ফের সতর্কতা তৃণমূলে, বার্তা কাকলি-সোনালিদের
লের নেতা-নেত্রীদের লাগাতার বেসামাল মন্তব্যের রাশ টানতে ফের উদ্যোগী হলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহের সাম্প্রতিক মন্তব্যের জন্য তাঁদের সতর্কও করে দেওয়া হল। তাঁদের মন্তব্য যে দলীয় নেতৃত্ব অনুমোদন করছেন না, মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বার্তাও দুই সাংসদ-বিধায়ককে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে দলের আরও জলঘোলা এড়াতে এই নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা বন্ধ রেখেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
বস্তুত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলেরই অনুগামী কর্মী ইউনিয়নের হাতে নিগৃহীত হওয়ার পরে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যখন ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, তখনই নেতা-সাংসদ-বিধায়কদের মুখে লাগাম পরাতে নির্দেশিকা জারি হয়েছিল শাসক দলের অন্দরে। এসএমএস পাঠিয়ে বলা হয়েছিল, বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সামনে মুখ খোলার আগে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু অতি সম্প্রতি কাকলি, সোনালি বা মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম কেউই টিভি চ্যানেলের সামনে মুখ খোলার আগে দলীয় নেতৃত্বের অনুমতি নেননি বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। এবং তার পরে যা বলেছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা অতি বিতর্কিত। এমন ঘটনায় আখেরে দলের ভাবমূর্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বুঝে ফের সক্রিয় হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
অসতর্ক মন্তব্য করে দলের বিড়ম্বনা ডেকে না-আনার জন্য সোমবার ফের দলীয় সহকর্মীদের বার্তা দিয়েছেন পার্থবাবু। তাঁর কথায়, “আমি আবার বলছি, আমাদের সকলেরই বাক্ সংযম অভ্যাস করা উচিত। কোন কথা কোথায় কী ভাবে বলা উচিত, আমাদের মাথায় রাখতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের আচরণ এবং কথাবার্তার উপরে মানুষ নজর রাখেন।” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তৃণমূলের মহাসচিব আরও বলছেন, “সতর্ক থেকেই কুৎসা-অপপ্রচারের জবাব আমাদের দিতে হবে। কুৎসার জবাব দিতে গিয়ে আমরা যেন অসতর্ক হয়ে না পড়ি!” মুখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে সিপিএমের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমানের কটূক্তির সমালোচনা করতে গিয়ে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা যে ভাবে লক্ষ্মণরেখা ছাড়াচ্ছেন, পার্থবাবুর ইঙ্গিত সেই দিকেই। জনসভায় বক্তব্যের জন্য অনুমতি নেওয়ার কথা হয়নি ঠিকই। তবে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বা বেচারাম মান্নারা সেই দিকেও নজর রাখুন, চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে বলা হচ্ছে, কোনও বিষয়ে দলের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানানোর এক্তিয়ার রয়েছে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং মহাসচিব পার্থবাবুরই। দলের বাকি নেতারা যেন এই তথ্য মাথায় রাখেন। তবে পরপর বেসামাল ঘটনার প্রেক্ষিতে দলের অন্দরেই দাবি উঠেছে, তেমন হলে পাকাপাকি ভাবে কাউকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হোক। তৃণমূলের প্রথম সারির এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, “এই ভাবে চলতে থাকলে দলের শৃঙ্খলা, ভাবমূর্তি কোনও কিছুই বজায় রাখা মুশকিল! বারাসতের ঘটনা নিয়ে ববি যা বলেছেন, তাতে হয়তো তদন্ত প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠতে পারে। আর কাকলি এবং সোনালির মন্তব্যে সরাসরিই জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। মনে হচ্ছে, সরকার বা দল যেন আদৌ সংবেদনশীল নয়।”
প্রসঙ্গত, একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলকে তিন দিন আগে বারাসতের সাংসদ কাকলি বলেছিলেন, “পার্ক স্ট্রিটে আদৌ কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। যা হয়েছে, তা হল পেশাদার কাজ-কারবার নিয়ে ওই মহিলা ও তাঁর খদ্দেরদের মধ্যে গোলমাল।” দিল্লির ধর্ষণ-কাণ্ডের প্রতিবাদ কর্মসূচির অবসরে বিধায়ক সোনালি রবিবার মন্তব্য করেন, “ধর্ষণ একটি নিরবচ্ছিন্ন ঘটনা। এটা চিরকাল হয়ে এসেছে। কলকাতা বা বড় শহরে হলে হইচই হয়। গ্রামেগঞ্জে হলে ততটা সোরগোল পড়ে না।” তৃণমূলেরই এক প্রবীণ বিধায়কের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এই রাজ্যে দিল্লির মতো ঘটনা ঘটলে প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু এই ধরনের মন্তব্য প্রকৃতপক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর কথাকেই নস্যাৎ করছে! মনে হচ্ছে, তা হলে তো প্রতিবাদ বা মোকাবিলায় কিছু করণীয়ই নেই!” বস্তুত, বারাসতে এক মহিলাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগের ঘটনায় তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই বিষয়টিকে যে ভাবে ‘পরিবারের মধ্যের ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী ববি, তাকেও ভাল চোখে দেখছেন না তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। বিরোধীরা অবশ্য মনে করছেন, শাসক দল হলে তার দায়িত্বও বেশি হয়। তাই ভুল মন্তব্যের সংশ্লিষ্ট নেতা-নেত্রীদের তিরস্কার প্রকাশ্যে আনা উচিত ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “আনিসুর ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁর মন্তব্য অনুমোদন না-করার কথা দল বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। সত্যিই সংবেদনশীল হতে চাইলে তৃণমূল নেতৃত্ব কাকলিদের নিন্দা করতেন প্রকাশ্যে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.