
বলাগড়ের ডুমুরদহ-নিত্যানন্দপুর ১ পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সাড়ে ৫ কিলোমিটার ওই রাস্তাটি দীর্ঘ দিন ধরেই বেহাল। হুগলি জেলা পরিষদের তরফে এর আগে একাধিক বার রাস্তা তৈরির টেন্ডার ডাকা হলেও কোনও ঠিকাদার তাতে সাড়া দেয়নি। চাষের জমির পাশে কাজ করতে সমস্যার আশঙ্কা ছিল বলেই কেউ এগিয়ে আসেনি বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পঞ্চায়েতের একাংশ।
সম্প্রতি হুগলির তৃণমূল সাংসদ রত্না দে নাগের উদ্যোগে অসম লিঙ্ক রোড থেকে সাধুবাঙালি গ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটি তৈরিতে এগিয়ে আসেন এক ঠিকাদার। নভেম্বর মাসে শুরু হয়ে কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। পিচঢালা রাস্তাটি হবে ১২ ফুট চওড়া। দু’পাশে আরও ৬ ফুট করে ফুটপাথ রাখার কথা। কিন্তু তাতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। চাষের জমিতে জলের সমস্যা দেখা দেবে, এই যুক্তিতে কয়েক দিন আগে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন চাষিরা। বৃহস্পতিবার থেকে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। |
রাস্তাটি দাদপুর, চণ্ডীগাছা, শ্রীকান্ত, কদমডাঙা, সাধুবাঙালি গ্রামের উপর দিয়ে গিয়েছে। কৃষিপ্রধান গ্রামের কয়েকশো চাষির জমি আছে রাস্তার দু’ধারে। রাস্তা তৈরি হলে তাঁদেরও উপকার হবে সে কথা মেনে নিলেও চাষিদের বক্তব্য, রাস্তা তৈরির আগে ২৫ জনের একটি কমিটি তৈরি হয়েছিল। তাতে কোনও কৃষক প্রতিনিধিকে সামিল করা হয়নি। কিছু ‘স্বার্থান্বেষী’ মানুষ রাস্তা নির্মাণের কাজ দেখভাল করছেন। নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন চাষিরা। তাঁদের বক্তব্য, রাস্তা তৈরির জন্য দু’পাশে ৪-৭ ফুট গভীর গর্ত করা হয়েছে। ফলে চাষের জমি জলধারণের ক্ষমতা হারাবে। বড়সড় ক্ষতি হবে চাষের কাজে। স্থানীয় কৃষক সুকুমার দাস বলেন, “আমার ২ একর জমির প্রায় ২০০ ফুট বরাবর মাটি কেটে গর্ত করা হয়েছে। ফলে জমিতে দেওয়া জলের প্রায় সবটাই ওই গর্তে গিয়ে পড়ছে। রাস্তা তৈরি হলে আমাদের খুবই উপকার হবে। তবে জমির ক্ষতি আমরা মেনে নিতে পারছি না। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” আর এক কৃষক অশোক দাসের কথায়, “আমার ৪৫ শতক জমিতে প্রায় দেড়শো ফুট লম্বালম্বি মাটি কাটা হয়েছে। রাস্তা তৈরি হোক, এ আমাদের দীর্ঘ দিনের চাহিদা। তা বলে কৃষিপ্রধান এলাকায় চাষের কাজের ক্ষতি করে রাস্তা তৈরি করলে কী ভাবে তা মেনে নেওয়া সম্ভব?” প্রতিবাদ করায় তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অশোক, সুকুমারেরা। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ রায় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বহু প্রতীক্ষার পরে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছিল। তবে রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে চাষের জমির ক্ষতি যাতে না হয়, তা-ও দেখা দরকার। কৃষকেরা আমাদের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তাঁদের বিক্ষোভে কাজ বন্ধও হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের তরফে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে সমস্যা জানানো হয়েছে।” বলাগড়ের বিডিও রঞ্জিত সেনগুপ্তের কথায়, “চাষিদের সঙ্গে কথা বলে মীমাংসার চেষ্টা হচ্ছে।” |