ভরদুপুরে জনবহুল এলাকায় এক যুবককে খুন করে মোটরবাইকে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল এক দল দুষ্কৃতী। পুলিশের তাড়ায় বর্ধমান-কাটোয়া রোডে কাটোয়ার জাজিগ্রামের কাছে দেহ ফেলে রেখে পালাল তারা। ঘটনাস্থল থেকে একটি মোটরবাইক উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটে কাটোয়ার সিআই অফিসের কাছে, কাটোয়া থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে হরিসভা পাড়ায়। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম সাগর শেখ (২১)। বাড়ি কাটোয়া শহরের কেশিয়াতে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “নিহতের নামে কাটোয়া থানায় খুনের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বাবা জঙ্গল শেখ দাগি অপরাধী। সে এখন জেলে রয়েছে। নিহতের দাদা সাদ্দাম শেখ একটি খুনের ঘটনায় কাটোয়া থানার হেফাজতে রয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৮ অগস্ট কাটোয়ার খাজুরডিহিতে এসটিকেকে রোডে সুখদেব মণ্ডল নামে স্থানী য় একাইহাট গ্রামের এক বাসিন্দার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর পরিবারের লোকজন অজ্ঞাতপরিচয় লোকজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। এই ঘটনায় পুলিশ সাগর শেখকে গ্রেফতার করেছিল। সপ্তাহ দুয়েক আগে সাগর জেল থেকে ছাড়া পান। নিহতের সৎ মা আনোয়ারা বিবি কাটোয়া থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘ভয়ে ও আমাদের কাছে থাকত না। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে শহরের জামাইপাড়ায় পিসিরবাড়িতে থাকত।”
পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুরে কাটোয়া উপ-সংশোধনাগারে গিয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করেন সাগর। সেখান থেকে ফিরে দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ ভাগীরথীর কাটোয়া-বল্লভপাড়া ফেরিঘাটের কাছে হরিসভা পাড়ায় একটি চপের দোকানে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময়ে কাটোয়া থানার পাশ দিয়ে তিনটি মোটরবাইকে চড়ে মোট ৬ জন হরিসভা পাড়ায় ঢোকে। তাদের কাছে ওয়ান শটার ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরবাইকে বসেই সাগরকে লক্ষ করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। হাতে গুলি লাগে তাঁর। সেই অবস্থায় সাগর পালাতে গিয়ে একটি দোকানের সামনে পড়ে যান। তখন দুষ্কৃতীরা কালো রঙের একটি স্কুটিতে তুলে নেয় তাঁকে। প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে বর্ধমান-কাটোয়া রোডে গুলিবিদ্ধ দেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
কালো রঙের ওই স্কুটিটি দেখে আনোয়ারা বিবি পুলিশকে জানান, তিনি সাদ্দামকে দেখতে কাটোয়া থানা চত্বরে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময়ে তাঁর পাশ দিয়ে ওই মোটরবাইকগুলি যায়। পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীদের অধিকাংশেরই বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নদিয়ার কালীগঞ্জের সুমিত সেন, ইসরাফল শেখরা বলেন, “নৌকা ধরব বলে ফেরিঘাটে যাচ্ছিলাম। এমন সময়ে একটি শব্দ শুনি। তার পরেই দেখি, গালাগাল দিতে দিতে মোটরবাইক ও স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে গেল কয়েক জন।” কাটোয়ার সিআই শচীন্দ্র পুড়িয়া বলেন, “খবর পেয়েই পুলিশ ওই দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করে। তা বুঝতে পেরে মৃতদেহটি রাস্তায় ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। তার কিছু দূরে মোটরবাইকটিও রেখে পালায় তারা।” পুলিশ সুপার বলেন, “কারা এই ঘটনায় জড়িত তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।”
শহরের মধ্যে খুন করে দেহ নিয়ে পালানোর চেষ্টার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।” সিপিএমের কাটোয়া জোনাল সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কাটোয়া থানা থেকে কয়েক গজ দূরে এমন ঘটল। বোঝাই যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলার কী হাল!” তৃণমূলের অভিযোগ, মাসখানেক আগেই শহরের কেশিয়া মাঠপাড়ায় এক দুষ্কৃতী খুন হয়েচিল। শহরের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি করেছিল দুষ্কৃতীরা। এর সঙ্গে চুরি-ছিনতাই লেগেই রয়েছে। ঝোপ থেকে উদ্ধার হওয়া নির্যাতিতা শিশুর পরিচয় এখনও উদ্ধার হয়নি। তাই পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত, মত স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের। |