বাল্যবিবাহ রুখতে পথনাটক কুপিলায়
তার অজান্তে পরিবারের সদস্যরা বিয়ে ঠিক করে। স্কুল পড়ুয়া কিশোরী প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে ক্লাবের ছেলেদের দ্বারস্থ হয় ওই ছাত্রী। ক্লাবের ছেলেরা গোটা বিষয়টি প্রশাসনকে জানায়। সেই মতো প্রশাসনিক কর্তারা অভিভাবকদের বুঝিয়ে ওই ছাত্রীর বিয়ে ভেস্তে দেয়— সোমবার ‘বাল্যবিবাহ’-এর প্রতিবাদে পথনাটক করে চমকে দেয় আয়োজক সংস্থা কুপিলা উন্নয়ন সংঘ।
পিছিয়ে পড়া ডোমকলের প্রত্যন্ত গ্রাম কুপিলায় গত ২৯-৩১ ডিসেম্বর তিন দিন ধরে দ্বিতীয় বর্ষ সম্মিলনী উৎসবের আয়োজন করে কুপিলা উন্নয়ন সংঘ।
তবে পথনাটক ছিল তাঁদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ। নাবালিকার চরিত্রে দশম শ্রেণির ছাত্রী দিলরুবা খাতুনের অভিনয় মনে করিয়ে দেয় ডোমকলের প্রতিবাদী কন্যা আজিরন খাতুনকে। পথনাটক নির্মাণের প্রেরণা তো ওই আজিরনই। পড়াশোনার জন্য নিজের বিয়ে ভেস্তে দেওয়ার সাহস দেখায় ওই কন্যা। পথনাটক দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, “নাবালিকা বিয়ের ব্যাপারে গ্রামবাসীদের সচেতনতা বাড়াতে আমি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বৈঠক করছি। পথনাটকের মধ্যে দিয়ে নাবালিকা বিয়ের প্রতিবাদ গ্রামের মানুষ তাদের ভাষায় যে ভাবে করেছে, তার তুলনা নেই।”
পুলিশ ও প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে ২০১২ সালে ভেস্তে দিয়েছে ডোমকলের বেশ কয়েকটি নাবালিকা বিবাহ। ওই ঘটনা গ্রামবাসীদের মধ্যে যে সচেতনতা বোধ গড়ে তুলেছে, তার বড় প্রমাণ মুর্শিদাবাদের পিছিয়ে পড়া সীমান্ত ঘেঁষা ওই কুপিলা গ্রাম। ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে এক সময়ে যেখানে নাটক দেখা যেত না, সেখানে এখন স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা অভিনয় করছে। পথনাটকে ১৫ জন কলাকুশলীর মধ্যে ছিল দু’জন মেয়ে। সেই দিলরুবা খাতুন ও কোয়েল খাতুন একযোগে জানায়, “পথনাটকে অভিনয় করে ভীষণ আনন্দ পেয়েছি। আমাদের অভিনয়ের চেয়েও নাটকের বিষয় দর্শক-শ্রোতাদেরও মন বেশি ছুঁয়ে গিয়েছে। এটা জানতে পেরে আরও বেশি করে ভাললাগা কাজ করছে।”
পথনাটিকা দেখতে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।
ওই গ্রামে বিনোদন বলতে কিছু নেই। চার দেওয়ালের ঘেরাটোপে বন্দি মেয়েদের জীবন। সম্মিলনী উৎসবকে তাঁরা বিনোদন হিসেবে বেছে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এগিয়ে আসেন। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিভাগে মহিলাদের অংশগ্রহণও ছিল বেশি। মিউজিক্যাল চেয়ার প্রতিযোগিতায় গ্রামের ৫০ জনেরও বেশি মহিলা নাম লেখান। স্থানীয় বাসিন্দা শামসুন্নাহার বেগম বলেন, “এক সময়ে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারতাম না। যদিও এখন সেই দমবন্ধ করা পরিস্থিতি নেই। তবে গ্রামে সম্মিলনী উৎসব শুরু হওয়ার পর থেকে পরিবারের সকলের সঙ্গে যে ভাবে আনন্দে মেতে উঠতে পারছি, আমাদের মেয়েদের কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা!”
আয়োজক সংস্থার সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, “এক সময়ে কুপিলা গ্রামে ছোটখাট যে কোনও ঘটনায় বোমাবাজি, খুন-সন্ত্রাস লেগেই থাকত। রাজনৈতিক দলাদলির কারণে বিশেষ করে নির্বাচনের আগে কুপিলা গ্রাম অশান্ত হয়ে উঠত। ফলে কুপিলা গ্রাম সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের ধারণা ভাল ছিল না। এখন অবশ্য পরিস্থিতির বদল ঘটেছে। সর্বস্তরের মানুষ একজোট হয়ে যে ভাবে উৎসবে অংশ নিয়েছে তা দেখার মতো।”
কুপিলা সিনিয়র মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত ওই উৎসবে কচিকাঁচাদের দৌড় প্রতিযোগিতা থেকে গ্রামের মহিলাদের শীতলপাটি বোনা ছাড়াও ছিল গ্রামের কৃষিজীবী মানুষদের নিয়ে ক্যুইজ। ছিল বিএসএফের সঙ্গে গ্রামবাসীদের ভলিবল ম্যাচও। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিসেবে বিড়ি বাঁধা-গুলতি দিয়ে বেলুন ফাটানো-শীতল পাটি বোনা থেকে ক্যুইজে উঠে এসেছে কৃষি বিষয়ক প্রশ্ন, যা গ্রামবাসীদের জীবনের সঙ্গে জড়িত। ফলে সাধারণ গ্রামবাসীরাও ওই প্রতিযোগিতার সঙ্গে একাত্মতা বোধ করছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সহজেই তারা অংশ নিচ্ছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.