সভা কক্ষের ভিতরে পুরসভায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের বোর্ড মিটিং। বাইরে বিরোধী বামেরা বসল ‘নকল’ অধিবেশনে। সোমবার শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড মিটিং ঘিরে এমনই নাটক চলল। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় দলত্যাগী চেয়ারম্যান নান্টু পালের পদত্যাগের দাবিতে ৩ মাস ধরেই পুরসভার অধিবেশনে অংশ নিচ্ছে না বামেরা। এ দিনও তারা যোগ দেননি। কংগ্রেসের অধিকাংশ কাউন্সিলারও কয়েক মাস বোর্ড মিটিঙে অংশ নেননি। নাগরিক পরিষেবা যাতে বিপর্যস্ত না হয় সে জন্য কংগ্রেস কাউন্সিলরদের মধ্যে মেয়র এবং মেয়র পারিষদরা গত ২টি সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ দিন অবশ্য দলের তরফে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের সভায় উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেও কাউন্সিলরদের একাংশ গরহাজির ছিলেন। তাঁদের একাংশ চেয়ারম্যানের বিষয়টি মীমাংসা না হলেও কেন সভায় যোগ দিতে বলা হয়েছে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকারের পদত্যাগ দাবি করেন কেউ কেউ।
এ দিন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “রাজ্য সরকার দলত্যাগ বিরোধী আইন মানছে না। আমরা তার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। বাসিন্দাদের স্বার্থে কাউন্সিলরদের সভায় যোগ দিতে বলা হয়। যাঁরা বুঝতে চাইছেন না, তাঁরা মেয়র পারিষদ পদ পাননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। যে ডালে বসে আছেন সে ডাল কাটতে চাইছেন।”
অন্য দিকে তিন তলায় করিডরে বামেরা নকল অধিবেশন বসান। সেখানেই শহরের অবৈধ নির্মাণ নিয়ে কেনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদকে কেন সরানো হল তা জানানোর দাবি তোলেন। বার্ধক্য ভাতা-সহ বিভিন্ন ভাতা না-পাওয়া, বিপিএল তালিকায় জায়গা না পাওয়ার মতো বাসিন্দাদের অন্য অভিযোগগুলি তুলে ধরেন। নকশা ছাড়াই ১১টি বাণিজ্যক ভবনের নির্মাণ কী করে হচ্ছে সেই প্রশ্ন তোলেন। শুধু বিল্ডিং বিভাগ নয়, তাদের অভিযোগ এর সঙ্গে জোটের অন্য মেয়র পারিষদরাও যুক্ত। তাঁরা আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে এ সব করছেন। নুরুলবাবু বলেন, “নিয়ম মেনে ১৭ জন কাউন্সিলর চেয়ারম্যানের নামে অনাস্থা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। অথচ পুর আইন মেনে এ নিয়ে সভা ডাকা হল না। আমরা প্রথম থেকেই ওই অভিযোগে সভায় যাব না বলে জানিয়েছি।”
মেয়র অবশ্য এই ব্যাপারে বলেছেন, “বিরোধীরা কোথায় কী করলেন তা বলতে পারব না। এ দিন সভায় উপস্থিত হতে দলের কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।” তবে চেয়ারম্যানের দলত্যাগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এবং দাবি কংগ্রেসের তরফে তোলা হয়েছিল তা থাকছে। এ দিন সভায় গরহাজির ছিলেন কংগ্রেসের ৫ জন কাউন্সিলর। তার মধ্যে সীমা সাহা অসুস্থ ও অতুল দাস শহরের বাইরে রয়েছেন বলে মেয়র দাবি করেন। অনুপস্থিত ছিলেন সবিতা অগ্রবাল, সুজয় ঘটক এবং কাজল চন্দ। কাজলবাবু বলেন, “দলের স্বার্থ বিসজর্র্ন দিয়ে এ ভাবে পুরসভা বোর্ডে জোটে থাকার বিষয়টি সমর্থন করি না। তাই এ দিন সভায় যাইনি।” এক ধাপ এগিয়ে সুজয়বাবু জানান, জোটে কংগ্রেসের স্বার্থ রক্ষা করতে পারছেন না বর্তমান জেলা নেতৃত্ব। জোট করে বোর্ড গঠনের সময়ে ঠিক হয়েছিল চেয়ারম্যান-সহ ১০টি পদের মধ্যে ৫টি করে পদ নেবে কংগ্রেস, তৃণমূল। আর চেয়ারম্যান তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় একটি পদ কমে গিয়েছে কংগ্রেসের। অথচ তা উদ্ধার করতে পারছেন না নেতৃত্ব। ওই ব্যর্থতার দায় নিয়ে জেলা সভাপতির পদত্যাগ করা উচিত বলেও জানান সুজয়বাবু। চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে বোর্ড মিটিংয়ে যোগ না দিতে দলের তরফেই প্রথমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি এখনও বদলায়নি। তা হলে কেন ফের কাউন্সিলরদের যোগ দিতে বলা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুজয়বাবুরা। |