বাড়ির ঠিকানার সঙ্গেই হারিয়েছে জন্মদিনটাও। সরকারি কাগজে জন্ম তারিখে যা লেখা তা আনুমানিক। বছরের কবে সেই দিনটা এসে ঘুরে যায়, তার খোঁজ রাখে না কোয়েল, রূপা, সমু বা আশারা। তবে একটা দিন ওদের কপালেও আঁকা হয় চন্দনের টিপ, সামনে রাখা হয় পায়েসের বাটি, কেক কেটে উদযাপন হয় জন্মদিন। নিজেদের আঁকা কার্ড ওরা তুলে দেয় অতিথিদের হাতে। |
ওরা সকলেই জলপাইগুড়ির বেসরকারি হোম অনুভবের আবাসিক কিশোরী। কেউ ডুর্য়াসের কোনও চা বাগান থেকে পাচারের সময়ে উদ্ধার হওয়া, কেউ বা অনাথ, কেউ আবার বাড়ি থেকে পালিয়ে, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতঘুরে এসেছে হোমে। হোমের কো অর্ডিনেটর দীপশ্রী রায় বলেন, “ওদেরও কারও জন্মদিনের কথা মনে নেই। সকলেই খুব ছোট বয়সে হোমে এসেছে। ওরা স্কুলে যায়, সহপাঠীদের জন্মদিন পালনের গল্প শোনে, ওদের খারাপ লাগে। ওদের সেই অদেখা জন্মদিন পালনের স্বাদ দিতে বছরের শেষ দিনে সকলের জন্মদিন পালন করা হয়।”
কী আয়োজন হয় জন্মদিনে? সোমবার বছরের শেষ দিনেই শহরের ক্লাব রোডের হোমে সাজো সাজো পরিবেশ। রঙিন কাগজ, রাংতার চাদরে ঢাকা পড়েছে হোমের সামনের একচিলতে উঠোন। বড় কড়াইতে দুধ, কাজু কিসমিস দিয়ে তৈরি হয়েছে পায়েস। রান্না হয়েছে মাছ মাংসের পদ। দুপুর থেকেই আসতে শুরু করে অতিথিরা। সকলের হাতে ওদের জন্য এক একটি উপহার, সমু, আশারাও অতিথিদের হাতে তুলে দিয়েছে নিজেদের আঁকা ছবির কার্ড। বছর পাঁচেক আগে ডুয়ার্সের বাগান থেকে উদ্ধার হয়ে হোমে এসেছে সমু। ১৪ বছরের সমু বলে, “হোমের দিদি বলেছে, আজকে আমার জন্মদিন। আশা, রূপা, মানি ওদেরও আজকে জন্মদিন। প্রতিবছর আমাদের জন্মদিনে অনেক লোক আসে, ওঁদের জন্য আমরা একসপ্তাহ ধরে কার্ডে ছবি আঁকি। হরিণের ছবি এঁকেছি।” |
জন্মদিনের আমন্ত্রণে এসেছিলেন জলপাইগুড়ির ওয়েলফেয়ার আ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী, তিনি বলেন, “হোমের কিশোরীদের চোখে মুখে খুশি দেখে ভাল লাগল। জন্মদিনে পায়েস, ঘুঘনি খেয়েছি। নতুন পোশাকে ঘর ছাড়া ছোট ছোট মেয়েদের আনন্দে মেতে উঠতে দেখাটাই একটা বড় প্রাপ্তি।”
হোমের ৫৩ জন বালিকা এবং কিশোরীদের একসঙ্গে জন্মদিন পালনকে স্মরণীয় করে রাখতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন হয়। ‘কথানদী’ নামে একটি স্মারক পত্রিকাও এ দিন হোম কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেন। হোমের পক্ষে দীপশ্রী দেবী জানান, আড়াইশো অতিথিকে এ দিন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। |