তৃণমূল নেত্রীর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বিভিন্ন এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছেই। কাঁকসার স্থানীয় নেতাদেরও যে বাগে রাখা যাচ্ছে না, তা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথায় স্পষ্ট।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত দুর্গাপুর মহকুমায় দলের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, কাঁকসা ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায় ও যুব সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর ছিলেন তাঁর অনুগামী। অন্য দিকে, অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী হিসাবে পরিচিত ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি দেবদাস বক্সি। কিন্তু দলীয় সংগঠনে অপূর্ববাবুর তেমন প্রভাব না থাকায় দেবদাসবাবু ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছিলেন। বিধানসভা ভোটে অপূর্ববাবু জয়ী হয়েই তাঁকে ‘বিধায়ক প্রতিনিধি’ ঘোষণা করেন। কিছু দিনের মধ্যে প্রভাতবাবুর জায়গায় তাঁকে দলের শিল্পাঞ্চল সভাপতিও করা হয়।
পরিস্থিতি অনুকূল হতেই জোরকদমে নেমে পড়েন দেবদাসবাবু। তৃণমূলের অন্দরের খবর, অশোকবাবু ব্লক সভাপতি থাকাকালীন নেপথ্য থেকে দলের কাজকর্ম চালাতেন যুব সভাপতি পল্লববাবুই। ক্ষমতার হাতবদলের পরে অতএব দেবদাসবাবু ও পল্লববাবুর গোষ্ঠীর ক্ষমতা জাহিরের পাল্লা দেওয়া শুরু হয়। এক পক্ষ সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর করলে অন্য পক্ষ দাবি করত, যারা এ কাজ করেছে তারা দলের কেউ নয়। দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে বারবার। স্কুল ভোটে এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ তুলেছে অন্য পক্ষ।
স্বাভাবিক ভাবেই, ব্লকের সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছেন। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কথা অবশ্য কোনও পক্ষই প্রকাশ্যে স্বীকার করে না। দেবদাসবাবুর দাবি, দল তাঁকে যে দায়িত্ব দেয় তা তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালন করেন। এর অন্যথা হয় না। পল্লববাবুর বক্তব্য, তিনি দলের ‘অনুগত সৈনিক’। শিল্পাঞ্চল সভাপতি অপূর্ববাবু বলেন, “সকলকেই দলীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। কে কার সঙ্গে আছেন বা ছিলেন সেটা বিচার্য নয়।” কিন্তু দলের উঁচুতলাতেও ঘরোয়া কোন্দলের খবর গিয়েছে। যে কারণে বুধবার পানাগড়ে এক জনসভায় এসে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দুই পক্ষকে একযোগে কাজ করার পরামর্শ দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তাঁর মতে, “তা হলেই কাঁকসা থেকে সিপিএম ‘আউট’ হয়ে যাবে।”
অশোকবাবু ও দেবদাসবাবু দু’জনেই তখন মঞ্চে ছিলেন। তাঁদের সামনেই মুকুলবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার গত কুড়ি মাসে যা কাজ করেছে, তাতে অশোক ও দেবদাস যদি এক হয়ে কাঁকসার মানুষের সামনে প্রচার করে, এখানকার একটি আসনও সিপিএম পাবে না।” দুই নেতাই ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানান। সভায় উপস্থিত কর্মী-সমর্থকেরা হই-হই করে ওঠেন। অনেকে বলেও ফেলেন, “যাক, এত দিনে কাজের কাজ হল। কে কার পক্ষে তা নিয়ে ভাবতে হবে না!”
এই স্বস্তি ভোট পর্যন্ত টিকবে কি না, তা অবশ্য কারওরই জানা নেই। |