দিল্লি গণধর্ষণের আতঙ্ক এখনও কাটেনি। এর মধ্যেই প্রথমে কলকাতা। তার দু’দিন পরে হাওড়া। দিনেদুপুরে রাস্তায় শ্লীলতাহানির ঘটনা দেখল গঙ্গার দু’পাড়ের দুই শহর।
জনবহুল রাস্তায় নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে প্রাণপণে ছুটছেন বছর ষোলোর এক কিশোরী। তাঁকে ধাওয়া করছে এক যুবক। এক সময় কিশোরীকে ধরেও ফেলে সে। দু’জনেই রাস্তায় পড়ে যায়। আক্রান্ত কিশোরী তখন চিৎকার করতে শুরু করেছেন। সেই ডাকে এগিয়ে আসেন এলাকার দোকানদার এবং পথচলতি লোকজন। বেগতিক দেখে যুবকটি তখন পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু কিশোরী তাকে জাপটে আটকে রাখেন। শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যুবক। তাকে পুলিশের হাতে দেওয়া হয়।
সময়, বৃহস্পতিবার সকাল। ঘটনাস্থল, হাওড়ার মালিপাঁচঘরা থানা এলাকায় তিরুপতি জুটমিলের সামনে শিবগোপাল ব্যানার্জি লেন।
দু’দিন আগে কলকাতার বউবাজার থানা এলাকায় বো স্ট্রিটে প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে। রাস্তার উপরেই এক তরুণীর শ্লীলতাহানি করে দুই যুবক। সে দিন কিন্তু তরুণীর চিৎকারে কেউ তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। সাহসিনী সেই তরুণী নিজেই এক জনকে ধরে থানায় নিয়ে যান। এ দিন কিশোরীও সাহসের সঙ্গেই রুখে দাঁড়ান। তবে তাঁকে সাহায্যের জন্য এলাকার মানুষ এগিয়ে আসেন। শিবগোপাল ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দারা তাই বলছেন, হাওড়া দেখিয়ে দিল এই ব্যাপারে অন্তত তারা কলকাতার থেকে এগিয়ে। |
হাওড়া শহর পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম প্রহ্লাদ সিংহ (২৪)। তার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করে কিশোরী নিজেই। তার ভিত্তিতেই প্রহ্লাদকে গ্রেফতার এবং মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, বিহারের সিওয়ানের বাসিন্দা প্রহ্লাদ। তার বাবা ঘুসুড়ির একটি কারখানায় চাকরি করেন। কয়েক বছর ধরে সে তার বাবার কাছেই রয়েছে। এই ঘুসুড়িতেই এক শিক্ষকের কাছে সপ্তাহে দু’দিন পড়তে আসেন লিলুয়ার বাসিন্দা ওই কিশোরী। তিনি আনন্দনগর কালীতলায় একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়েন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বেশ কিছু দিন ধরেই প্রহ্লাদ তাকে উত্যক্ত করছিল। এ দিন তা চরমে ওঠে। সকালে যখন কিশোরী পড়ে বাড়ি ফিরছিল, তাকে দেখতে পেয়ে প্রহ্লাদ সঙ্গে সঙ্গে ধাওয়া করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, প্রথমে ভয়ে ছুটতে শুরু করলেও হামলার মুখে রুখে দাঁড়ান ওই কিশোরী।
লোকজন যখন জড়ো হতে শুরু করে তখন প্রহ্লাদ কিশোরীর হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে। সে কথা জানিয়ে পুলিশের বক্তব্য, সেই সময় কিন্তু বিচলিত না হয়ে ওই কিশোরী প্রহ্লাদের হাত শক্ত করে ধরে রাখেন। পরে স্থানীয় লোকজন প্রহ্লাদকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে যায়। এলাকার বাসিন্দা তথা ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী অমিত সিংহ নামে এক যুবক বলেন, “মেয়েটি ভয় না পেয়ে ছেলেটিকে জাপটে ধরে রেখে ছিল বলেই ও পালাতে পারেনি। আমাদের তাই দুষ্কৃতীকে ধরতে সুবিধা হয়ে যায়।” সকলেই এক বাক্যে সাধুবাদ দেন সাহসিনী কিশোরীকে।
এই ঘটনায় শুধু প্রহ্লাদকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েই ক্ষান্ত হননি স্থানীয় মানুষ, পরে তাকে জনতার হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভও দেখান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাকে মালিপাঁচঘরা থানায় নিয়ে যাওয়ার আগেই স্থানীয় এক দল যুবক থানার সামনে জড়ো হন। তখন থেকেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। দুপুরে অভিযুক্ত যুবককে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় সেই বিক্ষোভ চরমে ওঠে। পুলিশ তাকে থানা থেকে বার করতেই ক্ষিপ্ত জনতা চড়াও হয় তার উপরে। তাকে কিল, চড় মারতে থাকে। পুলিশ অবশ্য মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই ঘটনার পরে কলকাতার মতো হাওড়া শহরেও মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এলাকার বাসিন্দারা জানতে চাইছেন, মালিপাঁচঘরার মতো জনবহুল এলাকায় কী ভাবে এক কিশোরীকে হেনস্থা করতে সাহস পেল ওই যুবক? দিল্লির ঘটনার পরেও কি হাওড়া পুলিশের টনক নড়েনি? না হলে এমন ঘটনা ঘটে কী করে? জবাবে হাওড়া শহর পুলিশের ডিসি নিশাত পারভেজ পরোক্ষে পুলিশ কম থাকাকেই কারণ বলে উল্লেখ করেন। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের যত পুলিশ রয়েছেন, তাঁদের দিয়ে সাধ্যমতো আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়।” আরও জানান, “এ দিন খবর পেয়ে পুলিশই ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবককে ধরে থানায় নিয়ে আসে। কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষার পরে ওই যুবকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়ের হয়েছে।” |