হুল্লোড়
আলটুশি ক্যান্টিন
রূপকথা রা রা রা
চুপকথা রা রা রা...
মন পাহারা
বন্ধুরা
আজ খোলা আলটুশি ক্যান্টিন


ভাঁড়ের চা, শিঙাড়া, ডিম টোস্ট... কোক, ঢপের চপ, জি ফোর। ক্যান্টিন আছে ক্যান্টিনে। তবে তার খাবারের তালিকা এগিয়ে গিয়েছে গড়গড় করে। সেই সঙ্গে বদলেছে ক্যান্টিনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রেম-বিচ্ছেদের চরিত্র।
ক্যান্টিনেই তো কত যুক্তি তর্ক গপ্পো আর আড্ডা। ক্যান্টিনেই কত প্রেমের শুরু। সামনে কফির কাপ রেখে কত অপেক্ষার পূর্ণ পরিণতি প্রেমে। ক্যান্টিনেই তো কত প্রেম হারিয়ে যায় কফির ধোঁয়ার আড়ালে। জেন ওয়াইয়ের জীবনে ক্যান্টিন না থাকা মানে সব রূপকথার জানালা দরজা বন্ধ।
কিন্তু এখনও কি ভীড় জমে ক্যান্টিনে? এখনও কি আড্ডা হয় ক্লাস বাঙ্ক করে?
যতই ভাবুন জেন ওয়াই এখন শীতের দুপুরের আড্ডা কলেজ ক্যান্টিনের বদলে ম্যাক ডি-তে মারছে। আর তাই ভেবে যারা সত্তরের দশকের রোম্যান্টিসিজমে পড়ে আছেন, তাঁদের জন্য একটাই পরামর্শ, একবার প্রেসিডেন্সির প্রমোদদা-র বা সেন্ট জেভিয়ার্সের অরুণদা-র ক্যান্টিনটা ঘুরে আসুন। দেখবেন ক্যান্টিনে আড্ডার ট্র্যাডিশন এখনও বহাল।
ছবি: বিশ্বরূপ দত্ত
ঘুম ঘুম ক্লাসরুম
“এই শীতকালে সকাল হতে না হতেই ক্লাসে বসা যায় নাকি? ক্লাসে বসলেই তো ঘুম পাবেই,” বলছিল প্রেসিডেন্সির অরুণ রায়, “তাই ক্লাসে ঢোকার আগেই প্রমোদদার থেকে একটা কফি খেয়েনি। তারপর দুপুরের আড্ডা তো আছেই।”
“মাঝে মাঝে ডেফিনিটলি ক্লাস বাঙ্ক করি। কিছু কিছু লেকচার এত বোরিং। চোখ খুলে রাখা যায় না,” জানাল সেন্ট জেভিয়ার্সের দেবস্তুতি, “তখন দল বেঁধে চলে যাই অরুণদার ক্যান্টিনে। ফিশ চপের সঙ্গে এক জমাটি আড্ডা সেশন।”
ক্লাসরুমে ঘুমঘুম ভাব নিয়ে থাকার চেয়ে ঢের ভাল ক্যান্টিন। সেখানে মেয়েরা ছেলেদের দিকে তাকায়, ছেলেরা মেয়েদের দিকে তাকাবার অবাধ স্বাধীনতা পায়। যেটা কিনা ক্লাসরুমে জমে না।
আশুতোষ কলেজের ছাত্রী দেবারতি দেব বললেন, “আমাদের ক্যান্টিনটাই হল ‘ঝারি’ (লুকিয়ে ছেলে বা মেয়ে দেখা) স্পট। ছেলেরা মেয়েরা কেতা করে হাতে গিটার নিয়ে আসে আমাদের নজর টানার জন্যই। আমরাও ধোসার আড়াল থেকে ওদের দিকে তাকাই। এই ভাবে কারও কারও প্রেম হয়ে যায়। তখন ছেলেটি-মেয়েটি দলছুট হয়ে ক্যান্টিনের আলাদা টেবিলে বসে প্রেম করে।”
আবার প্রেম ভাঙেও এই ক্যান্টিনে। ছেলেটি মেয়েটি এক টেবিল ছেড়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিদায় নেয়। কিন্তু ফিরে আসে শেষ পর্যন্ত যে যার দলে পুরনো ক্যান্টিনে। হয়তো এই ক্যান্টিনে প্রেম ভেঙে গেলেও থেকে যায় বন্ধুত্বটা। এমনই একটা ছবি দিলেন দেবারতি তাঁর কথায়।

হায় এ কি দশা
ক্লাস বাঙ্ক করে ক্যান্টিনে আড্ডা দেওয়ার ব্যাপারে অবশ্য কোনও ভাবেই একমত হতে পারছে না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভদীপ। তার মানে এই নয় যে সে ক্লাস ডুব দেয় না বা একেবারে ‘গোপাল’-এর মতো সুবোধ বালক।
“আমাদের ক্যান্টিনটা দেখেছ? লুচি-তরকারি আর ডিমের ডেভিল। পিরিয়ড। তাও ঠান্ডা। ব্যস, আর কিছু না” বেশ ঝাঁঝ মেশানো গলায় বলল শুভদীপ, “আমাদের আড্ডা তাই সামনের লালবেদি। আড্ডাটা হয়, তবে খাওয়াটা মিস হয়। প্রেসিডেন্সির ক্যান্টিনের গল্প শুনে ঈর্ষা হয়।”

