পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জনমানসে
‘ভাল কাজ’ করায় সংবর্ধনা সুপারকে
ইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠার পরে রায়গঞ্জের আইসি সমীর পালকে বদলি করেন রাজ্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ। মাত্র পাঁচ মাস আগে দায়িত্ব নেন সমীরবাবু। তাঁকে সরিয়ে রাজ্য পুলিশ কড়া বার্তা দেওয়ার পরেও ‘ভাল কাজ’-এর জন্য জেলার তিন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছ থেকে সংবর্ধনা নিলেন উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। সোমবার রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় ইটাহার ও কালিয়াগঞ্জের তিনটি সংগঠন তাঁর দফতরে গিয়ে সংবর্ধনা জানায়।
বিরোধী সিপিএম তো বটেই, কংগ্রেসের তরফে পুলিশ সুপারের সমালোচনা করে এই সংবর্ধনার আয়োজন আড়ালে কে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিধায়ক অমল আচার্য বলেন, “রায়গঞ্জে আইনশৃঙ্খলা ও পুলিশি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে জনমানসে। তাই সুপারের সংবর্ধনা নেওয়া ঠিক হয়নি।” তাঁর অভিযোগ, ক’দিন আগে গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরীর অনুষ্ঠান মঞ্চ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ জানাতে ফোন করা হলেও পুলিশ সুপার তা ধরেননি। অমলবাবু বলেন, “খোদ মন্ত্রী ফোন করলে এসপি ধরেন না। তা হলে আমজনতার অবস্থা কী হবে?”
পুলিশ সুপার অবশ্য মনে করেন, তাঁকে কেউ সংবর্ধনা দিলে তিনি নিতে পারেন। তাঁর দাবি, “জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। বেশির ভাগ মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে।” তা হলে তিনি মন্ত্রীর ফোন ধরেননি কেন? এ নিয়ে পুলিশ সুপার মন্তব্য করতে চাননি। পরে তিনি বলেন, “আমি ব্যস্ত থাকি। তাই হয়তো ধরতে পারিনি। আগামী দিনে নিশ্চয়ই সকলের ফোন ধরব।”
গত এক সপ্তাহ ধরে মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী নিজের বিধানসভা এলাকা ঘুরে বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগের কথা শোনেন। গত শনিবার ইসলামপুরের গাইসাল-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের রামপুরে মন্ত্রীর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের উদ্যোগে সেখানে মঞ্চও তৈরি করা হয়। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই দুষ্কৃতীরা ওই মঞ্চ ভেঙে দেয়। বিষয়টি জানার পর মন্ত্রী একাধিক বার পুলিশ সুপারকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি বলে অভিযোগ। এর পরে মন্ত্রী উত্তরবঙ্গের আইজি অনুজ শর্মাকে ফোন করে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ জানান। তার পরে পুলিশ সুপারকে সংবর্ধনা দেওয়ায় পুলিশ মহলেও প্রশ্ন উঠেছে। মন্ত্রী বলেছেন, “দুষ্কৃতীরা মঞ্চ ভেঙে দেওয়ায় আমি পুলিশ সুপারকে একাধিকবার ফোন করেছি। তিনি ফোন ধরেননি। মন্ত্রীর ফোনে যে পুলিশ সুপার সাড়া দেন না, তাঁর পক্ষে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা পাওয়া সম্ভব নয়। উত্তরবঙ্গের আইজির কাছে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ জানিয়েছি।”
সর্ংধনার আয়োজকদের পক্ষে মুফাফেরুল ইসলাম বলেন, “দেড় বছর ধরে পুলিশ সুপার জেলার আইনশৃঙ্খলা সামলানোর পাশাপাশি বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকা ঘুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে নানা চেষ্টা করছেন। পঞ্চায়েত এলাকার রাস্তাঘাট ও স্কুলের উন্নয়নের ব্যাপারেও পুলিশ সুপার জেলা প্রশাসন ও সরকারকে চিঠি দেন। তাই তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হল।”
অথচ পুলিশের নথি বলছে, গত দুই মাসে শুধু রায়গঞ্জ থানা এলাকায় চারটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। একাধিক খুনের চেষ্টা, ছিনতাই ও দুষ্কৃতীদের মধ্যে প্রকাশ্যে গুলির লড়াইয়ের ঘটনাও রয়েছে। কিছুদিন আগে রায়গঞ্জ জেলা আদালত চত্বরে খুনের মামলায় অভিযুক্ত এক মহিলাকে গুলি করে খুনের চেষ্টারও অভিযোগ ওঠে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, “শহরে পর পর অপরাধ ঘটছে। একাধিক অভিযুক্ত অধরা। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ সুপারের সংবর্ধনা নেওয়া অনুচিত।” জেলা বামফ্রন্টের সচিব অপূর্ব পালের সন্দেহ, পুলিশ সুপার ব্যর্থতা ঢাকতেই নিজের ঘনিষ্ঠদের দিয়ে এ দিন সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন। তিনি বলেন, “রজেলার আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। অথচ পুলিশ সুপারের সংবর্ধনা নিতে এতটুকু সঙ্কোচ হল না?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.