নিজেকে বদলান, পাল্টা বার্তা ফেসবুকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নিরীহ এক টুকরো নববর্ষের শুভেচ্ছা। আর তারই প্রত্যুত্তরে উথলে এল অনেক রাজ্যবাসীর মনের কথা!
নিজস্ব কায়দায় নিজের ফেসবুক পেজে সোমবার সন্ধ্যায় রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন “আমরা বদলালে পৃথিবীও বদলায়। তাই চলুন আমাদের প্রত্যেকে প্রথম পদক্ষেপটা করি। আসছে বছরের নতুন সূচনা করি। যাতে হাস্যময় পৃথিবীর একটা নতুন ভোর দেখা যায়।” সঙ্গে নতুন বছরে সমৃদ্ধির জন্য শুভকামনা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই বদলানোর ডাক শুনেই তাঁকে পাল্টা বার্তা ফিরিয়ে দিয়েছে ফেসবুক-জনতার একটা বড় অংশ! অচিন্ত্য পাল, অভিজিৎ সাহা, সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ গুটলা, নেহা শা-রা রাজ্যের কর্ণধারকেই আহ্বান জানিয়েছেন নিজেকে প্রথমে বদলে দেখানোর জন্য! ‘পরিবর্তনে’র স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসা মমতার কাছে যা তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বটে!
শুরুটা অবশ্য হয়েছে কিছু আগেই। দিল্লির ধর্ষণ-কাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট করতেই তাঁর দিকে ধেয়ে এসেছিল গুচ্ছ অপ্রিয় মন্তব্য। সকলেরই প্রশ্নের নির্যাস, পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক ধর্ষণের অভিযোগ সামলাতে রাজ্য প্রশাসনের মনোভাব কী? দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে মুখর হলেও নিজের রাজ্যে একই ঘটনা ঠেকাতে না পারা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী নীরব কেন? সেই ধারাই অব্যাহত থেকেছে বর্ষশেষের সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর পোস্টের উপরে মন্তব্যের সারিতে। |
আমরা বদলালে পৃথিবীও বদলায়।
তাই চলুন
আমাদের প্রত্যেকে প্রথম পদক্ষেপটা করি।
আসছে
বছরের নতুন সূচনা করি। যাতে হাস্যময়
পৃথিবীর একটা নতুন ভোর দেখা যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
|
বস্তুত, মমতার জমানায় শিল্প, শিক্ষা বা আইনশৃঙ্খলা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রকৃত কোনও পরিবর্তন যে চোখে পড়ছে না, রাজনীতির কারবারিদের অনেকে সে কথা বারবার বলছেন। সরব হচ্ছেন বহু বিশিষ্ট জনও। কিন্তু বিরোধীদের মত বা বিশিষ্টদের সমালোচনাকে ‘রাজা চলে বাজার, কুত্তা ভোঁকে হাজার’-এর ঝাপ্টায় উড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার সেই একই প্রশ্ন উঠে আসতে শুরু করেছে অজানা-অচেনা জনতার মধ্যে থেকে। যাদের সঙ্গে নিজের দৃঢ় সংযোগের কথা গর্ব করে বলেন তৃণমূল নেত্রী। এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর কথায়, “রাজ্যে নতুন শিল্প আসছে না। চাকরির বাজার নেই। শিক্ষাঙ্গনে তাণ্ডব চলছে। এমনকী, মহিলাদের সম্ভ্রম বা সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তাটুকুও যেতে বসেছে! এর পরেও শুধু ভাল ভাল কথা শুনতে কার ভাল লাগে?”
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে অচিন্ত্য পালের আর্জি, “সবার আগে নিজের দলের নিচু শ্রেণির নেতাদের নিচু ও স্বার্থপরতার মানসিকতাটা পরিবর্তন করুন!... আপনাকে ও আপনার কর্মের লক্ষ্যকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আপনার হাত ঠিক থাকলেও হাতিয়ারগুলো অকেজো!” সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “নতুন বছর খুশির হবে, এটা মনে করছি না। আপনার দলের আচরণ আগে ঠিক করুন!” অভিজিৎ সাহা আরও চাঁছাছোলা “নিজের দৃষ্টিভঙ্গি আগে বদলান! পার্ক স্ট্রিট হলে সাজানো আর দিল্লি হলে নিন্দনীয়, এ জিনিস কত দিন দেখব?”
ক্ষোভের মাত্রা ধর্ষণের ‘আমরা-ওরা’ নিয়েই বেশি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অন্য প্রত্যাশাও আছে। কৌশিক সরকার যেমন লিখেছেন, বৃহৎ ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য নতুন বছরটা ভাল যাক! কর্মসংস্থান হোক! দিব্যেন্দু নামে এক জনের আর্জি, “দিদি, নতুন বছরে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের দিকে একটু নজর দিন। নইলে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষায় আরও পিছিয়ে যাবে।”
মহাকরণে ১৯ মাস পেরিয়ে এসে রাজ্যবাসীর মনের কথা আঁচ করতে পারছেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরাও। ফেসবুকে না-হলেও রাজ্যবাসীর প্রতি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেছেন, “২০১৩ সাল রাজ্যের জন্য ভাল কাটুক। উন্নয়নের জন্য ভাল হোক। শিল্প ও কৃষি এগোক। যা করতে পেরেছি, তাকে সংহত করার জন্য সকলে সচেষ্ট হই। যা করতে পারিনি, তা করার জন্য সকলের সহযোগিতা নিই।” তাঁদের সামনে আরও অনেক পথ পাড়ি দেওয়ার আছে, করা হয়নি এমন কাজ বকেয়া আছে এ সব সত্যই শুভেচ্ছা-বার্তার মাধ্যমে কৌশলে মেনে নিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী।
জনতা শিল্প চেয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করছে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য তাঁর প্রিয় শিল্প-কলাকে ছাড়েননি। দিল্লির নিগৃহীতা ও নিহত তরুণীর স্মরণে ফেসবুকেই মুখ্যমন্ত্রীর কবিতা ‘সে আর নেই। তাণ্ডব আজ লজ্জিত, জীবনে জীবন নেই। সভ্যতার প্রদীপ নিভে গেছে, তেল আর নেই। মোমবাতির সলতে জ্বলছে। আলো তাতে নেই’। যা দেখে এক জন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, “যারা বেঁচে আছে, তাদের জন্য কিছু করুন!”
পরিবর্তনের কাণ্ডারীর সামনে যেন আয়না ধরতে চাইল ফেসবুক!
|