ঔদ্ধত্য কমিয়ে মোহন-কর্তারা অবশেষে নতজানু
ই লিগ থেকে আড়াই বছরের নির্বাসন ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা পর অভূতপূর্ব পরিস্থিতি মোহনবাগানের।
এক দিকে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে ফেডারেশনের কাছে শাস্তি তুলে নেওয়ার আবেদন করলেন কর্তারা। অন্য দিকে ক্লাব-তাঁবুতেই বিক্ষোভের ভয়ে কার্যত কার্ফু ঘোষণা করে দিলেন তাঁরা। ‘উদ্ধত’ শাসকরা যা করে থাকেন, তাই করলেন সবুজ-মেরুন কর্তারা। বর্ষশেষে চারিদিকে যখন উৎসবের মেজাজ তখন গঙ্গাপারের তাঁবুতে জমাট অন্ধকার।
সোমবার বিকেলে ক্লাব তাঁবুতে গিয়ে দেখা গেল গেট প্রায় পুরোপুরি বন্ধ। গেটের সামনে পুলিশ মোতায়েন। কার্ড দেখিয়ে ঢুকতে হচ্ছে সদস্যদের। এমনকী সংবাদমাধ্যমকেও। ভেতরে ক্যান্টিনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে হাতে গোনা কয়েক জন সদস্য ঘোরাফেরা করছেন। মোহনবাগানের সদস্য সংখ্যা আট হাজারের মতো। কিন্তু সমর্থক লাখ লাখ। সেই লাখ লাখ সমর্থকের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাগানের প্রধান গেট। আবেগপ্রবণ নিরুপায় সমর্থকরা কোনও রকম ঝামেলায় না জড়িয়ে নীরব প্রতিবাদেই সামিল হয়েছেন। প্রধান গেটের বাইরে মোমবাতি জ্বালিয়েই কর্তাদের বিরুদ্ধে এ দিন প্রতিবাদ জানালেন তাঁরা। ক্লাব কর্তারা অবশ্য সোমবারও বিক্ষোভের ভয়ে আর ক্লাবমুখো হননি। তাঁদের কিছু সাঙ্গপাঙ্গকে পাহারায় রেখেছিলেন তাঁবুর ভিতর।
বড় শাস্তির মুখে ওডাফা

৯ ডিসেম্বর: রেফারির সঙ্গে ওডাফার তর্কাতর্কি।
সমর্থকদের ওপর কর্তাদের ‘দাদাগিরি’ চললেও ফেডারেশনের সামনে নতজানু হলেন তাঁরা। সোমবার ক্লাব-সচিব অঞ্জন মিত্র শাস্তি তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন ফেডারেশন সভাপতি প্রফুল্ল পটেলের কাছে। অঞ্জনবাবু বললেন, “সে দিনের ঘটনার বর্ননা করেছি। নবির চোটের কথাও বলেছি। আর ফুটবলকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এএফসি’র যে গাইড লাইন রয়েছে তারও উল্লেখ রয়েছে। কারণ, ভারতীয় ফুটবলের প্রসারে সমর্থক সমৃদ্ধ মোহনবাগান ক্লাবের বড় ভূমিকা রয়েছে।” পাশাপাশি ঢাল হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রামে মোহনবাগানের মাঠের লড়াই থেকে শুরু করে ১২৩ বছরের ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ফেডারেশনের কাছে অঞ্জনবাবুর আবেদন, “আমাদের ওপর থেকে নির্বাসন তুলে নেওয়া হোক।” সেই চিঠি পেয়ে গিয়েছে ফেডারেশনও। সচিব কুশল দাসকে দিল্লিতে ফোনে ধরা হলে তিনি বললেন,“মোহনবাগান কার্যত ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। ম্যাচ খেলতে না পারার জন্য দুঃপ্রকাশ করেছে তারা। তবে সেই দিনের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ম্যাচ না খেলতে পারারও উল্লেখ রয়েছে তাতে।”
মোহনবাগানের এই শাস্তি কি আদৌ কমা সম্ভব? এই নিয়ে নানরকম মত শোনা যাচ্ছে। ফেডারেশনের আইনজীবী উষানাথ বন্দোপাধ্যায় বললেন, “ফেডারেশনের কর্মসমিতি ইচ্ছে করলে যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে, কোন পদ্ধতিতে আবেদন লেখা হয়েছে বা মোহনবাগান ক্ষমা চেয়েছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।” পাশাপাশি তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “তবে দেখতে হবে আই লিগ কোর কমিটির শাস্তির সিদ্ধান্ত কর্মসমিতি কতটা কমাতে পারে।” ফেডারশনের সচিব কুশলবাবু অবশ্য পুরো বিষয়টা নিয়ে ধোঁয়াশা রাখছেন। বললেন, “যা হবে তা আইন মেনেই হবে। আমরা আইনজ্ঞদের সঙ্গে পুরো বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব।”

৩১ ডিসেম্বর: মোহনবাগান ক্লাবের সামনে সমর্থকদের শোকপালন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ফেডারেশন সভাপতি প্রফুল্ল পটেল কবে কর্মসমিতির সভা ডাকবেন তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে এটা নিশ্চিত ওকোলি ওডাফার শাস্তি আই লিগ কোর কমিটির বৈঠকেই স্থির হবে। সোমবারই ওডাফাকে শো’কজ করা হয়েছে। সচিব কুশল দাস বললেন, “এক সদস্যের অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের কমিটি পুরো ঘটনার জন্য ওডাফাকে অন্যতম দোষী সাব্যস্ত করেছে। ওডাফার জন্যই মাঠের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়েছিল। সে কারণেই তাঁকে শোকজ করা হয়। ৭ দিনের মধ্যে এর উত্তর দিতে হবে।” আই লিগ কোর কমিটির বৈঠকে ওডাফাকে শাস্তি দেওয়ার বিধান দিয়ে তা পাঠানো হবে শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির কাছে। শোনা যাচ্ছে নাইজেরিয়ান গোল মেশিনকে এক থেকে দু’বছরের জন্য নির্বাসিত করা হতে পারে। ফলে, চার্চিল ব্রাদার্সের দিকে পা বাড়িয়ে থাকা ওডাফার ফুটবল জীবন এখন মোহনবাগানের ভবিষ্যতের মতোই অনিশ্চিত।
ডার্বি ম্যাচে বিরতিতে দল তুলে নেওয়া মোহন কর্তারা এই মুহূর্তে ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা আই লিগের নির্বাসন তোলার বিষয়ে বেশি জোর দেবেন না ওডাফার শাস্তি নিয়ে ভাববেন! তাঁদের অবস্থা অনেকটা সাপের ছুঁচো গেলার মতোই। শ্যাম রাখি না কূল রাখি! এখন মোহনবাগান কর্তারা যে রকম চাপে তাতে ওডাফা বিসর্জন দিয়ে ক্লাবকে বাঁচাতেই তাঁরা বেশি আগ্রহী।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.