দেশের ভবিষ্যৎ গড়তে বিজ্ঞানের ভূমিকা কেমন হবে, বিজ্ঞানীদের কাছেই সে ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
প্রধানমন্ত্রী চান, বিজ্ঞানীরা দূরদ্রষ্টা হয়ে আগামী দিনে সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দিন। তিনি বলেন, “২০৩৫ সালে এ দেশে বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর সম্পদ আসবে কোথা থেকে? খাদ্য ও পুষ্টি, জ্বালানি ও পরিবেশ, জল ও পয়ঃপ্রণালী এবং সাধ্যের মধ্যে চিকিৎসার চাহিদা মেটানো যাবে কী ভাবে? এমন সব বড় বড় সমস্যা নিয়ে বিজ্ঞানীদের ভাবতে হবে।”
বৃহস্পতিবার কলকাতায় ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের শততম অধিবেশনে ‘ভারতের ভবিষ্যৎ নির্মাণে গবেষণার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনাচক্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই দেশের ভবিষ্যৎ সমস্যা নিয়ে তিনি বিজ্ঞানীদের পরামর্শ চান। বলেন, “এখানে আপনারা যাঁরা আছেন, যাঁরা বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর, তাঁদের বলছি, আমরা আপনাদের নেতৃত্ব ও পরামর্শ চাই। বলে দিন ভারতের ভবিষ্যৎ গঠনে বিজ্ঞান কী কী করতে পারে।” |
বিজ্ঞান কংগ্রেসে উপস্থিত গবেষকদের প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, মানুষের প্রগতির ইতিহাস হল বিজ্ঞানের আশীর্বাদেরই কাহিনী। বিজ্ঞানই হল যুগ বদলের কারিগর। সেই অর্থে বিজ্ঞান হল মানুষের প্রকৃত মুক্তিদাতা। বিজ্ঞানীদের তাঁদের দায়িত্বও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মনমোহন। তিনি বলেন, “আপনাদের ভেবে দেখতে হবে, বিজ্ঞানের আশীর্বাদের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে আমাদের সমাজ কি প্রস্তুত? এ চ্যালেঞ্জ নতুন নয়, সব যুগে সব দেশে মানুষকে লড়তে হয়েছে গতানুগতিক ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের মধ্যে যুক্তিবাদী চিন্তা প্রসারের কাজটিকেও বিজ্ঞানীদের পবিত্র কর্তব্য হিসেবে নিতে হবে।”
আলোচনাচক্রে অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি, পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রাক্তন প্রধান আর চিদম্বরম, কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন, ব্রিটিশ সরকারের প্রধান বিজ্ঞান উপদেষ্টা জন বেডিংটন, মহাকাশবিজ্ঞানী আর কস্তুরীরঙ্গন, রসায়নবিদ আর মাশেলকর এবং জীববিজ্ঞানী সমীর ব্রহ্মচারী।
রেড্ডি তাঁর ভাষণে টেনে আনেন জওহরলাল নেহরু থেকে অমর্ত্য সেনের দর্শন। বলেন, “দৈনিক আয় দু’ডলারের কমকে দারীদ্রসীমা ধরলে ভারতের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ তার নীচে। সুতরাং, পশ্চিম থেকে আমদানি করা বিজ্ঞানের কোন কোন প্রযুক্তি তাঁদের কাজে লাগবে, তা আমাদের ভাবতে হবে।” এ প্রসঙ্গে মন্ত্রীর মন্তব্য, “পশ্চিমের যে প্রযুক্তি আপামর জনগণের উপকারে লেগেছে, তা হল মোবাইল যোগাযোগ।”
স্বামীনাথন বক্তৃতায় বিজ্ঞানীদের স্মরণ করিয়ে দেন, ঠিক ৭০ বছর আগে এই বাংলা পড়েছিল চরম দুর্ভিক্ষের কবলে, অনাহারে মারা গিয়েছিল ২০ লক্ষ মানুষ, কলকাতা শহরের পথঘাট দেখেছিল শবের মিছিল। আর আজ থেকে ঠিক ৬০ বছর আগে জেমস ওয়াটসন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক বুঝে ফেলেছিলেন ডিএনএ-র গঠন। অনাহার থেকে মানুষকে বাঁচাতে জিন প্রযুক্তি এখন সারা পৃথিবী জুড়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। ভারতের সমৃদ্ধিতেও জিন গবেষণা আশীর্বাদ হয়ে আসুক। সমীর ব্রহ্মচারী বলেন, “ভারতে ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হোক তরুণ ফেসবুক প্রজন্মের হাতে।” |