পায়ের আঙুলে ‘সামান্য’ অস্ত্রোপচারের জন্য চার মাস ধরে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে এক যুবককে। তাঁর অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের জন্য বার বার ‘ডেট’ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট শল্য চিকিৎসকের দেখা পাচ্ছেন না। তা ছাড়া, হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল রিপোর্টে ভুল ধরা পড়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।
অমিতকুমার পাল নামে ওই যুবক শ্রীরামপুরের গাঙ্গুলিবাগানের একটি চশমার কারখানার কর্মী। তাঁর অভিযোগের ব্যাপারে হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক ওয়াকিবহাল। শল্য চিকিৎসকের অভাবের কারণেই সমস্যা হচ্ছে বলে তাঁরা
|
ছবি: প্রকাশ পাল। |
স্বীকার করেছেন। হাসপাতালের সুপার বিবেকানন্দ সরকার অবশ্য বলেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। ওই যুবক আমার সঙ্গে দেখা করলে সমস্যার সুরাহার চেষ্টা করব।” মাস চারেক আগে অমিতের ডান পায়ের বুড়ো আঙুলে সংক্রমণ হয়। ওয়ালশের শল্য চিকিৎসক পূর্বানন চক্রবর্তী তাঁকে অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানান। নির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে অস্ত্রোপচারের ‘ডেট’ও দেন। কিন্তু অমিতের অভিযোগ, “সে দিন পূর্বাননবাবু আসেননি। তার পরেও একাধিকবার একই ঘটনা ঘটেছে।”
তবু, তার মধ্যেই মাস দেড়েক আগে পূর্বাননবাবুর পরামর্শ মতো হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করান অমিত। ১৬ নভেম্বর তাঁর রক্তে ‘সুগার’-এর যে পরিমাণ (৪২০ মিলিগ্রাম) ধরা পড়ে তাতে তিনি আঁতকে ওঠেন। বাইরে থেকে একই পরীক্ষায় অবশ্য তাঁর ‘সুগার’-এর পরিমাণ স্বাভাবিক (৭০ মিলিগ্রাম থেকে ১৪০ মিলিগ্রাম) রয়েছে বলে দেখা যায়। অমিত বলেন, “দু’টি রিপোর্টে আকাশ-পাতাল হেরফের দেখে হাসপাতালের চিকিৎসক আমাকে ফের একই পরীক্ষা করাতে বলেন। ২৭ নভেম্বর ফের হাসপাতালে গিয়ে দু’টি রিপোর্টই টেকনিশিয়ানের হাতে দিই। এ বার চট করে রক্ত নিয়ে মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট মেলে। নতুন রিপোর্টে সুগারের পরিমাণ ঠিক ছিল।” রিপোর্ট ঠিকঠাক দেখে পূর্বাননবাবু ২৭ নভেম্বর অস্ত্রোপচারের কথা বলেন। ওই যুবক বলেন, “ওই দিন গিয়ে শুনি ডাক্তারবাবু আসেননি। তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তখন সমীর মণ্ডল নামে অন্য সার্জেনকে দেখাই। উনি অস্ত্রোপচারের জন্য ১৮ ডিসেম্বর ডেট দেন।” তাঁর অভিযোগ, “ওই দিনে গিয়ে দেখি দু’জনের মধ্যে কেউ আসেননি।” এর পরে ২৮ ডিসেম্বর অমিতের সমস্যার কথা জানতে পেরে অ্যানাস্থেসিস্ট শুভাশিস চক্রবর্তী রায়চৌধুরী তাঁর পায়ে ‘ড্রেসিং’ করে দেন। হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “ছেলেটির পায়ের সংক্রমণটি দেখেছি। ছোট্ট একটা অস্ত্রোপচার করলেই সেরে যাবে। শল্য চিকিৎসকের অভাবের জন্যই সমস্যা হচ্ছে।”
হাসপাতালের পরিকাঠামোর যা চেহারা দাঁড়িয়েছে, তাতে সেখানকারী কর্মীদের বেশির ভাগই বিরক্ত। শনিবার দুই কংগ্রেস কাউন্সিলর গিরিধারী সাহা এবং রাজেশ শা-র নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে শল্য চিকিৎসক রয়েছেন দু’জন। গত কয়েক দিন ধরে অসুস্থতার কারণে দু’জনেই আসেননি। ফলে, অনেক রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সোমবার অবশ্য পূর্বাননবাবু কাজে যোগ দেন। তবে, তাঁর বদলির নির্দেশ এসেছে। দু’-এক দিনের মধ্যেই তিনি চলে যেতে পারেন। তখন যে ফের একপ্রস্থ সমস্যায় পড়তে হতে পারে, সে কথা মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। |