পঞ্চায়েত ভোট আসছে। গ্রামাঞ্চলে ক্ষমতার পারদ ধরে রাখতে হলে চাষিদের সমর্থন একান্তই জরুরি। সেই হাওয়া বুঝেই সম্ভবত কৃষকদের সংগঠিত করতে তৎপর হয়েছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে ‘কিষান ও খেতমজুর তৃণমূল কংগ্রেস’ নামে পৃথক সংগঠন গড়ে তুলেছে তারা। ওই সংগঠনের ডাকেই সোমবার এক সমাবেশ হল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতেসেই জেলায় যেখানে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ‘লালদুর্গ’ অটুটই ছিল। |
এ দিন সমাবেশে উপস্থিত তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায় সে কথা মেনে নিয়েই বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের দল এখানে খুব ভাল ফল করতে পারেনি। গত ১৭ মাসে কী ভাবে উন্নয়ন এগিয়েছে, তা দেখেছেন। এ বার আমাদের সমর্থন করুন।” শুভেন্দু অধিকারী থেকে কৃষিমন্ত্রী বেচারাম মান্নাসভায় উপস্থিত সকলেই ‘লালদুর্গে’ ফাটল ধরানোর ডাক দেন। শুভেন্দু বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে সূর্যবাবুদের পার্টিকে সূর্যাস্তে পাঠিয়ে আপনারা ঘাসফুল ফোটাবেন। সিপিএমকে ধুয়েমুছে সাফ করে দিতে হবে।” সমাবেশে উপস্থিত রাজ্য যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী মাওবাদীদের সঙ্গে সিপিএমের তুলনা করে বলেন, “মাওবাদীরা দেশদ্রোহী। ওদের মেরে তাড়াব। সিপিএমও দেশদ্রোহী। ওদেরও মেরে তাড়াব। মিডিয়া দেখার দরকার নেই। সিপিএমকে এলাকায় দেখলেই তাড়া করুন। বিধায়ককে দেখলেই ঘিরে ধরুন। প্রশ্ন করুন। মানুষ সিপিএমকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বার করে দেবে।” তিনি আরও বলেন “পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার ৪৩০০ বুথে সিপিএম যাতে প্রার্থী দিতে না-পারে, কাজ করতে না-পারে, তার জন্য সব রকম চেষ্টা করুন। নির্বাচনে সিপিএমকে পিকনিকে পাঠাব। এ বার আর নির্বাচন করতে দেব না।”
মাত্র চার দিন আগে পাশের মাঠেই সভা করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, দীপক সরকারেরা। দলের কৃষক সংগঠন কৃষকসভার জেলা সম্মেলন উপলক্ষে ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এই দিনের সভা তারই পাল্টা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় অবশ্য বলেন, “কেশিয়াড়ির সভার দিন আগেই ঠিক হয়েছে। কৃষক-খেতমজুরদের নিয়েই সভার আয়োজন করা হয়েছিল।” |
সিপিএমের সঙ্গে এ দিনের সভায় কংগ্রেসকেও আক্রমণ করেন তৃণমূল নেতারা। নাম না-করে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিকে কটাক্ষ করেন কৃষিমন্ত্রী বেচারাম মান্না। তাঁর কথায়, “কেউ কেউ মনে করছেন, বড় টিপ পরলেই হয়তো বড় নেত্রী হওয়া যায়। তা যায় না। বড় নেত্রী হতে গেলে অনশন করতে হয়। পুলিশের মার খেতে হয়। আমাদের নেত্রী (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) অনশন করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “গত ৩৪ বছর সিপিএম জমানায় কৃষকেরা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। এখন যত উন্নয়ন দেখছে, তত ওদের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কৃষকই আমাদের বন্ধু। আমরা কৃষকদের নিয়েই লড়াই করেছি। ৩৪১টি ব্লকে ৬২টি কৃষি মান্ডি করব। আগামী দিনে কৃষি মান্ডিতে বছরের প্রতিটি দিনই ধান কেনা হবে।” পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ দখল করার ডাক দিয়ে তিনি বলেন, “এ ভাবে গ্রামে গ্রামে আমরা কৃষক সভা করব।”
নিজের বক্তব্যে সিঙ্গুর প্রসঙ্গ টেনে এনে মুকুলবাবু বলেন, “আইনের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য আইন। আইনের জটিলতা কেটে গেলে নিশ্চিত ভাবেই অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়া হবে। আজ হোক বা কাল, জমি অনিচ্ছুক কৃষকেরা ফেরত পাবেনই।” তাঁর কথায়, “কখনও ভাবতে পেরেছেন, ভসরাঘাটে সুবর্ণরেখা সেতু হবে? সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সারের দাম রাজ্য সরকার নয়, কেন্দ্রীয় সরকার বৃদ্ধি করেছে। ডিজেলের দাম রাজ্য সরকার নয়, কেন্দ্রীয় সরকার বৃদ্ধি করেছে।” শুভেন্দু বলেন, “সিপিএম অত্যাচারি। আমরা যেন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কথা ভুলে না যাই। নন্দীগ্রামে ওরা মানুষ খুন করেছে। ঘরছাড়া করেছে। সিঙ্গুরে জমি কেড়েছে। যতই ওরা মানুষকে ভুল বোঝাক, নন্দীগ্রামে সিপিএম একশো বছরেও আসতে পারবে না। সিঙ্গুরে দু’শো বছরেও না।”
|