এ বার বর্ষবরণের রাতের নিরাপত্তা নিয়ে অতিরিক্ত সাবধানতার কথা জানিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সেই রাতেই বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার অদূরে একটি রেস্তোরাঁর সামনে এক যুবককে দু’দফায় মারধর করে, পেটে ছুরি চালিয়ে পালিয়ে গেল ছয় দুষ্কৃতী। কিছু টেরই পেল না পুলিশ। বেশ কিছুক্ষণ পরে অবশ্য গোলমালের আঁচ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল তারা। কিন্তু তখনও পুলিশ জেনে আসতে পারেনি, ঠিক কী ঘটেছে। অবশেষে ঘটনার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে হাসপাতাল মারফত খবর যায় পুলিশের কাছে, যেখানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ততক্ষণে ভর্তি ওই যুবক। এমনই হাল সল্টলেকের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার।
পুলিশ জানায়, সল্টলেক স্টেডিয়ামের দুই ও এক নম্বর গেটের মাঝে একটি গাড়ি পরীক্ষাকেন্দ্র এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেখানেই ৩১ ডিসেম্বর রাতে বারোটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। এনআরএসে চিকিৎসাধীন ওই যুবকের নাম বাবুলাল গুপ্ত (২৪)। তাঁর বাড়ি ফুলবাগানের কাদাপাড়ায়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, যুবকের অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসকেরা। ঘটনার পরে তিন দিন কেটে গেলেও ধরা পড়েনি কেউ। এর জেরে স্বভাবতই ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সল্টলেকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।
বাবুলাল জানান, স্টেডিয়ামে ওই রেস্তোরাঁর পাশে তাঁর মোবাইলের দোকান আছে। রাত বারোটা নাগাদ দোকানের সামনে দুই যুবক এক ব্যক্তিকে মারধর করছিল। বাবুলাল বলেন, ‘‘মারপিট দেখে ভয় পেয়েছিলাম। তাই নিরাপত্তারক্ষীকে বলি, দোকান বন্ধ করে দিতে।” |
অভিযোগ, শুধু এই অপরাধেই ওই দুই যুবক বাবুলালকে প্রথমে এক দফা মারধর করে চলে যায়। কিছু পরেই চারটি মোটরবাইকে করে জনা ছয়েক যুবককে নিয়ে ফিরে আসে ওই দুষ্কৃতীরা। ওই ছয় যুবক গেট টপকে ভিতরে ঢোকে। বাবুলালকে ঘিরে ধরে ফের বেদম মারধর করতে থাকে তারা। এর মধ্যে এক যুবক বলে, “জানিস আমরা কারা, দত্তাবাদের ছেলে।” আচমকাই এক জন বাবুলালের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে সে। চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। বাবুলাল বলেন, “আমার নাভির উপরের দিকে চাকু ঢোকায় ওরা। প্রথমে বুঝতে পারিনি। হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা হতে শুরু করে।”
বাবুলাল জানিয়েছেন, গোটা ঘটনাটি অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে যায়। ঘটনাস্থলের অদূরেই বাবুলালের কাকার দোকান। তাঁর সেই কাকা ছোটেলাল সাউ বলেন, “হঠাৎ এত কিছু হওয়ায় মাথা কাজ করছিল না। বাবুলালের পেট থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। পুলিশকে জানাতে গেলে দেরি হয়ে যাবে ভেবে বাবুলালকে সাইকেলে চাপিয়ে সল্টলেক সাবডিভিশন হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানকার চিকিৎসকেরা রেফার করে দেন। তখন এনআরএসে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয় ওকে। পুলিশ ভোরে এসেছিল।” পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতাল থেকে খবর যায় থানায়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিয়েই ব্যস্ত থাকে পুলিশ। এক বছর পার হল, কমিশনারেট করেও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। বর্ষশেষের রাতেও ঘটনাস্থলের কাছে টহলদারি ভ্যান কেন ছিল না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। বাসিন্দাদের সংগঠন ‘বিধাননগর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “নিরাপত্তার প্রশ্নে আমাদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে। নিরাপত্তার উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। অথচ থানার কাছেই এমন ভয়ঙ্কর একটি ঘটনা ঘটে গেল। পুলিশ টের পেল না। আমাদের একটিই দাবি, পুলিশ আরও সচেষ্ট হোক।”
পুলিশের দাবি, ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত যায় তারা। কিন্তু তার আগেই বাবুলালকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত তিনটের পরে এনআরএস হাসপাতাল থেকে পুলিশ খবর পায়। |