|
|
|
|
|
ব্রহ্মপুত্র মেল |
চলন্ত ট্রেনে ধর্ষণের চেষ্টা, ঝাঁপ তরুণীর
নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা ও কলকাতা |
|
দিল্লিতে গণধর্ষণের পরে প্রশ্ন উঠেছে, রাতে চলন্ত বাসে মেয়েরা কি নিরাপদ? বৃহস্পতিবার দেখা গেল, ভরবিকেলে ট্রেনের বাতানুকূল কামরার মধ্যেও নিরাপত্তা নেই মেয়েদের।
অভিযোগ, এ দিন দিল্লিগামী ব্রহ্মপুত্র মেলে শৌচাগারের কাছে এক তরুণীকে মেঝেয় ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা করে এক যুবক। যার হাত থেকে বাঁচতে শেষে চলন্ত ট্রেন থেকেই ঝাঁপ দেন ওই তরুণী। এই ঘটনায় পরে দুই অভিযুক্তকে পাকড়াও করে রেল পুলিশের হাতে তুলে দেন ওই কামরার যাত্রীরাই। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা ওই তরুণীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দিল্লির গণধর্ষণের পরে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কিন্তু তাতে কি আদৌও লাগাম পড়েছে এই ধরনের ঘটনায়? বারাসত, কলকাতার বো ব্যারাক, কসবা এবং বৃহস্পতিবারে হাওড়ার ঘটনায় এই প্রশ্ন ক্রমেই বড় আকার নিচ্ছে। এর মধ্যেই ব্রহ্মপুত্র মেলে এই ধর্ষণের চেষ্টা। তরুণীর উপরে চড়াও হওয়া ওই যুবকের পরিচয় নিয়ে ধন্দ রয়েছে। পুলিশের একাংশ বলছে, ওই যুবক পুলিশ বা সামরিক বাহিনীর লোক হতে পারে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি রক্ষকই ভক্ষক? আর ওই যুবকের হাত থেকে বাঁচতে মরিয়া হয়ে যখন পরপর কামরা পার হয়ে ছুটছেন তরুণী, তখন কোথায় গেল রেলের পাহারা?
এই সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য এ দিন অবশ্য কাউকে পাওয়া যায়নি। পুলিশের দাবি, পুরো ঘটনাটিই তারা জেনেছে পটনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর জখম ওই তরুণী এবং ট্রেনের যাত্রী বা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে।
যেটুকু তারা জানতে পেরেছে, তাতেই কিন্তু উঠে এসেছে ভয়াবহ এই ছবি। ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের আরা স্টেশনের কাছে। রেল ও পুলিশ সূত্রে খবর, ওই তরুণী উত্তরবঙ্গ থেকে ট্রেনে ওঠেন। তিনি ছিলেন সংরক্ষিত কামরার যাত্রী। যাচ্ছিলেন দিল্লি। পটনা স্টেশন পেরোনোর পরে আসন থেকে উঠে শৌচাগারে যাচ্ছিলেন। তখনই তিনি দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়েন বলে অভিযোগ। কোনও কোনও সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, আরার কাছে জগজীবন হল্টে যখন ট্রেনটি ঢোকে, তখনই ঝাঁপ দেন তরুণী। গতি কম থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। তবে মাথায় ও পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।
তত ক্ষণে অবশ্য হামলাকারীকে ধরে ফেলেছেন কামরার যাত্রীরা। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, সংরক্ষিত কামরায় খুব বেশি যাত্রী ছিলেন না। এক মহিলা ও তাঁর পিছনে এক যুবককে ছুটতে দেখে প্রথমে তাঁরা কী ঘটছে বুঝতে পারেননি বলেই তদম্তকারীদের ধারণা। তবে মহিলা ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পরে যাত্রীরা অভিযুক্তকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
ঘটনার কয়েকটি দিক নিয়ে অবশ্য এখনও ধন্দ রয়েছে। প্রথমত, ওই তরুণীর উপরে ক’জন চড়াও হয়েছিল, এক জন না দু’জন? দ্বিতীয়ত, যারা চড়াও হয়েছিল, তাদের পরিচয় কী? প্রথম প্রশ্নের জবাবে বিহারের রেল পুলিশের এডিজি পরেশনাথ রায় জানান, “যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” বক্সার স্টেশনে ওই দু’জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের বক্তব্য, এক জন মেয়েটির সঙ্গে অভব্য আচরণ করে এবং তাঁর পিছু নিয়ে তাঁকে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ। এ ছাড়া আরও এক জন যাত্রী ট্রেনের শৌচাগারের পাশে দাঁড়িয়ে গোটা দৃশ্যটা দেখেছিলেন। ওই ব্যক্তি অবশ্য মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে এডিজি পরেশনাথ রায় অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি। যদিও কোনও কোনও মহলের বক্তব্য, ধৃত দু’জন সম্ভবত নিরাপত্তারক্ষীদেরই কেউ এবং তারা মদ্যপ অবস্থায় ছিল।
মহিলা ঝাঁপ দেওয়ার পরেই ট্রেনের মধ্যে হইচই শুরু হয়ে যায়। খবর যায় রেলের কন্ট্রোলেও। আরা স্টেশনের স্টেশনমাস্টার, রেল পুলিশ এবং রেল সুরক্ষা বাহিনী মিলে মহিলাকে উদ্ধার করে। রেল লাইনের পাশে জখম অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। তাঁকে প্রথমে আরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পটনা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে বক্সার স্টেশনে রেল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও দেখান যাত্রীরা।
হাজিপুরের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক অমিতাভ প্রভাকর বলেন, “ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে নেমে জখম হলেও মহিলা জ্ঞান হারাননি। রক্তাক্ত অবস্থায় রেল লাইনের পাশে বসার চেষ্টা করছিলেন।” মহিলার পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। |
|
|
|
|
|