|
|
|
|
বিজ্ঞান কংগ্রেস |
পরমাণু বিদ্যুতের পক্ষেই
ফের সওয়াল মনমোহনের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
|
আবেগ ও ভয় দিয়ে নয়, পরমাণু বিদ্যুতের মতো জটিল বিষয়ের নিষ্পত্তির জন্য বিতর্ক, বিশ্লেষণ এবং সম্যক জ্ঞানের প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বৃহস্পতিবার শততম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ ভাবেই পরমাণু বিদ্যুতের পক্ষে সওয়াল করলেন মনমোহন। পরিবেশ দূষণের আশঙ্কায় মমতা বরাবরই পরমাণু বিদ্যুতের বিরোধী। এ দিন নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নাম না করে মমতাকেই বিঁধলেন বলে মনে করছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে বিজ্ঞান কংগ্রেসের ১০০তম অধিবেশনের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন-সহ অন্যরা। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জিন-পরিবর্তিত খাদ্য, পরমাণু বিদ্যুৎ, মহাকাশ গবেষণার মতো জটিল বিষয়ের নিষ্পত্তি বিশ্বাস, আবেগ এবং ভয় দিয়ে হবে না। বরং যথাযথ বিতর্ক, বিশ্লেষণ এবং সম্যক জ্ঞানের প্রয়োজন। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই সব বিষয়কে অনুধাবন করা বিজ্ঞানের মূল বিষয়গুলি বোঝার মতোই জরুরি।”
অবশ্য এ বারই প্রথম নয়, এর আগেও মমতার সামনে পরমাণু বিদ্যুতের পক্ষে সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১১-র অগস্টে পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুরে প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে দেয় তৃণমূল সরকার।
তার কয়েক দিনের মধ্যে কলকাতায় ‘সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে’র হীরকজয়ন্তী বর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মনমোহন বলেন, “নির্মল এবং পরিবেশ-বান্ধব বিদ্যুৎ হিসেবে পরমাণু বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই আমি মনে করি।”
বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, সি ভি রামন-সহ বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের নাম উঠে এসেছে বারবার। পাশাপাশি দেশে বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আক্ষেপ শোনা গিয়েছে রাষ্ট্রপতির গলায়। প্রণববাবু বলেন, “তিরাশি বছর আগে সি ভি রামন পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার পরে বিজ্ঞান গবেষণায় নোবেল আসেনি ভারতে।” এখনই একটা সময়সীমা বেঁধে ফের নোবেল-জয়ের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে আর্জি জানান রাষ্ট্রপতি।
এ দিনের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন ‘বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নীতি’ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে জানানো হয়েছে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় দ্বিগুণ করতে চায় কেন্দ্র। এই কাজে বেসরকারি বিনিয়োগকেও স্বাগত জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ দিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০২০ সালের মধ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার নিরিখে ভারতকে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের অন্যতম করে তোলাই এই নীতির লক্ষ্য। এ জন্য গবেষণায় আরও বেশি বেসরকারি বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।”
বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে মনমোহন এ দিন বারবারই বেসরকারি বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “সরকারের সাহায্যে চলা গবেষণার পাশাপাশি বেসরকারি গবেষণাগারেও কাজ হওয়া জরুরি।” বস্তুত, প্রতি বছর বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে বেসরকারি উদ্যোগকে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। এ বারও ব্যতিক্রম নেই। কিন্তু বিজ্ঞান কংগ্রেসের সম্মেলনে বাণিজ্য ও শিল্পমহলকে কার্যত ব্রাত্য রেখে বেসরকারি বিনিয়োগের ডাক কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয়ে বিজ্ঞানীরাই। |
|
|
|
|
|