|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
নম্বর গেমে নেই আমি |
বললেন অভিজিৎ বর্মন। মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
এক সময় বিশ্ব জুড়ে ছিল পটার ম্যানিয়া। এখন বাংলা জুড়ে পটা ম্যানিয়া। কারণটা কী?
(হেসে) গান প্রচণ্ড ভালবাসি বলে গাই। কোনও কিছু যদি ঠিক করি করব, তার আমি শেষ দেখে ছাড়ি। ভীষণ শর্ট-টেম্পারড আমি। অপছন্দ হলে আমি সেটা মুখের ওপর বলে দিই। আর আমার কোনও কিছুতেই কিছু যায়-আসে না। ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল দেশের হয়ে ব্যাডমিন্টন খেলবেন। সেটা বিসর্জন দিতেও কিছু যায় আসেনি?
আমি এখনও সময় পেলে খেলি। এক সময় সর্বভারতীয় লেভেলে খেলতাম। নিজের ক্ষেত্রে বলছি, যে দিন বুঝলাম যে ওখানে অনেক ল্যাং-মারামারি হচ্ছে, তখন খেলা ছেড়ে দিই।
গান তো কোনও দিন ফর্ম্যালি শেখেননি...
কোনও ফর্ম্যাল ট্রেনিং নেই আমার। মা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। একবার ব্যাডমিন্টন প্র্যাক্টিস করতে গিয়েছি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-এ। হঠাৎ আমার সিনিয়র নূপুরদি, আমাকে ‘সংস্কৃতি’-তে গান গাইতে বললেন। কলেজ ফেস্ট সেটা। আমি স্কুলের ছাত্র। থার্ড হয়েছিলাম। নূপুরদি বলেছিলেন, “ভয় না পেলে তুই আরও ভাল গাইতিস।” সেই কথাটা আমার আজও মনে আছে।
গানটা বেশি করে চর্চা শুরু হয় সাউথ সিটি-তে গিয়ে। আমাদের অধ্যক্ষ অমিতাভ বসু, ভীষণ উৎসাহ দিতেন। কলেজের সিনিয়র দাদা, দেবাঙ্কুরদাকে অনুরোধ করেছিলাম আমাকে ‘হলুদ পাখি’ গানটা শিখিয়ে দিতে। শেখার পর একটাও কলেজ ফেস্ট নেই যেখানে আমি ‘হলুদ পাখি’ গেয়ে ফার্স্ট প্রাইজ আনিনি। একবার সিধুদা অবশ্য আমাকে সেকেন্ড করেছিল।
রেকর্ড ব্রেক?
সিধুদা বলেছিল যে হয়তো সে দিন ও নিজে গানটা গাইলেও আমার মতো করে গাইতে পারত না। তবে ওর ধারণা ছিল যে আমি হয়তো সে দিনের থেকেও আরও ভাল করে গানটা গাইতে পারব। এ ছাড়া একবার কলেজ ফেস্ট-এ ঊষা উত্থুপ-কে স্টেজে দেখেছিলাম। ওঁর স্টেজ উপস্থাপনা দেখে পারফর্মিং মিউজিশিয়ান হওয়ার শখ হয়েছিল। শুরু করে দিলাম আমার প্রথম ব্যান্ড। নাম ‘কলকাতা’। একটা কম্পিটিশনে ‘ক্যাকটাস’-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ‘কলকাতা’ জিতেছিল। কিছুটা পথ চলে ‘ক্যাকটাস’-এ যোগ দিই।
|
রকবাজি |
জনপ্রিয় গান: কলঙ্কিনী রাধা, মন, হলুদ পাখি, নিতাই, রাত্রি
ডি-স্ট্রেস মন্ত্র: মিমিক করা
দু’ চক্ষের বিষ: ঢপবাজ পলিটিশিয়ান
একা আইল্যান্ডে গেলে চাই: রেড ওয়াইন, গান আর আমি
রিলেশনশিপ স্টেটাস: কমপ্লিকেটেড |
|
বাংলা ব্যান্ড যে জায়গাতে জাতীয় স্তরে পৌঁছতে পারত, তার কারণ নিশ্চয়ই ভাষা বিভাজন নয়? তা হলে রাব্বির গান আর ‘পানি দা’ বাংলাতে হিট করত না...
