|
|
|
|
বোমাবাজি, ব্যালট বাক্স, ছিনতাই, ভন্ডুল স্কুল ভোট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁথি ও এগরা |
শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির প্রবেশ ক্রমশ বিষময় হয়ে উঠেছে। স্কুলভোটকে ঘিরে হুমকি-পাল্টা হুমকির অভিযোগ ছিল এত দিন। এ বার ভোট গণনার সময় স্কুলে ঢুকে ব্যাপক বোমাবাজি করে ব্যালট পেপারের বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ায় অভিযোগ উঠল পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি স্কুলে। ফলে বাতিল হয়ে গেল উত্তর কাঁথি বিধানসভার কেন্দ্রের বাহিরী পূর্নিমা গার্লস স্কুল ও এগরার আলংগিরি স্কুলে পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন।
রবিবার বাহিরী পূর্নিমা গার্লস স্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের ৬টি আসনে এক দিকে তৃণমূলের প্রার্থীরা ও অন্য দিকে কংগ্রেস-সিপিএম মিলিত জোট প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়। সন্ধ্যায় ভোট গণনা চলাকালীন সপ্তম রাউন্ডের শেষে তৃণমূল বিরোধী প্রার্থীরা এগিয়ে যান। এই সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। নবম রাউন্ডের শেষে শ’খানেক সশস্ত্র মানুষ মোটর সাইকেলে করে স্কুল চত্বরে ঢুকে ব্যাপক বোমাবাজি করে। এরপর দুষ্কৃতীরা গণনাকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে পালায়। তৃণমূলের লোকেরাই ওই হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ কংগ্রেস ও সিপিএমের। জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক কণিষ্ক পণ্ডা অভিযোগ করেন, “গোটা ঘটনাটি পুলিশের সামনে ঘটলেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল।” সোমবার সকালে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় লঙ্কেশ্বর বাজারে পথ অবরোধ করা হয়। সিপিএমের মারিশদা জোনাল কমিটির সম্পাদক কালিপদ শিট বলেন, “স্কুলের পরিচালন সমিতির ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস হিংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে।”
তৃণমূলের জেলা সম্পাদক মামুদ হোসেন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “স্কুলের পরিচালন সমিতি থেকে তৃণমূলকে সরাতে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি মিলে রামধনু জোট তৈরি করেও যখন পরাস্ত করতে অপারগ, তখনই তারা গণ্ডগোল পাকিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ করছে।”
সিপিএম-তৃণমূলের সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুঠপাট ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের জেরে বাতিল হয়ে গেল এগরার আলংগিরি হাইস্কুলের ভোটও। গোটা ঘটনায় পুলিশি ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন ওই স্কুলের ভোটের প্রিসাইডিং অফিসার তরুণ মাইতি। এ দিন দু’পক্ষই নিজস্ব দাবি ও অভিযোগ নিয়ে থানায় এলে আলোচনায় বসেন এগরার সিআই প্রদীপ সমাদ্দার। তিনি বলেন, “অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। রবিবার তালা খুলে জল আনতে যাওয়ার সময় লোকজন গণনাকেন্দ্রে ঢুকে পড়ে ব্যালটবাক্স ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়।” পুলিশের দাবি, কয়েকশো উন্মত্ত জনতাকে সামাল দেওয়ার মতো ব্যবস্থা ছিল না। ভাঙচুর, লুঠপাট ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের সময় পুলিশ সরাসরি বাধা দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারত।
প্রিসাইডিং অফিসার তরুণবাবু অবশ্য জানান, গণনা শুরু হওয়ার পরই দু’দফায় ব্যালটবাক্স ছিনতাই করা হয়। ছিনতাই করা হয় ভোট সংক্রান্ত কিছু নথিও। তিনি বলেন, “ভোট নেওয়ার সময় থেকেই গণ্ডগোল হচ্ছে। পুলিশ তার অক্ষমতার কথা জানালে আমরা রবিবার ভোট গণনা বন্ধ রাখতাম। কিন্তু পুলিশ পরিস্থিতি আঁচ করতে পারেনি। বারবার বলা সত্ত্বেও গণনা কেন্দ্রে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না।” রবিবারের ঘটনায় এলাকায় তৃণমূল যতটা কোণঠাসা, ঠিক ততটাই উজ্জীবিত সিপিএম। সিপিএমের এগরা জোনাল কমিটির সম্পাদক ভুবন খাটুয়া বলেন, “আমাদের দু’জন এখনও গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। বেছে-বেছে আমাদের সমর্থকদের বারোটি দোকান ভাঙচুর ও লুঠপাট করা হয়েছে। সে সবের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি মোহনপুর থেকে যাদের নেতৃত্বে সশস্ত্র দুষ্কৃতী আনা হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। স্কুলভোটে হার অস্বীকার করতে তৃণমূল যে কাণ্ড করল, মানুষই তার বিচার করবেন।” অন্য দিকে, পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের এগরা-১ ব্লক সভাপতি সিদ্ধেশ্বর বেরা। তিনি বলেন, “আমাদের সমর্থকও হাসপাতালে ভর্তি আছেন। উভয়পক্ষের দোকানেই ভাঙচুর হয়েছে। আমাদের ভোটারদের ভোটদানে বাধা দিলে কোনও ঘটনাই ঘটত না। আমরা চাই, পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিক। তবে, পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল।” এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হলে কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক মানস করমহাপাত্র বলেন, “পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে তৃণমূলই গোটা ঘটনার জন্য দায়ী। এলাকায় সমর্থন খুইয়ে সিপিএমের কায়দায় জিততে চাইছিল তৃণমূল। গণনা চলাকালীন নিশ্চিত হার বুঝে সশস্ত্র দুষ্কৃতী দিয়ে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেছে।” |
|
|
|
|
|