|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
পটা-র ম্যানিয়া |
ইউ টিউবে প্রত্যেক গানে ক্লিক পড়ে ৪৫ হাজার। জেন ওয়াইয়ের প্লে লিস্ট ভরা তাঁর গানে। ‘ক্যাকটাস’য়ের গায়ক
অভিজিৎ বর্মন ওরফে পটাদার কীর্তি লিখছেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
শেষ ডিসেম্বরের সন্ধ্যা। ঘড়িতে পৌনে সাতটা।
কলকাতার শীতলতম দিন বোধ হয় সেদিন।
স্টেজের সামনে জনা পঞ্চাশের জটলা। চেয়ারে বসা তার অনেক গুণ।
ব্যাক স্টেজে অভিজিৎ বর্মন। ওয়ার্ম আপ করছেন। শরীর-গলা দু’য়েরই।
সাতটা পনেরোয় স্টেজে উঠলেন তিনি। পরবর্তী চল্লিশ মিনিট দশর্কাসন থেকে বিরামহীন ভাবে আওয়াজ উঠল, ‘ইউ রক, পটাদা। ইউ আর দ্য বেস্ট’।
সত্যি কি তিনি বেস্ট? কই ঠাকুমা তো চেনেন না।
মা তিনিও মনে করতে পারছেন না।
মেয়ে? শুধু মনে করবে কী? ঘরে তো পোস্টার লাগিয়ে রেখেছে। এখন থেকে পকেট মানি জমাচ্ছে পটার পরের শোয়ের জন্য।
তিনি ‘ক্যাকটাসে’র পটা। কিন্তু ভক্তরা ও সব ‘ক্যাকটাস’ ট্যাগের তোয়াক্কা করে না। তাদের অন্ধ বিশ্বাস পটাদা নিজেই স্বয়ং প্রতিষ্ঠান!
তারা বলেন কুড়িরও বেশি হিট গান পটার। সিঙ্গলস্ ‘মানসাগর’য়ের ইউ টিউব হিট্স ৪৯ হাজার। অন্য আর এক গান, ‘রাত্রি’র হিটস্ ৩৩ হাজার।
|
|
পটা যে একটা ‘ফেনমেনান’ সেটা স্বীকার করে নিচ্ছেন ক্যাকটাসের ফ্রন্ট ম্যান সিধুও, “পটা একটা ক্রেজ। ব্যান্ডের ক্ষেত্রে আমিই বেশি ভোকাল। কিন্তু পটা যখন স্টেজে ওঠে তখন ওর ‘সোলফুলনেস’টাই শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। তার সঙ্গে আছে ওর গলার
আমেজ। সব মিলিয়ে একটা ডেডলি ককটেল।”
ক্যাকটাসের সঙ্গে পটার শেষ অ্যালবাম ‘রাজার রাজা’। তার পর ‘ক্যাকটাস’ থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। এখন আবার তিনি ‘ক্যাকটাস’য়ে।
“পটাদা ছাড়া ক্যাকটাস! ধুৎ, ভাবাই যায় না। পটাদা নেই বলে ‘তুচ্ছ’ অ্যালবামটাও কিনিনি,” বলছিলেন শিলিগুড়ির অর্ণব।
পটাদার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ তার হোম টাউন শিলিগুড়িতে। সেই থেকেই পটা-জ্বরে আচ্ছন্ন। এখন পড়েন হেরিটেজ কলেজে, “কলকাতায় আসার পর পটাদার একটা লাইভ শো-ও মিস করিনি,” বললেন তিনি।
তা হলে কি ভাইস-ক্যাপ্টেন পটা ক্যাপ্টেন সিধুর থেকে বেশি জনপ্রিয়? “ক্যাকটাসকে জানলে বুঝতে পারবেন যে আমাদের মধ্যে ক্যাপ্টেন বা ভাইস ক্যাপ্টেন বলে কিছু নেই। আমি গান ছাড়াও আরও অনেক কিছু নিয়ে ব্যস্ত। ডাই হার্ড ক্যাকটাস ফ্যানের চোখ দিয়ে দেখলে এটা মানতেই হবে যে পটা আমার থেকেও বেশি জনপ্রিয়,” সিধু বলেন।
একই কথা কলেজ পড়ুয়া অর্ণবের, “পটাদার এনার্জি আর গায়কিটাই সবার থেকে আলাদা,” বলছিলেন অর্ণব, “প্রায় সব বাংলা ব্যান্ডই তো হার্ড রক কি মেটাল রক করে। পটাদার ‘হলুদ পাখি’, ‘মানসাগর’য়ের মতো সফট রক গানই সেখানে পার্থক্যটা তৈরি করে দেয়। আর লাইভ প্রোগ্রামে তো কথাই নেই। কখনও এক জায়গায় থেমে থাকে না। ওই এনার্জিটাই ছড়িয়ে যায় অডিয়েন্সে। পটাদার লাইভ শো একটা এক্সপিরিয়েন্স।”
“পটাদার স্পিরিটটাই আসলে ম্যাগনেটিক,” বলছিল প্রিয়াঙ্কা সাহা, “অনেকটা সৌরভ গাঙ্গুলির মতো। কী কাম ব্যাক! ‘ক্যাকটাস’য়ে যেমন পপুলার, ‘মরূদ্যান’য়েও তাই। তবে একটাই দুঃখ, মরূদ্যানের কোনও লাইভ প্রোগ্রামে কোনও দিন যাওয়া হয়নি। ভীষণ ইচ্ছে করে মরূদ্যানের গানগুলো লাইভ শুনতে। কবে যে সেটা হবে?”