এটা ভুল যে আমরা বাংলায় গান করি বলে জাতীয় স্তরে সে ভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারিনি। ‘স্বরাত্মা’ আর ‘আভিয়াল’-কে দেখুন। আঞ্চলিক ভাষায় গান গেয়ে কী করছে। রাব্বির গানের অ্যারেঞ্জমেন্ট-টা পরিষ্কার। সাউন্ডটাই আলাদা। আমাদের মিউজিকেরও কদর আছে। কলেজ ফেস্ট-এ বুঁদ হয়ে আমাদের গান শোনে ছেলেমেয়েরা।
মা-মাসিরা কি পটাকে শুনছে? একটা বড় অংশ আছে যাদের কাছে পৌঁছয়নি। তবে মা-মাসিরা ‘হলুদ পাখি’ বা ‘মনের মানুষ’-এ আমার গানটা (‘আর আমারে মারিসনে মা’) মন দিয়ে শোনে। বাংলা ব্যান্ড নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখি। একা একা করলে হবে না। বনিদা তো ঐকতান ব্যান্ডে কিছু ভাল কাজ করেছে।
বনি কিন্তু বলেছেন যে কলকাতার ব্যান্ডরা ‘রক অ্যান রোলের’ বাইরে বেরোতে পারেনি... বনিদা কলকাতায় থেকে আমাদের পথ দেখালে ভাল লাগত। বনিদার ক্রসউইন্ডস-এর প্রথম লাইন-আপ টা যদি জোগাড় করা যেত, তা হলে আজও ভারতের কোনও ব্যান্ড দাঁড়াতে পারত না ওদের সামনে। তবে প্রত্যেকটা ব্যান্ড-এর একটা ধারা আছে। আমি ফোক গাইতে পারি। ‘ক্যাকটাস’-এর কিছু শো-তে গেয়েছি। তবে এখন আর গাই না। এখানকার রক মিউজিকেও কিছু প্রগতিশীল কাজ হচ্ছে। লক্ষ্মীছাড়া ভাল মিউজিক করছে। ‘ক্যাকটাস’-এর নতুন অ্যালবাম, ‘ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ’, বেরোচ্ছে এপ্রিল-এ। একটা প্রতিষ্ঠানবিরোধী গান রয়েছে। নাম: ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়’? প্রেমের গান (‘বড় দেরি’), ল্যাদ খাওয়া গান (‘স্টেটাস আপডেট’) ছাড়াও কিছু পুরোনো গানকে নতুন ভাবে অ্যারেঞ্জ করেছি আমরা।
কোথাও কি মিডিওক্রিটির বোঝাটা ভারী হয়ে যাচ্ছে? মিডিওক্রিটি তো আছেই। পরিবেশটাও ভাল হওয়া উচিত। একটা রক কনসার্ট হবে আর তাতে ব্যবস্থাপকরা বাঁশের বেড়া দিয়ে এক দিকে নারী আর এক দিকে পুরুষ শ্রোতা বলে আলাদা করে দেবে! ‘ডিপ পার্পলের’ অনুষ্ঠান হলে, ব্যবস্থাপকরা কি একই জিনিস করবেন? রাব্বি আর আভিয়াল-এর কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যায় আর্টিস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য। এখানে সেই দায়িত্বটা নেওয়ার মতো কেউ নেই। আমি এ সব দেখে মাঝে মাঝে হীনমন্যতায় ভুগি। আমি যে-লেভেলে গান গাইতে পারি, নিজেকে যে-জায়গাতে নিয়ে যেতে পারি, সেটা হচ্ছে না। যদি ঠিকঠাক পরিবেশ থাকত, যদি ল্যাং মারামারি না থাকত, তাহলে আমি যে-কোনও স্টেজ-এ গান গেয়ে কাঁপাতে পারি।
তবে শো যে আসে না তা তো নয়। শোনা যায় আপনি নিজের অবস্থান থেকে নড়তে চান না? থাকব না-ই বা কেন? আমাকে বিদেশে নিয়ে যাবে কিন্তু দলের সবাইকে নিয়ে যাবে না। সেটা হলে ব্যান্ড স্পিরিট কী করে থাকবে? নেশা ধরানোর জন্য এটা প্রথম প্রথম করা যেতে পারে।
সিধু আর রূপমের সম্পর্কে চিড় ধরাতে আপনার অবস্থানটা কোথায়? কাদা ছোড়াছুড়ি করলে জাতীয় স্তরে যে ভাবে বাংলা ব্যান্ড যেতে পারত তা পারছে না। সিধুদা-কে আমি ভীষণ ভালবাসি। রূপম খুব ট্যালেন্টেড। ও আমার ভাল বন্ধু। প্রকাশ্যে ঝগড়া করাতে এদের ইমেজটাই খারাপ হচ্ছে। লিপ-সিঙ্ক আমি পছন্দ করি না। তবে একটা অনুষ্ঠান যদি ডেফার্ড লাইভ দেখানো হয় সেখানে পোস্ট প্রোডাকশনটা প্রয়োজন।
আপনার কারেন্ট রিলেশনশিপ স্টেটাসটা কী? ভীষণ জটিল। দুটো গভীর প্রেম করেছি আগে। প্রেম মানে একটা ‘প্রচণ্ড মনের অবস্থা’ যেখান থেকে একটা মানুষকে বোঝা যায়। পটার সঙ্গে প্রেম করতে গেলে পটাকে বুঝতে হবে।
‘তোর কাছে যাব/ তোর সাথে গাব/ মুছে দেব অভিমান আদরে আদরে’ এই লাইনটা গাইলে আজ কার কথা প্রথমে মনে হয়? সেই মুহূর্তে ‘কমপ্লিকেটেড’ রিলেশনশিপ স্টেটাস লাইনটা পালটে যাবে।
নতুন বছরে কী করতে চান? ‘সিঙ্গলস’-এর অ্যালবাম রিলিজ করার কাজ শুরু করেছি। আর এমন একটা শো করতে চাই যেখানে আমার প্রিয় গানগুলো আমি গেয়ে সবাইকে মাতিয়ে দেব।
রূপম, সিধু আর আপনিকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়?
আমি নাম্বার গেমে নেই। যারা সিধুদাকে চেনে, তারা রূপমকেও চেনে। আমাকেও চেনে। |
|
|
|
|
|