ঘাটালের পরে ঝাড়গ্রাম। প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে তৈরি অসুস্থ নবজাতক শিশুর চিকিৎসা কেন্দ্রের (সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট) উদ্বোধন হল ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালেও। তবে, ঘাটালের মতোই ঝাড়গ্রামেও এসএনসিইউ পরিষেবা এখনই চালু হচ্ছে না। যে কারণে সোমবারই হাসপাতালে প্রসব হওয়া ৩টি অসুস্থ নবজাতককে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউ-তে ‘রেফার’ করতে হল।
কবে ঝাড়গ্রামে এসএনসিইউ পরিষেবা পাওয়া যাবে?
দুপুরে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের দোতলায় ২০ শয্যার এসএনসিইউ-র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা ঘুরে দেখলাম। ফলে এসএনসিইউ সম্পূর্ণ জীবাণু-শূন্য করতে কয়েকটা দিন সময় লাগবে। দিন চারেকের মধ্যেই পরিষেবা পাওয়া যাবে।” পাশে থাকা রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে শুধরে দেন, “ম্যাডাম, আরও কয়েকটা দিন লাগতে পারে।” এর পর অপ্রস্তুত চন্দ্রিমাদেবী বলেন, “সাত দিনের মধ্যে এসএনসিইউ চালু হয়ে যাবে।”
কিন্তু ঘাটাল হাসপাতালে তো এখনও (২০ নভেম্বর উদ্বোধন হয়েছিল) এসএনসিইউ পরিষেবা চালু হয়নি। চন্দ্রিমাদেবীর আশ্বাস, “নতুন বছরের গোড়ায় ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের এসএনসিইউ চালু হবে।”
|
এসএনসিইউ এখনও একশো ভাগ জীবাণু-শূন্য করা যায়নি বলেই চালু হয়নিজানিয়েছেন ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের সুপার অনুরাধা দেব। কিন্তু কোনও ইউনিট একশো ভাগ জীবাণু-মুক্ত করতে দিন সাতেক সময়ই তো যথেষ্ট। সেখানে এক মাস লাগল কেন? স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জনবাবুর জবাব, “ঘাটালে এসএনসিইউ কেন্দ্রের সোয়াব টেস্ট প্রথমে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে জীবাণু-মুক্ত হয়নি জানিয়ে দেওয়ায় পুণে ও দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। দু’-এক দিনের মধ্যেই সেই রিপোর্ট চলে আসবে। তার পরই চালু হবে পরিষেবা।”
এর আগে তো একাধিক হাসপাতালে এসএনসিইউ উদ্বোধনের দিনই পরিষেবা চালু হয়ে গিয়েছে। সেই ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয়নি কেন? স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, ওই সব ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই এসএনসিইউতে শিশু রাখা হচ্ছিল। ফলে জীবাণু মুক্তই ছিল। পরে ‘সোয়াব টেস্ট’ করেও কিছু পাওয়া যায়নি। ‘জীবাণু-শূন্যে’র এই তত্ত্ব অবশ্য মানতে রাজি নন চিকিৎসক মহলের একাংশ। স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, এসএনসিইউ-র জন্য জন্য ন্যূনতম ৫ জন বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চিকিৎসক ও দশ জন নার্স থাকা দরকার। কিন্তু ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের এই উদ্দেশে সম্প্রতি ৩ জন বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চিকিৎসক যোগ দিয়েছেন। আলাদা নার্স নিয়োগ না হওয়ায় হাসপাতালেরই দশ জন নার্সকে ওই কেন্দ্রের কাজকর্ম সামলানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। টেকনিসিয়ান পদে কোনও নিয়োগ হয়নি। পর্যাপ্ত সংখ্যায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী না থাকলে ২৪ ঘণ্টার এই পরিষেবা সামলানো সম্ভব নয়। সেই কারণেই এখনই কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব নয়।
এ দিনের অনুষ্ঠানে চন্দ্রিমাদেবী বলেন, “কিছু কিছু অভাব রয়েছে। আগামী দিনে তা পূরণ করা হবে। রাজ্যে দীর্ঘ দিন চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ হয়নি। আমাদের সরকারের উদ্যোগে হেলথ সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সমস্যা শীঘ্রই মিটে যাবে।” |