তবুও প্রিয়াঙ্কার আই-পড ঠাসা পটার গানে। অ্যালার্মে ‘তোর কাছে যাব’।
পটা-ভক্তরা এ-ও দাবি করেন, ওঁর জনপ্রিয়তা এতই যে ‘ক্যাকটাস’য়ের অনুষ্ঠানেও পটাকে ‘কলঙ্কিনী রাধা’ বা ‘নিতাই’য়ের মতো ‘মরূদ্যান’য়ের গান গাইতে অনুরোধ করেন শ্রোতারা।
“‘ক্যাকটাস’য়ের অ্যালবামে থাকলেও ‘উড়ে যেতে চায়’, ‘মন’য়ের মতো গানগুলোকে কিন্তু সবাই পটাদার গান বলেই জানে,” বলছিলেন অভিষেক। ফেসবুকে জানিয়ে রেখেছেন ৯৯ শতাংশ লাইভ প্রোগ্রামে হাজির থাকেন তিনি।
ক্যাকটাস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কয়েকটা সোলো প্রোগ্রাম করেছিলেন পটা। তার একটার সাক্ষী সুমন চৌধুরী। “ওহ্ ভাবা যায় না সে এক্সপিরিয়েন্স। কলেজের সোশাল। হলের দু’টো তলায় একটুও জায়গা নেই। এ দিকে বাইরে তখনও শ-দু’য়েক ডাই হার্ড ফ্যান। আসলে আমাদের কলেজ ছাড়া অন্য কলেজ থেকেও চলে এসেছিল অনেকে। কী করব, ঢুকতে দিতে হল সবাইকে। অনেকেই প্যাসেজে দাঁড়িয়ে থাকল। কিন্তু যতক্ষণ স্টেজে পটাদা, কারও কোনও কমপ্লেন নেই,” জানাল সুমন। ফেসবুকে সদর্পে জানিয়ে রেখেছে ৯৯ শতাংশ লাইভ প্রোগ্রামে হাজির থাকেন তিনি।
‘মনের মানুষ’ ছবির ক্রেডিট লাইনে তাঁর নাম অভিজিৎ বর্মনের বদলে ছিল সুরজিৎ বর্মন। হুলস্থূল পড়ে যায় ঘটনায়। “ভীষণ খারাপ লেগেছিল যখন পটাদার নামটা ভুল বেরিয়েছিল,” জানালেন কৌশিক।
আর কে বলল শুধু মাত্র জেন ওয়াই পটাদা শোনে? “আমার ঠাকুমাও ‘কলঙ্কিনী রাধা’ ও ‘মানসাগর’ ভালবাসেন,” বললেন কলেজপড়ুয়া সুমন।
তাই বলে কি তাঁর গান ‘বারান্দায় রোদ্দুর’য়ের মতো জনপ্রিয়?
“ওঁর গান আমার নিজের খুব ভাল লাগলেও মনে হয় না সেগুলো ‘বারান্দায় রোদ্দুর’য়ের মতো জনপ্রিয়,” বললেন ‘ভূমি’র সৌমিত্র।
পটার জনপ্রিয়তা কতটা ব্যাপ্ত সে প্রশ্নটা তাই থেকেই গেল। চ্যালেঞ্জটা কি নিতে পারবেন পটা? |
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
|
|
|
|
|