পেস্ট্রি, প্যাটিস আর পিৎজার ঠেলায় পিঠেপুলিকে কার্যত ভুলতে বসেছে শহর-মফঃসলের তরুণ-তরুণীরা। বাঙালির খাদ্যতালিকায় সেই স্বাদকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টায় গত রবিবার থেকে কাটোয়া শহরের শেষ প্রান্তে আদর্শপল্লি স্কুলের মাঠে শুরু হয়েছে পিঠেপুলি উৎসব। চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।
এই মেলাকে ঘিরে মেতে উঠেছেন আদর্শপল্লি এলাকার বাসিন্দারা। শীতের দুপুরে মিঠে রোদ গায়ে মেখে বিনা পারিশ্রমিকে মেলার জন্য পিঠে তৈরি করছেন বাড়ির মহিলারা। পেঁয়াজকুলি, ডোবা পিঠে (মালপোয়ার মত দেখতে), দুধ পিঠে, চষি পিঠে (চালগুঁড়োকে ছোট ছোট মণ্ড বানিয়ে দুধের ভিতর চুবিয়ে রাখা হয়), পুলি পিঠে মেলায় বিক্রির জন্য তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া চিরাচরিত ভাজা পিঠে, সেদ্ধ পিঠে, পাটিসাপটা-সহ প্রায় এগারো রকম পিঠে তো বিক্রি হচ্ছেই। পিঠের স্টল ছাড়াও অন্য মেলার মতো কুটির শিল্প, হস্তশিল্পের স্টলও রয়েছে। বিভিন্ন রকম ‘রাইড’ রয়েছে। আছে প্রতি দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও। |
আদর্শপল্লি এলাকার যুবকেরা পিঠেপুলি উৎসবটির নাম রেখেছেন ‘স্পন্দন ও উত্তরণ’। এ বার মেলার তিন বছর। রবিবার সন্ধ্যায় রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, বস্ত্র এবং ভূমি দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ মেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময়ে প্রায় ৩০ রকম পিঠের প্রদর্শনী হয়। যার মধ্যে মেলার দর্শকদের একাংশ ভাপা পিঠে, চিকেন পিঠের স্বাদগ্রহণ করেন। স্বপনবাবু বলেন, “পিঠের জন্য আদর্শ হল ঢেঁকি ভাঙা চাল। আজকের দিনে ঢেঁকি ভাঙা চাল হারিয়ে যাচ্ছে। তাই ঢেঁকি ভাঙা চাল প্যাকেট করে বিক্রির উদ্যোগ চলছে। প্রয়োজনে শিল্পপতিদের এ ব্যাপারে আহ্বান জানানো হবে।”
মেলায় প্রত্যেক দর্শকই পিঠের স্টলে ভিড় জমাচ্ছেন। রাজীব দেবনাথ, লিটন দেবনাথ, মিঠুন দেবনাথ, ভোম্বল ঘোষরা পিঠে বিক্রি করতে করতে হাঁপিয়ে উঠছেন। তাঁদের কথায়, “মেলা জমার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত পিঠে শেষ হয়ে যাচ্ছে। চাহিদা ও যোগানের মধ্যে প্রচুর ফাঁক থাকছে।” তাঁরা জানান, পেঁয়াজকুলি ও পাটিসাপটার চাহিদা অত্যন্ত বেশি। যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে আদর্শপল্লির বধূ অর্চনা দেবনাথ, মালতি সেন, ইতুরানি ভৌমিকরা বলেন, “দিনের সব কাজ শেষ করার পরে পিঠে তৈরি করতে হচ্ছে। তার উপরে পিঠে তৈরির হাজারো সমস্যা রয়েছে। আমরা তো যন্ত্র নই।” উদ্যোক্তারা জানান, প্রতি দিন কয়েক হাজার পিঠে বিক্রি হচ্ছে মেলার মাঠ থেকে।
উদ্যোক্তাদের তরফে প্রতাপ ঘোষ, সন্দীপ পাঠকেরা বলেন, “শহরের বেশির ভাগ লোক পিঠে খাওয়া ভুলে গিয়েছিলেন। সে কথা মাথায় রেখে পিঠে-মেলা করার ভাবনা মাথায় এসেছিল। তিন বছর পরে পৌঁছে মনে হচ্ছে, আমরা ভুল করিনি। পাড়ার বাসিন্দারা সহযোগিতা না করলে এই মেলা সম্ভব হত না।” দুধ পিঠে খেতে খেতে কলেজছাত্রী সৌমিলি, শুক্তিরা বলেন, “বাড়িতে পিঠে তৈরি হয় না। আমরা এখানেই খাচ্ছি। বাড়ির জন্যও নিয়ে যাব।” |