পাকিস্তানে স্বাস্থ্যকর্মীরা পুনরায় আক্রমণের মুখে। এ বারও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশে তালিবান জঙ্গিরা সাত জন স্বাস্থ্যকর্মীকে গুলি করিয়া হত্যা করিয়াছে, যাঁহাদের মধ্যে ছয় জনই মহিলা। তাঁহারা এলাকার বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাও বটেন। ফলে ইঁহাদের হত্যা করিয়া তালিবান এক ঢিলে দুইটি পাখি মারিবার চেষ্টা করিয়াছে। এক, পোলিয়ো, গুটিবসন্তের মতো মারণ সংক্রামক ব্যাধিগুলির বিরুদ্ধে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংগ্রামকে আঁতুড়েই ধ্বংস করিয়া দেওয়া। দুই, শিক্ষিকাদের হত্যা করিলে বালিকা বিদ্যালয় তথা স্ত্রী-শিক্ষাকেও নিরুৎসাহিত করা সহজ হয়। ফলে তালিবান তথা দেওবন্দি মাদ্রাসায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মোল্লাদের প্রচার করা অন্ধ তামসিকতার অতলান্তিক গহ্বরে পাকিস্তানের জনসাধারণকে নিমজ্জিত রাখা যায়।
এই কারণেই গত মাসেও তালিবান জঙ্গিরা একটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য-অনুদান প্রকল্পের ৯ জন মহিলা কর্মীকে নির্বিচার গুলিচালনায় হত্যা করিয়াছিল। পাকিস্তান বিশ্বের সেই হাতে-গোনা হতভাগ্য দেশগুলির অন্যতম, যেখানে প্রতি বছর পোলিয়োর আক্রমণে তিন শতাধিক শিশু মারা যায়, পঙ্গু হইয়া যায় আরও অনেকে। গুটিবসন্তের মতো রোগে মৃত শিশুদের সংখ্যাও সেখানে রীতিমত উদ্বেগজনক। পাকিস্তানে তালিবানদের এই ভূমিকা সরাসরি বর্বরতার। ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রেও পোলিয়ো বা অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে অভিযানে বাধা দেওয়ার উদ্যোগ দেখা গিয়াছে, কিন্তু ভারতে প্রগতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পক্ষেও সংশ্লিষ্ট সমাজের বহু মানুষ সমাবেশিত, তাই গোঁড়াদের বাধা বা আপত্তি অগ্রাহ্য করিয়া মায়েরা শিশুদের পোলিয়ো খাওয়াইতে শিবিরে ছোটেন। ভারত যে আজ কার্যত পোলিয়োমুক্ত, তাহার কারণও এই সচেতনতা। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের সরকার যদি পোলিয়ো রোধে অনমনীয় না হয়, যদি তালিবানের মতো সংবিধান-বহির্ভূত শক্তিকে অবাধে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের এ ভাবে হত্যা করিতে দেওয়া হয়, তবে আশঙ্কা হয়, এই ব্যাধি কেবল পাকিস্তানের ভৌগোলিক সীমার মধ্যেই আটকাইয়া থাকিবে না, সমগ্র উপমহাদেশেই বিপজ্জনকভাবে ছড়াইয়া পড়িবে।
তালিবানরা প্রচার করিতেছে, পোলিয়ো, গুটিবসন্ত প্রতিষেধক ঔষধ প্রয়োগকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা আসলে পাক সরকারের, বস্তুত সিআইএ-র মতো পশ্চিমী গুপ্তচর সংস্থার চর। এমন চরেরাই নাকি ওসামা বিন লাদেনের গোপন ডেরার সংবাদ সংগ্রহ করিয়া তাহার হত্যার সম্ভাবনা তৈয়ার করিয়াছিল, বর্তমানেও এই স্বাস্থ্যকর্মীরা এ ধরনের অপকর্মেই নিরত। অপপ্রচারের জবাব পাক সরকারকেই দিতে হইবে, যেমন কঠোরতার সহিত মোকাবিলা করিতে হইবে আগ্নেয়াস্ত্রসজ্জিত এই জঙ্গি বর্বরদের। আজ যে তালিবান জঙ্গিরা এত বেপরোয়া হইয়াছে, এমন নির্বিচার বন্দুকবাজি করিয়া সমগ্র সুশীল সমাজকে ত্রস্ত রাখিয়াছে, তাহার জন্য বহুলাংশে দায়ী পাক সেনা কর্তৃপক্ষের, বিশেষত তাহার গোয়েন্দাচক্র আইএসআইয়ের প্রশ্রয় এবং সাহায্য। ইহা পাকিস্তানের পক্ষেও ভয়ঙ্কর। |