টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট
রুগ্ণ ইএসআই হাসপাতাল, শ্রমিকরা অসহায়
থাকার কথা ১৭৭ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। নেই তাঁদের মধ্যে ১০১। সাধারণ ডাক্তারদেরও ২৪৪টি পদ খালি। ওয়ার্ড মাস্টার, ওটি সহায়ক, স্টোর কিপার, সব বিভাগেই কর্মী যত রয়েছেন, তার চেয়ে বেশি পদ খালি পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি একটি সরকারি রিপোর্টে এমনই চিত্র উঠে এল এ রাজ্যের ইএসআই হাসপাতালগুলির। যা থেকে স্পষ্ট, এ রাজ্যে সংগঠিত শিল্পেও শ্রমিকদের অধিকার মর্যাদা পায় না সরকারের কাছে।
ইএসআই আঞ্চলিক বোর্ড একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে জুলাই মাসে। রাজ্যের ১৪টি ইএসআই হাসপাতাল সরেজমিনে পরিদর্শন করে ৯ সদস্যের ওই টাস্ক ফোর্স সম্প্রতি তাদের রিপোর্ট রাজ্যের শ্রমমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যের ইএসআই হাসপাতালগুলিতে শয্যা সংখ্যা যথেষ্ট নয়, যা আছে সেগুলির অবস্থাও অত্যন্ত জীর্ণ। অভাব রয়েছে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীর। এর উপর ২০১৩ সালে বেশ কিছু চিকিৎসক, নার্স, ফিজিওথেরাপিস্ট, ফার্মাসিস্ট, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান প্রভৃতি পদে যত কর্মী অবসর নেবেন। তার ফলে ইএসআই প্রকল্পের হাসপাতালগুলি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে, মনে করছেন টাস্ক ফোর্সের কিছু সদস্য। শ্রমমন্ত্রী পুর্ণেন্দু বসু বলেন, “রিপোর্ট পেয়েছি। সময় মতো যা বলার বলব।”
শ্রমিক-কর্মীরা যাতে চিকিৎসা পান তা ভেবে ১৯৫০ সালে ইএসআই প্রকল্পটি শুরু হয়। একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পে শ্রমিকদের চিকিৎসা-সংক্রান্ত দায়িত্ব রাজ্য বহন করে, অন্য রাজ্যে কেন্দ্র তা করে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গে ইএসআই হাসপাতালগুলিকে নিয়ে শ্রমিকদের ক্ষোভ জমছিল। কিন্তু এই প্রথম ইএসআই হাসপাতালগুলির দশা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ হল বলে দাবি আইএনটিটিইউসি-র দোলা সেনের।
টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে বলা হয়েছে, অধিকাংশ হাসপাতাল ভবনের দশাই খুব খারাপ। অবিলম্বে মেরামতির দরকার। প্রায় কোনও ইএসআই হাসপাতালেই জরুরি বিভাগের সঙ্গে ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’ নেই। নেই যথার্থ ‘বার্ন ইউনিট’ও। অনেক হাসপাতালেই এক্সরে মেশিন নেই। যেখানে আছে সেগুলি মান্ধাতার আমলের। ইউএসজি মেশিনও প্রায় কোনও হাসপাতালেই নেই টাস্ক ফোর্সের দেওয়া রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। কোনও হাসপাতালেই আধুনিক প্রযুক্তির ‘প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি’ নেই। রোগীদের জন্য ‘লিফট’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও দু’একটি ছাড়া তা কোনও হাসপাতালেই নেই। হাসপাতালগুলির অধিকাংশ শয্যাই অতি-পুরনো এবং বহু শয্যাতেই মরচে ধরে গিয়েছে বলে রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে। দু’একটি বাদে কোনও ইএসআই হাসপাতালেই ২৪ ঘন্টা অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা নেই।
এক নজরে
অধিকাংশ হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন পর্যন্ত নেই।
অনেকগুলিতে জরুরি বিভাগ বলে কার্যত কিছু নেই।
অপারেশন থিয়েটার যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন নয়।
রোগীদের খাবারের জন্য বরাদ্দ যথেষ্ট নয়।
কোনও হাসপাতালেই ‘বার্ন ইউনিট’ নেই।

রাজ্যের অন্যতম প্রধান শিল্পাঞ্চল আসানসোল-দুর্গাপুরেও শ্রমিকদের চিকিৎসাব্যবস্থা তথৈবচ। বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে ইএসআই গাঁটছড়া বাঁধলেও, বকেয়া টাকা না মেটানোয় সে ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। দুর্গাপুর মিশন হাসপাতাল ও বিবেকানন্দ মিশন হাসপাতাল আর রোগীদের পরিষেবা দিতে চাইছে না। ইএসআই থেকে পাঠানো রোগীদের যেতে হচ্ছে বর্ধমান বা কলকাতায়। দ্য মিশন হাসপাতালের সিইও প্রবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ইএসআই হাসপাতালের সঙ্গে কাজ করা বন্ধ করেছি। এক বছর আগে বকেয়া ছিল এক কোটি টাকা। এখনও ২৫ লক্ষ টাকা পাওনা। পরিষেবার জন্য যে হারে সরকার টাকা দেয়, তা আমাদের তুলনায় কম। তা সত্ত্বেও টাকা মেটাতে দেরি করতে দেরি হয়।”
শ্রমিক কল্যাণের প্রকল্পটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই টাস্ক ফোর্সে অন্যতম সদস্য বর্ষীয়ান সিটু নেতা বিনয় কিশোর চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “অধিকাংশ ইএসআই হাসপাতালের পরিকাঠামো অত্যন্ত খারাপ। তাছাড়া, বিমা থাকলেও চিকিৎসায় খরচ-করা টাকা ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়।”
টাস্ক ফোর্সের আর এক সদস্য আইএনটিইউসি-র রমেন পাণ্ডে মনে করেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানোর সঙ্গে সেগুলি চালানোর জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তাঁর আরও দাবি, “সংগঠিত বা অসংগঠিত, যে কোনও ক্ষেত্রে কেউ পাঁচ বছর কাজ করলে সেই শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ইএসআই হাসপাতালের পরিষেবা পাওয়া উচিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.