কী ছিল

কী হল
এক কাপ চায়ে ... তোমাকে চাই
নীলাঞ্জন-তপতী কিংবা সোমক-জয়িতার প্রেমের আলাপ বিলাপ প্রলাপ সবটাই এই ক্যান্টিনে। কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর ওরা বারবার প্রেমের রোম্যান্টিসজম খুঁজতে চলে যায় কলেজ ক্যান্টিনে অফিস কেটে। কলেজের প্রাক্তন পড়ুয়ারাও দল বেঁধে হাজির হয় কলেজ ক্যান্টিনেই আড্ডা দিতে। জীবন এগিয়ে গেলেও ক্যান্টিনের পিছুটান থেকেই যায়। যদিও বদলে গেছে আজকের ক্যান্টিনের চেহারা।
কী সেই বদল? বদলেছে মেনুলিস্ট, বদলেছে আড্ডার বিষয়, বদলেছে ক্যান্টিনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সম্পর্কের চরিত্রও। তবু ক্যান্টিন আছে ক্যান্টিনেই। তার চিরন্তন আবেদন বদলাবার নয়।
সকাল হোক কী দুপুর প্রেসির ক্যান্টিন দেখলে বোঝা যায় প্রমোদদা কেন বলেছিলেন, “ও যতই কেএফসি-ম্যাকডোনাল্ড আসুক না কেন, আমার ক্যান্টিনে তো কোনও তফাত দেখি না।” ক্যান্টিনের বেঞ্চ তো বটেই, করিডরেও চলছে চুটিয়ে আড্ডা। একই গল্প সেন্ট জেভিয়ার্স ক্যান্টিনের সবুজ বেঞ্চগুলোয়।
গোখলে কলেজে ক্যান্টিনটাই হল লনের ওপেন এয়ার। মেয়েদের কলেজ হওয়ায়, ক্যান্টিনেও ছেলেদের দেখা মেলে না। “ এই রকম ক্যান্টিনে ছেলেদের দেখতে পাই না বলে মন খারাপ হয়। সেই মন খারাপটা অবশ্য মিটে যায় বান্ধবীদের সঙ্গে খোলা আকাশের নীচে ছেলেদের নিয়ে গসিপ করে,” বললেন গোখলে কলেজের ছাত্রী মনীষা ভট্টাচার্য।

ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ
তবে খাওয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্সি-সেন্ট জেভিয়ার্স-আশুতোষ-টেকনো ইন্ডিয়া-র ক্যান্টিনকে কয়েক গোল দিতে পারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন। কোয়ালিটির কথা বলা হচ্ছে না। সৃজনশীলতা আর অভিনবত্বের দিক থেকে যাদবপুর কয়েকশো গুণ এগিয়ে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আফ ডজন ক্যান্টিনের মধ্যে নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় মিলনদার ক্যান্টিন। আর্টস ডিপার্টমেন্টের লাগোয়া এই ক্যান্টিন। খাবার নিয়ে নিত্যনতুন পরীক্ষা নিরীক্ষায় মিলন কান্তি দে বেশ ফেমাস।
বেশ কয়েক বছর আগে তৈরি করেছিলেন ফ্রুট আইসক্রিম, ঢপের চপ বা জি ফোর-এর মতো নতুন ডিশ। বললেন, “আর্ট ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন নতুন কিছু একটা করতে বলত। আমি একদিন ব্রেড পকোড়ার মধ্যে মাংসের পুর দিয়ে দিলাম। ওরাই নাম দিল ঢপের চপ।”

অন্য কোথাও চল
কিন্তু সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তো মিলনদা, প্রমোদদা বা অরুণদা নেই। তাদের? “কেন! চিনি’জ আছে,” জানাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোয়েল, “আমাদের যা ক্যান্টিন। খাওয়া না হলে আড্ডা জমে নাকি? আমরা তো তাই হ্যাং আউট করি চিনি’জ-এ।”
আশুতোষ কলেজের দেবারতি-ঐশী-রা আর কলেজ ক্যান্টিনে আটকে থাকছে না। “আমাদের ক্যান্টিনটা মোটামুটি। লুচি-তরকারি বা চিলি চিকেন-ফ্রায়েড রাইসই তো সম্বল। তাই হ্যাং আউট করতে চলে যাই সিসিডি। তবে মস্তি করতে কিন্তু ক্যান্টিনটাই মাস্ট।’’

এ গান শোনাব বিকেলবেলায়
ক্যান্টিন মানে মোটেই কিন্তু শুধু খাওয়াদাওয়া নয়। প্রেসিডেন্সি হোক বা সেন্ট জেভিয়ার্স। ক্যান্টিনের আড্ডার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে গান। প্রেসিডেন্সির অভিষেক বা আশুতোষ কলেজের অর্পণ, দু’জনের ট্যালেন্ট দেখানোর জায়গা কলেজ ক্যান্টিন। ক্লাস বাঙ্ক করে হোক কী ক্লাসের ফাঁকে ওদের মতো উঠতি ট্যালেন্টদের সব সময় পাওয়া যাবে ক্যান্টিনে।
গান ছাড়াও আঁতেল আলোচনাও কম হয় না কলেজ ক্যান্টিনে। “আমরা আসার পরই ক্যান্টিনে ওয়াই-ফাই চালু হয়। ব্যস বাইরে যাওয়ার দরকারটাই কমে গেল। বার্গার কী প্যাটি, সবই পাওয়া যায় বাইরের থেকে অনেক কম দামে। আবার অরুণদার ক্যান্টিনের খাবার ভীষণ হাইজিনিক। জেভারিয়ান ম্যাগাজিনের কাজ তো আমরা পুরো ক্যান্টিনে বসেই করতাম,” জানাল এক জেভারিয়ান দেবস্তুতি দাশগুপ্ত। আর কী, এ বার ক্রিসমাসের ছুটির পর কলেজ খুললেই জমিয়ে বসে যাওয়া যাবে ক্যান্টিনে। ওই যে চন্দ্রবিন্দু বলেছে ‘আজ খোলা আলটুশি ক্যান্টিন’।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.